জাকির মাহদিন
কিছু সত্য কথা। জানি, বলেও কোনো লাভ নেই। কেন বলছি, কাকে বলছি? অর্থ কি এসব বকবকের? ব্লগ-ফেসবুক আর ভালো লাগে না। আচ্ছা, এই যে এ কথাগুলো, কোনো মানে আছে? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর নিজের কাছেই নেই। অথচ ‘জ্ঞান বিতরণে’ আমরা কেউ পিছিয়ে নেই। কিছু অনুভূতি শেয়ার না করে নিজের মধ্যে লালন করা ভালো। এতে চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব শাণিত হয়। সবসময় সবকিছু বলতে বা লিখতে মুখিয়ে থাকা, জনস্রোত-প্রচারস্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়া, বলতে না পারলে অপমানিতবোধ, অস্বস্তিবোধে ছটফট করা চরম দুর্বলতা ও ব্যক্তিত্বহীনতার লক্ষণ। বলা ও না বলা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ সঠিক সময়ে। আমাদের খুব বেশি ‘চিন্তা’ করা শিখতে হবে; বিশেষ করে যারা জ্ঞান ও বুদ্ধিচর্চা করেন। মুখ বন্ধ রাখা শিখতে হবে। প্রকৃত যুদ্ধটা প্রত্যেকের নিজের সঙ্গেই। জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, অনুভব-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-পেশা, ভালোবাসা-প্রেম নিয়ে যথেষ্ট ভাবার সুযোগ থাকতে হবে। যে কোনো ক্ষেত্র থেকে প্রয়োজনের সময় বেরিয়ে আসা বা যুদ্ধের মাঠ থেকে কৌশলগত পশ্চাদপসরণের ক্ষমতা বিকশিত করতে হবে। ফলাফল অগ্রীম নির্ণয় করতে হবে। ফেসবুক-ব্লগ-অনলাইনে কখনো কখনো আমরা এমন মত্ত; নেশার চূড়ান্ত পর্যায়। অথচ একটু কষ্ট করে বিরতি দিলে দারুণ অনুভূতি। প্রকৃত চিন্তাশীল ও জ্ঞানীদের ক্ষেত্রে হাসতে যেমন ভালো লাগে, প্রাণ ভরে কাঁদতে আরো বেশি ভালো লাগে। বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেয়া, সারাদিন হই-হুল্লুড় করে বেড়ানো, আবার একাকী থাকার যোগ্যতা বিকশিত করা এবং প্রায়ই একাকী থাকা- জীবনকে দুটোই রাঙায়। ফুলে-ফলে সাজিয়ে তুলে।
আমি লেখালেখি থেকে হারিয়ে গিয়েছি। কী হয়েছে? প্রতিদিন এই সুন্দর পৃথিবী থেকে কত মানুষই তো হারিয়ে যায়। আমিও একদিন আচমকা হারিয়ে যাব জীবনের তরে। হয়তো হারিয়ে যাব তিতাসের বুকে, পদ্মার স্রোতে, এই সবুজ-শ্যামল বাংলার মাটির কোলে। হারিয়ে যাব নীল আকাশে। অসীম শূন্যতায়! নিশ্চয় হারিয়ে যাব। তাই আমি হারিয়ে যাওয়াকে পছন্দ করি। হারিয়ে যেতে ভালোবাসি।
আমি হারিয়ে যাচ্ছি। জানি না কবে ফিরব, কিভাবে ফিরব। অথবা আদৌ ফিরব, নাকি ফিরব না। তবে কথা দিচ্ছি, বিপ্লবের মাঠে হয়তো আমাকে পাবেন। পালিয়ে যাব না। ওফ্! এই তো আবার একশ্রেণির বন্ধুরা ঝামেলা পাকাবেন। বলবেন ওউ, জঙ্গি-টঙ্গি মনে হচ্ছে? ইদানিং ‘হারিয়ে’ যাওয়া বা ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার মানে কী বোঝেন নিশ্চয়।
‘মানুষের’ ইতিহাসের গতিপথ সরল নয়, বাঁকা। এর পরতে পরতে কিছু বাঁক আছে। সেই বাঁকগুলোও আবার সরল নয়, জটিল বাঁক। আগেরটার সাথে পরেরটার মিল নেই। যদি মিল থাকতই তাহলে ইতিহাস লেখা কবেই শেষ হয়ে যেত। কারণ নতুন কিছু থাকত না।
আগের মতো আর রাজনৈতিক, দার্শনিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে বিপ্লবী লেখালেখি করতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছের সঙ্গে যুদ্ধ করা কঠিন। বিশেষ করে যদি এর পেছনে তেমন যুক্তি না থাকে। আমি হারিয়ে যাচ্ছি। জানি না কবে ফিরব, কিভাবে ফিরব। অথবা আদৌ ফিরব, নাকি ফিরব না। তবে কথা দিচ্ছি, বিপ্লবের মাঠে হয়তো আমাকে পাবেন। পালিয়ে যাব না। ওফ্! এই তো আবার একশ্রেণির বন্ধুরা ঝামেলা পাকাবেন। বলবেন ওউ, জঙ্গি-টঙ্গি মনে হচ্ছে? ইদানিং ‘হারিয়ে’ যাওয়া বা ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার মানে কী বোঝেন নিশ্চয়। হায়! কি বলব, কোথায় বলব, কার কাছে বলব? এই বিপ্লব সেই বিপ্লব না। ক’দিন আগে ‘জঙ্গিবাদের সাম্প্রতিক উত্থান’ নিয়ে সামান্য লিখেও বাদ দিয়েছি। কারণ এসব লেখাটেখা হর-হামেশাই হচ্ছে, নতুন কিছু নেই। আসলে একটু পড়াশুনা ও চিন্তা-ভাবনার জন্য সময় দরকার। যেন ভবিষ্যতে নতুন কিছু লিখতে পারি।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গুণগত পরিবর্তন’ বলে একটা শব্দবন্ধ মাঝে মধ্যে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় যা গভীর অর্থবোধক। এই ‘গুণগত পরিবর্তনের’ তাৎপর্য ও গুরুত্ব আরেকবার নতুন করে উপলব্ধি করলাম। শিক্ষা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন গ্রুপিং (সিন্ডিকেট), লবিং, একধরনের বিশেষ আনুগত্য প্রধান শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতের জন্য কী ক্ষতি হচ্ছে তা আজ আন্দাজ করা কঠিন। ওসব করতে গিয়ে নতুন প্রজন্মের মৌলিক যোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। কারো কিছু বলার সাহস ও সামর্থ্য নেই। জাতীয় রাজনীতি ও সাংবাদিকতাই যেখানে কঙ্কালসার, আঞ্চলিক সমস্যার কথা বলার সুযোগ কোথায়? আমাদের মুখোশের আড়ালের চেহারাটা বড় বেশি ভয়ঙ্কর, বিশ্রি, বিকৃত। মুক্তির কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। আমরা চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্বারা বড় বেশি প্রভাবিত। তাই আমাদের চারপাশটাও যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা জরুরি। ‘মানুষের’ ইতিহাসের গতিপথ সরল নয়, বাঁকা। এর পরতে পরতে কিছু বাঁক আছে। সেই বাঁকগুলোও আবার সরল নয়, জটিল বাঁক। আগেরটার সাথে পরেরটার মিল নেই। যদি মিল থাকতই তাহলে ইতিহাস লেখা কবেই শেষ হয়ে যেত। কারণ নতুন কিছু থাকত না।
শিক্ষা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন গ্রুপিং (সিন্ডিকেট), লবিং, একধরনের বিশেষ আনুগত্য প্রধান শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে ভবিষ্যতের জন্য কী ক্ষতি হচ্ছে তা আজ আন্দাজ করা কঠিন। ওসব করতে গিয়ে নতুন প্রজন্মের মৌলিক যোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। কারো কিছু বলার সাহস ও সামর্থ্য নেই। জাতীয় রাজনীতি ও সাংবাদিকতাই যেখানে কঙ্কালসার, আঞ্চলিক সমস্যার কথা বলার সুযোগ কোথায়? আমাদের মুখোশের আড়ালের চেহারাটা বড় বেশি ভয়ঙ্কর, বিশ্রি, বিকৃত।
সমস্যার অন্য আরেকটা দিক, ক্রমাগত জীবনযাত্রার মান অর্থাৎ খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। এটা সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বস্তরে অপরাধের মাত্রা দ্রুত বাড়াচ্ছে। হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্নীতি, অসৎ সাংবাদিকতা, তোষামুদি ব্যাপকহারে বাড়ছে। এসব রোধ করতে হলে অনেক কিছুই প্রয়োজন। যদিও সবগুলো সম্ভব নয়। সমাজের অসংখ্য শ্রেণির যে কোনো একটি পক্ষ বা শ্রেণি দায়িত্ববোধসম্পন্ন হলে অনেক কিছুই পাল্টে ফেলা সম্ভব। যেমন, সাংবাদিকগণ যদি তাদের গতানুগতিক সাংবাদিকতা, রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে বেরুতে পারেন তাহলেই চলবে। সাংবাদিকরা বর্তমান সমস্যাগ্রস্ত পরিবেশ, সমাজ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ধ্যান-ধারণার ওপর ভিত্তি করেই কাজ করেন। এ জন্য তাদের কাজগুলো সমস্যা দূর না করে বরং বাড়ায়। এমনকি এসব করে নিজেদের আর্থিক প্রয়োজনটাও মোটামুটি সৎভাবে পূরণ করতে পারেন না। ব্ল্যাকমেইল করতে হয়, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে হাত মেলাতে হয়। এমনকি সামান্য বোধ-বুদ্ধি থাকলে বিবেকের কাছেও লজ্জিত থাকতে হয়।
লেখক: সম্পাদক; পাক্ষিক দেশ দর্শন
facebook.com/zakiralmahdin