রোকন রাইয়ান; আওয়ার ইসলাম
সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। হাঁটুপানি কোমরপানি ভেদ করে কোথায় গলাপানিও উঠে গেছে। ভেসে গেছে হাজারও মানুষের ঘরবাড়ি। তারা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এই মুহূর্তে মানুষের একটু সাহায্য চক্ষু শীতল করে দেয়।
কিন্তু এমন দুর্যেোগ উপেক্ষা করে কে বা ছুটে আসে মানুষের কাছে। বিষয়টা সাধারণত না ঘটলেও একেবারে দুষ্প্রাপ্য নয়। হ্যাঁ এমনই এক ছবি বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুকে ঘুরে ফিরছে সবার ওয়ালে। নিউজফিড ছেয়ে আছে তার অনন্য মানবতার চিহ্ন একে দেয়া ছবিটি।তিনি কোমর পানি ভেঙে যাচ্ছেন মানুষের বাড়ি বাড়ি। খোঁজ নিচ্ছেন আর প্রয়োজনীয় বস্তু দিয়ে আসছেন।
খলিফা হজরত উমরের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠা এই লোকটির নাম মুফতি শামসুল ইসলাম। তিনি একজন আলেম। আবার শুধু আলেম নন- একজন জনপ্রতিনিধিও। সুনামগঞ্জের কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান। এও এক বিস্ময়। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন দরদি মানুষ আজকাল দুষ্প্রাপ্যই হয়ে গেছে। নির্বাচন শেষে জনপ্রতিনিধিদের হাওয়া হয়ে যাওয়াই এইদেশে স্বীকৃত। টিন গম আর কালভার্টের টাকা খেয়ে শহরে বাড়ি নির্মাণ। তারপর সেই ঘরে আজীবন সুখী বসবাস। এই তো জনপ্রতিনিধিদের উদাহরণ।
যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে উপরে। কোমর পানিতে পাঞ্চাবি উঠিয়ে হেঁটে চলছেন। ক’মুহূর্ত দেখলে মনে হবে উনিও একজন বানভাসী। তাকেও একটু সাহায্য করা দরকার। কিন্তু না আদতে বিষয়টি এমন নয়। তার চোখে মুখে রাজ্যের চিন্তা। তার জনগণ ভেসে যাচ্ছে পানিতে। চুলায় আগুন জ্বলেনি। রান্নারও সামগ্রী নেই। অনাহারে দিন পার হচ্ছে। তাদের খোঁজে বের করতে হবে। মুখে খাবার তুলে দিতে হবে।
এমন একজন প্রতিনিধি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ বছর। কাঠইরবাসীর সে অপেক্ষা নিশ্চয়ই ঘুচেছে। তারা নির্বাচিত করেছেন একজন এমন মানুষকে। যিনি গলাপানি ভেদ করেও তাদের খোঁজ নিতে ভুলবেন না। ফেসবুকে তারই প্রতিবেশী আরিফ রব্বানী লিখেছেন, উনি আমার নিজ ইউনিয়ন ‘কাঠইর’ বাসীর নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুফতি শামসুল ইসলাম। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায় করে আসছেন তিনি।
আরিফ রব্বানী লিখেন, আজ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত জগজীবনপুর ও কলাইয়া গ্রামে এশা পর্যন্ত জনগণের দ্বারে দ্বারে পানি ভেঙ্গে এভাবেই তিনি গিয়েছেন। আমার জানা মতে অতীতে কোনো জনপ্রতিনিধি এরকম রেকর্ড গড়তে সক্ষম হননি।
চলতি বছর অনুষ্টিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে নির্বাচন করেন। বিজয়ী হন বিপুল ভোট। খেজুর গাছ প্রতীতে তিনি পেয়েছিলেন ১৮৮৪ ভোট । তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ফারুক মিয়া লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৩৩০ ভোট।
রাত জেগে জনতার ঘর পাহাড়া দিয়ে বেড়ানো সেই ওমরের ইতিহাস আমরা পড়েছে। পৃথিবীতে সেই খেলাফত ব্যবস্থা এখন নেই। এমন জনপ্রতিনিধি তাই আমাদের সমাজে মেলে না। তবে তার আদর্শ যারা লালন করছেন, তাদের কাছে এমনটা মানুষ আশা করা বোকামি নয়। সেই আদর্শ বুকে লালন করা মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। কিন্তু এমন প্রতিচ্ছবি অসংখ্য নেই।
এই ছবি সেই আদর্শবান মানুষদের জানিয়ে যাচ্ছে, সবাইকে এমন হতে হবে। সমাজ আর মানুষের দুর্যোগ দুর্ভোগে এগিয়ে আসতে হবে। হতে পারে সেটা এরচেয়েও চরম দুর্যোগে। আমরা সেই মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই অগণন।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম
এআর