মোস্তফা ওয়াদুদ: আওয়ার ইসলাম
তিন রাস্তার মোড়ে একটি চিৎকার শুনে এগিয়ে এলো মুহসিন। লাল পাজারোটা হন হন করে চলে গেলো। রাস্তায় তাজা একটি দেহ ছটফট করছে। দেখার নেই কেউ। মুহসিন এক বাসার দারোয়ান। ওর কানে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে এলো। ছুটে গিয়ে উদ্ধার করলো লোকটিকে। জ্ঞান নেই। হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো। পুলিশের কাছে পৌঁছে গেছে এক্সিডেন্টের খবর । তারা ছুটে এলো। পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলো।
মুহসিন বাইরে পায়চারী করছে। একটু পর ওর ডিউটি শুরু হবে। আজ আকাশের অবস্থা বেশি ভালো না। একটু পরপর পৃথিবী কাঁপিয়ে বিজলী চমকাচ্ছে। বিকট আওয়াজে ধরনী ভরিয়ে তুলছে। মুহসিনের মাথার উপর ভেঙে পড়ছে ছোট ছোট শিলাখণ্ড। মুহসিন অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। মনে মনে ভাবছে, কোনো বিপদ আসছে না তো? একটু পর নিজে থেকেই আবার বলে, না বিপদ কেন হবে? বৃষ্টি-বাদলের দিন। এমন তো হবেই। এটা স্বাভাবিক ।
থেকে থেকে বৃষ্টি । কখনো টানা বর্ষণ। বাদল নামছে আকাশ ভেঙে। মুহসিন ডিউটিতে জয়েনের অপেক্ষা করছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে বেশি দেরি নেই। বাড়ির মালিক কিসমাত আলী। তিনি নামাজে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছেন। গেটে আসতে মুহসিন জোরে সালাম দিলো কিসমাত আলীকে। তিনি সালামের জবাব দিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন।
নামাজ শেষে বাসায় ফিরে যা দেখলেন তার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। কয়েকজন পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় মুহসিনকে। কিসমাত আলী জানতে পেরে থানায় ফোন দিলেন। থানা থেকে বলা হলো, আপনার দারোয়ান একজনকে খুন করেছে। কথাটি শুনে কিসমাত আলীর মাথায় যেনো আসমান ভেঙে পড়লো। বলে কি? মুহসিন খুন করবে? না! তা কখনো হতে পারেনা! এটা কোনো ষড়যন্ত্র হবে! মুহসিন পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে। বিশ্বস্ত হিসেবে ওর একটা সুনাম হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সবাই মুহসিনকে অনেক বিশ্বাস করে। মুহসিন কখনো কারো ক্ষতি করেনা । সর্বদা সুন্নতি লেবাস পড়ে।মুখে জান্নাতি দাড়ি। মাথায় বার্মিজ টুপি। মুহসিনের ব্যবহারে এ বাড়ীর মালিক-ভাড়াটিয়া সবাই খুশি।
সেদিন এক্সিডেন্ট হওয়া ছেলেটি মারা গেছে। হাসপাতালের মর্গে বডি চেক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তও হয়েছে। মুহূর্তে সারাদেশে খবর ছড়িয়ে যায়। দেশে তোলপাড় শুরু হয়। অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকে। দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো হাসপাতালে ভিড় জমাতে থাকে। লাইভ সম্প্রচার শুরু করে। মানুষ আতঙ্কে ঘাবড়ে যায়।
ভিক্টিম এক মন্ত্রীর ছেলে। ব্যক্তিগত কোনো কারণে শত্রুতা ছিলো অন্য এক মন্ত্রীর ছেলের। সেই জের ধরে সেদিন ওকে ছুরি মেরে রাস্তায় ফেলে যায়। তারপরই নিহত হয় সে। তার নাম রিদমান হাসান। এলোপাতারি আঘাতের ফলে অল্পতেই মারা যায় সে।
সারাদেশ যখন রিদমানের মৃত্যুতে তোলপাড়। তখন হাসপাতালে মন্ত্রী এসে হাজির। একমাত্র ছেলের বিয়োগে তিনি কাতর। হাউমাউ করে কাঁদছেন। হাসপাতালের ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎ বেজে উঠলো ডাক্তারের ফোন। অপর মন্ত্রীপুত্র ফোন দিয়েছেন। যিনি খুন করেছিলেন। ডাক্তারকে ঠাণ্ডা মাথায় শুনতে বললেন তার কথাগুলো। মন্ত্রীপুত্র বললো, "২০ লাখ টাকা দেব তোমাকে। যেভাবেই হোক ট্রাজেডির মোড় ঘুরিয়ে দেবে।" ঠিক আছে বলে ফোন কেটে দিলো ডাক্তার।
লাশের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানালেন, ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর শত্রুতার স্বীকার তিনি। মৃত্যুর আগে সর্বশেষ যার হাতের ছাপ তার গায়ে সেই এর হত্যাকারী। তাকে খুঁজে বের করুন। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে দারোয়ান মুহসিনের হাতের ছাপ মিলে যায়। কারণ সেই সর্বশেষ রিদমানকে স্পর্শ করেছিলো।
সংবাদ এলো পুলিশের কাছে। পুলিশ মুহসিনকে ধরে প্রিজমে তোলে। প্রিজমের অন্ধকার মুহসিনের দিকে তাকিয়ে থাকে দয়াপরবশ হয়ে। আর মুহসিন তাকিয়ে থাকে দেশের ক্রমশ গাঢ় হতে থাকা অন্ধকারের দিকে...
এসএস