মাওলানা এহসানুল হক; আওয়ার ইসলাম
অনেক দেরিতে হলেও হেফজত মহানগরের জন্য নতুন কমিটি দিয়েছে। অনলাইন-অফলাইনে কমিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চললেও আমি মনে করি এটা নিয়ে উৎসাহ-উদ্দিপনা বা আনন্দ বেদনার কিছুই নেই। কারণ কমিটির যখন চাহিদা ছিল, প্রয়োজন ছিল তখন কমিটি দেয়া হয়নি।
হেফজাত মহানগর কমিটি গঠনের প্রয়োজন ২০১৩ তে। রাজনীতিবিদ আলেম ও অরাজনৈতিক আলেমদের সমন্বয়ে তখন যদি একটি শক্তিশালি কমিটি করা হতো, তাহলে হয়তো ৫ই মে সৃষ্টি হতো না। বা ৫ই মের পরে হেফাজত এভাবে হারিয়ে যেত না। জমিয়ত মহানগর আর হেফাজত মহানগর প্রতিশব্দ হতো না। মহানগরের নামে বাড়িধারা আর লালবাগে আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম হতো না।
হেফাজতের এখন আগের মত সেই আবেদন নেই। তারপরও এখন হটাৎ কেন কমিটি দিলো? এর উত্তর সহজ। একছাদের নিচে থাকা জমিয়তের দুই গ্রুপ। লালবাগ আর কামরাঙ্গিচড়। এই চার গ্রুপের নেতৃবৃন্দ মূলত হাটহাজারি গিয়েছিলেন হেফজত মহানগরকে উত্তর-দক্ষিণের নামে বাড়িধারা ও লালবাগে বিভক্ত করতে। কিন্তু হাটহাজারির নেতৃবৃন্দ মহানগরকে ভাগ করা পছন্দ করেননি। তারা এই চারটি ধারায় বিভক্ত নেতাদের মাঝে মহানগরের পদ বন্টন করে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন।কিন্তু রয়ে গেছে অনেক ত্রুটি।
প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে মুফতি ওয়াক্কাসকে। আলেমদের মধ্যে যে কয়জন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ আছেন তাদের মধ্যে মুফতি ওয়াক্কাস অন্যতম।তাকে এই অলংকারিক পদ না দিয়ে কেন্দীয় কোন পদ দিলেই পারতেন।
সভাপতি হিসেবে আল্লামা নূর হোসাইন কাছেমি সাহেবের বিকল্প নেই। সভাপতি হিসেবে তিনিই প্রত্যাশিত ছিলেন।
কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাওলানা আবুল হাসানাত শুধু অপ্রত্যাশিতই নয় কল্পনাতীত ছিল। বিজ্ঞ মহলের প্রতিক্রিয়া, মাওলানা আবুল হাসানাতকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটির মানই কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
আমার মনে হয় এর চেয়ে উত্তম বিকল্প ছিল না। এই পদের জন্য কে উপযুক্ত সেই বিবেচনা এখানে হয়নি। মূলত লালবাগ বাড়িধারা বিভক্তি ঠেকাতে বাড়িধারা জন্য সভাপতি পদ আর লালবাগওয়ালাদের জন্য সেক্রেটারি পদ বরাদ্ধ ছিল। আর লালবাগে গুরুত্বপূণ ব্যক্তি তিনজন। মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি, মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাওলানা আবুল হাসানাত। নেজামি সাহেব সিনিয়র। ফয়জুল্লাহ সাহেবের কথা নাইবা বলি। বাকি থাকে মাওলানা আবুল হাসানাত। লালবাগ থেকে যখন দিতেই হবে তখন এটাই ছিল উত্তম পছন্দ।
হেফাজত যেই জাগরণ সৃষ্টি করতে সামর্থ হয়েছিল তার মূল কারণ ছিল মহানবী সা. এর অবমাননার মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।আরেকটি কারণ ছিল অরাজনৈতিক শীর্ষস্থানীয় আলেমদের নেতৃত্ব। কেন্দ্রে অরাজনৈতিক আলেমদের প্রধান্য থাকলেও ঢাকা মহানগরে অরাজনৈতিক আলেম নেই বললেই চলে। এটা নতুন কমিটির সবচেয়ে বড় শূন্যতা।
শুধু তাই নয়, কমিটি সেই জমিয়ত আর লালবাগ কেন্দ্রীক । যে কয়টি দলের লোকজন সেই মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন তারাই গুরুত্বপূণ পদ পেয়েছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাত্র একজন আছেন কমিটিতে।খেলাফত মজলিস থেকে একজন আছেন নামকাওয়াস্তে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। যদিও কিছুদিন আগ পর্যন্ত লালবাগকে বাদ দিয়ে বাড়িধারায় হেফাজতের যেসব প্রোগ্রাম হতো সেখানে গুরুত্বপূণ মেহমান থাকতেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের। বিভিন্ন প্রোগ্রামে অন্যদলের লোকজনও জমিয়তের সাথে আছেন এটা বুঝানোর জন্য আহমদ আব্দুল কাদের প্রায়ই নূর হোসাইন কাসেমি সাহেবকের পাশের চেয়ারে পেতেন। কিন্তু নতুন কমিটিতে আর তাকে প্রয়োজন মনে করা হয়নি।শুধু তাকেই নয় তার দলের কাউকেই নেয়া হয়নি।
দেশের আরেকটি বৃহৎ ইসলামি দল চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন থেকে কাউকেই রাখা হয়নি।যদিও তারা হেফাজতের সাথে শুরু থেকেই নেই। কিন্তু এতদিন কমিটি ছিল না, সেটা এক রকম ছিল।বিছিন্নতাটা চোখে পরার মত ছিল না। সবাইকে নিয়ে যখন কমিটি গঠন করা হলো, তখন এটিএম হেমায়াতের মত তাদের দুইজন রাখতে পারলে কমিটি যে সার্বজনীন হতো এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হেফাজতের আন্দোলনের কারণে যে কয়জন আলেম দীঘ সময় কারা বরণ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন মাওলানা মামুনুল হক। তরুন প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এই ব্যক্তিকে কমিটিতে বিবেচনা করা হয়নি।
খুজঁতে চাইলে আরও অনেক গ্যাপ রয়ে গেছে এই কমিটিতে। এক কথায় বলতে গেলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঢাকাস্থ ইসলামি দল সমহের নেতৃবৃন্দের চাপে পরে বিভক্তি ঠেকাতে একটা কমিটি দিয়েছেন। তারা নিরোপেক্ষভাবে বিচক্ষনতার সাথে স্বাধীনভাবে কমিটি করেননি বা করতে পারেননি।
দেশীয় রাজনীতি ও ইসলামি রাজনীতির এই কঠিন সময়ে হেফাজত মহানগরেরর এই নতুন কমিটি গোটা দেশের তাউহিদি জনতাকে কি উপহার দিতে পারে, লালবাগ বাড়িধারা কেন্দ্রীক বিভক্তি কতটুকু দূর হয় সেটা সময়ই বলে দিবে।
আরো পড়ুন : হেফাজত ঢাকা’র কমিটি নিয়ে তোলপাড় ফেসবুক
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর নতুন কমিটি
আরআর