মহিউদ্দীন ফারুকী; আওয়ার ইসলাম
আগামী দু এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হচ্ছে হাজিদের হজ যাত্রা। তাই যারা হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন তাদের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে এখন থেকেই। হজ যেহেতু একটি ঈমানী সফর, একটি নূরানী সফর, তাই এর প্রস্তুতির ধরণও ভিন্ন। শাররীক প্রস্তুতির সাথে নিতে হবে আত্মিক ও জ্ঞানের প্রস্তুতি। আপনার হজ যেন সঠিক ও সুন্দর হয়, সহীহ ও বিশুদ্ধ হয় সে দিকে নজর দিতে হবে এখন থেকেই। কিভাবে আপনি প্রস্তুতি গ্রহন করবেন সে বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করা হলো।
এক. নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন। সমস্ত আমলই নিয়তের উপর নির্ভর করে। তাই যেকোন আমলের জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত একান্ত প্রয়োজন। তবে হজের ক্ষেত্রে সে বিষয়টি আরো গুরুত্ব বহন করে। সে জন্য রাসূল (স.) হজের সময় বার বার বলতেন “আল্লাহুম্মা হাজিহি হাজ্জাতান লা রিয়াআন ওয়ালা সুমআহ” হে আল্লাহ এই হজ কে এমন হজ হিসেবে কবুল কর যেখানে প্রদর্শন ও খ্যাতির ইচ্ছা নেই। তাই এখন থেকেই আপনি আপনার নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন। লোক দেখানো বা শোনানোর ইচ্ছে থাকলে, প্রদর্শন বা খ্যাতির নিয়ত থাকলে তা মন থেকে এখনই ঝেড়ে ফেলুন। হজ সহ সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য করুন। এছাড়া আল্লাহ তায়ালা কারো ইবাদত কবুল করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কাজেই আল্লাহর ইবাদত করুন তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।’ (সূরা যুমার : ২)। হাদিছে কুদছিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আমলের ক্ষেত্রে আমার সাথে অন্যকে অংশীদার সাব্যস্ত করে। আমি তাকে এবং তার অংশীদারকে ত্যাগ করি।’
দুই. প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করুন। হজের হুকুম আহকাম, হজের প্রকার এবং সংলিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করুন। আপনার হজ যেন কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী হয় সে লক্ষ্যে বিজ্ঞ আলেম ওলামার কাছে প্রশ্ন করে বিষয়গুলো ভাল করে আত্মস্থ করুন। কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী আপনার হজ না হলে সে হজ কবুল হওয়ার প্রত্যাশাও করা যায়না। আমাদের দেশ থেকে এমন অনেক ব্যক্তি হজে আসেন যিনি কোন হজ করতে এসেছেন তা বলতে পারেননা। কোথায় কি করতে হবে তিনি জানেননা। মুআল্লিম নির্ভর হাজির সংখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় অনেক। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে আপনি মুআল্লিম নির্ভর হয়ে আসছেন ঠিক, কিন্তু সময় ও প্রয়োজনীয় স্থানে আপনি মুআল্লিমকে নাও পেতে পারেন। অথবা লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে তাকে হারিয়ে ফেলতে পারেন। আর জেনে রাখা ভাল যে হজ হচ্ছে সময় ও স্থান নির্ভর একটি ইবাদত। সময় চলে গেলে অথবা সঠিক স্থানে না পৌঁছালে আপনার হজ হবেনা। তাই আপনি বই পড়ে ও আলেমদের নিকট থেকে এখনই এবিষয়ে সকল মাসআলা ও হুকুম আহকাম জেনে নিন।
তিন. নিদৃষ্ট দোআ ও জিকির মুখস্থ করুন। হজের চার ভাগের তিন ভাগই নিদৃষ্ট দোআ। তাওয়াফে, সায়ীতে, আরাফায়। তাই কখন কোন দোআ কিভাবে পড়তে হবে তা আপনি এখনই জেনে নিন। সময় নিয়ে তা মুখস্থ করুন। এমন যেন না হয় যে হজ করিয়ে দেয়ার সাথে সাথে দোআও আরেকজনকে পড়িয়ে দিতে হয়। এটি দ্বীনের ক্ষেত্রে অসচেতনতা ও অবহেলা ছাড়া কিছু নয়। আর এধরনের অবহেলা করে আপনি কিভাবে হজ কবুল হওয়ার প্রত্যাশা করেন?
চার. ঋণ পরিশোধ ও অসিয়ত লিখুন। হজে সফরে বের হওয়ার পূর্বে আপনার কোন ঋণ থেকে থাকলে তা পরিশোধ করতে চেষ্টা করুন। কারো কোন অধিকার থাকলে তার পূরণ করুন। আল্লাহর অধিকার হলে তার নিরবে পরিশোধ করুন। মানুষের হলেও তা পরিশোধ করুন, অন্যথায় তাদের নিকট অনুমতি নিয়ে আসুন। হজের সফর যেহেতু দীর্ঘ তাই ওলামায়ে কেরাম অসিয়ত লিখে যেতেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অতএব আপনি পরিবারের সদস্যদের নিকট প্রয়োজনীয় অসিয়ত লিখে রাখুন। এক্ষেত্রে পরিবারের সকলকে ঈমান, ইখলাস ও তাকওয়ার অসিয়ত করুন। দ্বীনের সাথে লেগে থাকার নির্দেশ দিয়ে আসুন।
পাঁচ. ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হজের সফরে যেহেতু থাকতে হবে দীর্ঘদিন, তাই আপনার নিজস্ব ডাক্তারের নিকট থেকে কিছু পরামর্শ নিন। কিভাবে চললে, কি খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে সে বিষয়ে ধারণা নিন। অখাদ্য ও ক্ষতিকর কোন খাবার গ্রহন থেকে এখনই বিরত থাকুন। মন্দ অভ্যাস থেকে থাকলে তা এখনই পরিহার করুন। নিদৃষ্ট কোন সমস্যার ঔষধ ছাড়াও হরহামেশা লাগতে পারে এমন কিছু ঔষধ সাথে নিয়ে নিন।
ছয়. আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। হজের সফর শুরু করা থেকে শেষ পর্যন্ত যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে হজ সম্পাদন করতে পারেন সেজন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও দোআ করুন। তিনিই একমাত্র সাহায্যকারী। সব কিছু তিনিই সহজ করে দিতে পারেন। সাথে সাথে হজ কবুল ও শিরক মুক্ত হওয়ার দোআও করতে থাকুন। আপনার হজ যেন হজ্বে মাবরুর হয় সেই প্রার্থনা করুন।
সাত. প্রতিজ্ঞা করুন। হজ মানুষকে পুত পবিত্র করে দেয়। গোনহ মুক্ত এক নতুন জীবন দান করে। পাপাচার, মন্দ কাজ মুক্ত হজ মানুষকে নব্য ভুমিষ্ট সন্তানের মত গোনাহ মুক্ত করে দেয়। তার আমলনামা হয়ে যায় কালিমা মুক্ত। তাই সকল মন্দাভ্যাস ও মন্দ কাজ ছেড়ে দিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় এখন থেকেই সাজাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। ভবিষ্যৎ যেন হয় আলোঝলমলে সুন্দর সে দোআ করতে থাকুন।
লেখক: এমফিল গবেষক,আরবী ভাষা ও সাহিত্য, মদিনা ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়
আরআর