জেলা প্রতিনিধি, ভোলা : ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে ঠিকাদারদের গ্রাহক থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ এসেছে। গ্রহকেরা প্রতিদিনই এইরকম কোন না কোন অভিযোগ গ্রাহক নিয়ে দারস্ত হচ্ছেন বাংলাবাজার অবস্থিত পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে।
অধিকাংশক্ষেত্রেই গ্রহকগণ তাদের অভিযোগের প্রতিকার পাচ্ছেন না। এতে যেমন গ্রাহকসেবার মান কমে যাচ্ছে তেমনি হয়রানীর স্বীকার হচ্ছেন গ্রাহক। এ নিয়ে সরকার নির্ধারিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ভোলা জেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা বস্তবায়নকল্পে ১.৮ মিলিয়ন, বিডিপি-১ , বিডিপি-২ এবং জাইকা প্রোজেক্টগুলোর মাধ্যমে লাইন নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এরই মধ্যে বিডিপি -১ এবং জাইকার প্রোজেক্টের কাজ শেষ হয়েছে জুন ক্লোজিং এ।
প্রতিনিয়তই গ্রাহকদের থেকে অভিযোগ আসছে লাইন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গাড়ি ভাড়া, পোল স্থাপন, তার করণ ইত্যাদির পৃথক পৃথক কাজের জন্য আলাদা আলদা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অতচ এসমস্ত খরচ কোম্পানী বহন করে থাকে। বিদ্যুতায়নের জন্য গ্রাহককে মাত্র ৭৫০ টাকা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে জমা দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে তিনহাজার থেকে পাঁচহাজার টাকা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোগান্তির মাত্রা যেন আরো দিগুণ। নিয়ম মাফিক পোল স্থাপন না করে, গ্রাহকের যেন অসুবিধা হয় এমনভাবে পোল স্থাপন করে গ্রাহকের থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে। কনট্রাকটরের ফোরম্যান এসে গ্রাহক কে বলছে, ‘পোল যদি আরো এগিয়ে এনে না স্থাপন করা হয় তাহলে আপনি বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না’। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলেই কেবল পোল ঠিকভাবে সরিয়ে স্থাপন করে দিচ্ছে। কারো কারো টিনের ঘরের উপর দিয়েও তারকরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এইসব বিষয় নিয়ে গ্রাহকগণ যেমন ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন, তেমনি গুনতে হচ্ছে টাকা।
ভোলায় কয়েকটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লাইন নির্মাণের কাজ করছে। এরমধ্যে বিক্রমপুর ট্রেডার্স, আবুল কাশেম এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ। এইসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করে ছোট-বড় কনট্রাক্টরেরা। একজন দেবব্রত বাবু। অভিযোগ এসেছে গ্রাহকদের থেকে টাকা না নিয়ে তিনি কোন লাইন নির্মাণ করেন না। যারা আগে টাকা দিচ্ছে তাদের লাইনের কাজ দ্রুত করেন। আর যারা টাকা দিতে অস্বীকার করে তাদের লাইন দেরীতে হবে বলে গ্রাহকদের ভয় দেখায়। বিভিন্ন তালবাহানায় পিছিয়ে দেয় লাইন নির্মাণের কাজ। এমন কি আর ই বি নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলে আরো অতিরিক্ত সময় নিয়ে কাজ করছেন এই কন্ট্রাক্টর।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এইসকল অপকর্মের প্রমাণ জোগাড় করা। অভিযোগ আসলেও গ্রাহকদের অসচেতনতায় প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না, নেওয়া যাচ্ছে না কনট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা। কোন অভিযোগ আসলে কনট্রাক্টরগণ সমজতা করে নিচ্ছেন। পরবর্তীতে গ্রাহক ঐ বিষয়ে কোন ধরণের কথা বলতে অস্বীকার করেন।
এইসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার জানান- ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কনট্রাকটরদের বিরুদ্ধে এইসকল অভিযোগ নিয়মিতই আসে। তারা চেষ্টা করেন সমস্যার সমাধানের। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন না। ভোলাপবিসে ভোলা জেলার বাহিরের কোন ঠিকাদারদের কাজ করতে দেওয়া হয় না বিধায়, এই মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তারা যদি কাজের গতি কমে দেয় তাহলে ভোলার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিতে পারবেন না। তাছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক প্রভাবশালী। কোন প্রদক্ষেপ নিলে উপরমহল থেকে চাপ আসে।
সাধারণ গ্রাহকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘বিদ্যুতের লোকজন টাকা ছাড়া কোন কথা বলেন না। আমরা চাই, আমাদের এইকষ্টের সমাধান। কাজকাম বাদ দিয়ে আমাদের দিনের পর দিন বাংলাবাজার অফিসে এসে ঘুরতে হচ্ছে’।
কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আহবান, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি গ্রাহকসেবার মানও যেন বজায় থাকে সেইদিকে যেন দৃষ্টি দেওয়া হয়।