আহমাদ আবসার হুসাইন মাদানী
সাম্প্রতিক হাজীদের মধ্যে এমন কিছু কাজের প্রচলন ঘটেছে, যা হজ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধক হতে পারে। এর মধ্যে সেলফি ও ছবি তোলা অন্যতম। মূলত ছবি যেভাবেই তোলা হোক তা যদি কোনো প্রয়োজনে না হয়ে থাকে তাহলে তাকে অনর্থক কাজ বলা যায়। অন্যদিকে তা এখলাসের পরিপন্থী। এর মধ্যে রিয়া বা প্রদর্শন ইচ্ছার আভাস পাওয়া যায়। আর রিয়া বা প্রদর্শন ইচ্ছা যেকোনো ধরনের আমলকে বিনষ্ট করে দেয়।
হজের সফর অন্য যেকোনো সফর বা ভ্রমণের মতো নয়। এটি একটি ঈমানি সফর। একটি পবিত্র সফর। দুনিয়াবি সৌন্দর্য থেকে বিরত থেকে সাদা দুইটি কাপড়ে নিজেকে আবৃত করে আল্লাহর ঘরে বান্দার হাজিরা দেয়ার সফর। এ সফরের উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করা। নিজেকে পরিশুদ্ধ করা। একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছে এর সওয়াব ও প্রতিদান প্রত্যাশা করা। সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো ধরনের কাজ বা কথা, যা হজকে বিনষ্ট করতে পারে তা থেকে বিরত থাকা। বিশেষ করে পুরো হজে এখলাস ও ইত্তিবায়ে সুন্নত তথা রাসুলের সুন্নতের অনুসরণ করা। তাহলেই একজন হাজী হজ কবুল হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারেন। হজে মাবরুরের প্রতিদান পেয়ে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে জান্নাতি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন।
সাম্প্রতিক হাজীদের মধ্যে এমন কিছু কাজের প্রচলন ঘটেছে, যা হজ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধক হতে পারে। এর মধ্যে সেলফি ও ছবি তোলা অন্যতম। মূলত ছবি যেভাবেই তোলা হোক তা যদি কোনো প্রয়োজনে না হয়ে থাকে তাহলে তাকে অনর্থক কাজ বলা যায়। অন্যদিকে তা এখলাসের পরিপন্থী। এর মধ্যে রিয়া বা প্রদর্শন ইচ্ছার আভাস পাওয়া যায়। আর রিয়া বা প্রদর্শন ইচ্ছা যেকোনো ধরনের আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। দেখা যায় অনেক হাজী দোয়া না করেও দোয়ার মতো হাত তুলে ছবি উঠাচ্ছেন। নামাজের স্থানে বসে নামাজ পড়ার ভান করছেন। এসব কিছুই অন্যকে দেখানোর জন্য, যা এখলাস পরিপন্থী। অথচ দ্বীনের যেকোনো আমল কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে এখলাস ও আত্মনিষ্ঠা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সুতরাং একান্ত অনুগতভাবে তাঁর ইবাদত করো।’ (সূরা ঝুমার : ২ )। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা কেবল একনিষ্ঠভাবে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা ইবাদতই কবুল করেন।’ (নাসায়ি)।
হজব্রত পালন ও মদিনায় জিয়ারতের বিভিন্ন স্থানে ছবি তুলতে গিয়ে হাজী নিজে ইবাদত-বিমুখ হচ্ছে, এর মাধ্যমে অন্য হাজীদের কষ্ট দেয়া হচ্ছে। অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে। আর এসবই গোনাহ ও পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। হাজীকে এজাতীয় পাপাচার ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে, অতএব এ মাসগুলোতে যে নিজের ওপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশালীন কাজ, পাপাচার ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।’ (সূরা বাকারা : ১৯৭) ।
হজের সফরে ছবি তোলার ব্যাপারে আরবের প্রখ্যাত মুফতি শায়খ ড. সালেহ ফাওজান বলেন, ‘হজের সফরে ইহরামের কাপড় পরে ছবি তোলা অনুচিত। এ ছবি তোলা রিয়া বা প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। কেননা সে ছবি তুলে তো অন্যকে দেখাতেই চায়। যা রিয়া হওয়ার কারণে আমলকে ধ্বংস করে দেয়। অতএব যে কাজ আমলকে ধ্বংস করে দেয় তা থেকে বেঁচে থাকুন।’ অন্যদিকে মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব শায়খ ড. হুজাইফি বিভিন্ন সময়ে হাজীদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন। তিনি দুইদিন খুতবার মাঝে কড়া ভাষায় ছবি তুলতে নিষেধ করেছেন।
তবে সংবাদ, কোনো কাজের প্রমাণ বা স্বীকৃতি হিসেবে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরাম অনুমতি প্রদান করেছেন। এক্ষেত্রে ছবি তোলার অনুমতি প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। কোনো হাজী যেন কষ্ট না পান বা তার ইবাদতে যেন কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তাই আপনি আপনার হজকে রিয়ামুক্ত রাখতে সেলফি ও ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। ছবি তুলতে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে দূরে থাকুন। আপনি হজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। ইবাদতে মনোনিবেশ করুন। নিজের আমলে একনিষ্ঠ ও মনোযোগী হোন। হজ কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে দোয়া করুন।
লেখক: আলেম ও গবেষক
খলিফা, আল্লামা আহমাদ শফী