আল্লামা আশরাফ আলী
শায়খুল হাদিস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা
মুহতামিম, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা
হজের সফর হলো প্রেমের সফর। আল্লাহর সাথে বান্দার ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার সফর। সেখানে একমাত্র আল্লাহর জন্য সব মুহব্বত থাকে। দুনিয়ার জাঁকজমক, ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ- এসবের কোনো লক্ষ্য থাকে না। সেখানে কত সুন্দরী নারী থাকে, যুবক-যুবতী থাকে, কিন্তু কেউ কারো প্রতি তাকায় না। ভ্রুক্ষেপ করে না। সবাই আল্লাহর দিকেই মনোনিবেশ করে।
হজ সফরের দুটি জায়গার সাথে আমার স্মৃতি সবচেয়ে বেশি। একটি বাইতুল্লাহ। অপরটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজাপাক। প্রথমবার যখন হজে গিয়ে বাইতুল্লাহ শরিফ দেখলাম তখন একদৃষ্টে বাইতুল্লাহর দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। কতক্ষণ যে তাকিয়ে ছিলাম আমি নিজেও জানি না। যদি আমার সাথের খাদেম আমাকে না বলতো তাহলে হয়তো সারাদিন বাইতুল্লাহ দেখেই কাটিয়ে দিতাম। এরপর গেলাম প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মোবারকে। সেখানে গিয়ে তৃপ্তি সহকারে অনেক সময় নিয়ে রাসুলের রওজা জিয়ারত করেছি। রওজা ও মিম্বারের মাঝের জায়গাটি হলো জান্নাতের টুকরা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার ঘর ও মিম্বারের মাঝের জায়গাটি হলো জান্নাতের বাগান। এখানে দুআ কবুল হয়। আমি এখানে নামাজ আদায় করেছি। কুরআন তেলাওয়াত করেছি। দুআ করেছি।
ইতিহাস থেকে বাস্তবে সবক হাসিলের উদ্দেশ্যে অনেক ঐতিহাসিক স্থান দর্শন করেছি। মসজিদে কুবা, হেরা পর্বত, বদর প্রান্তর, উহুদের ময়দানÑ আরো অনেক জায়গায় গিয়েছি। উহুদের ময়দানে যখন গেলাম, তখন আমার মনে পড়লো সেই ১৫০০ বছর পূর্বের উহুদ যুদ্ধের কথা। সাহাবায়ে কেরামকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আমাদের জয়-পরাজয় যাই হোক তোমরা স্থান ত্যাগ করবে না। কিন্তু তারা যুদ্ধ শেষ মনে করে স্থান ত্যাগ করলেন। এরপর কাফেরদের অতর্কিত হামলায় মুসলমানদের অর্জিত বিজয় পরাজয়ে রূপ নিল। পরে যখন মুজদালিফায় গেলাম, সবাই এক কাপড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন। আমার কাছে মনে হয়েছে যেনো আজকেই আমার জীবনের শেষ দিন। মৃত্যুর চিত্র ফুটে উঠেছিলো। উহুদে পাওয়া যায় আদেশ পালনের সবক আর মুজদালিফায় পাওয়া যায় মৃত্যুর সবক।
শ্রুতি লিখন: আমিন ইকবাল ও মোস্তফা ওয়াদুদ। রাহমানী পয়গাম