হামলাকারীদের যেসব আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে, তার সবই ছিল মেসবাড়ি। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর সারাদেশেই মেস ভাড়ায় আগের চেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এক তথ্য মতে জেনেছি, রাজধানীতে বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থীর বসবাস। এদের মধ্যে অধিকাংশই বাস করে মেসে। তাছাড়া কাজের তাগিদে ঢাকায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ মেসে থাকেন। বিপুল সংখ্যক এই ব্যাচেলরদের বাসস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিড়ম্বনা। কি করণীয় এই পরিস্থিতিতে?
এখানে আমার সোজাসাপ্টা দুটো কথা বলার আছে, আতঙ্কে কোনো বাড়িওয়ালা ফ্যামেলি ভাড়াটিয়ার অভাবে বাড়ি খালি করে রাখা নিশ্চয়ই উচিত নয়, কারণ অনেকের সংসার চলে ভাড়া তুলে। অপরদিকে, ব্যাচেলর ভাড়াটিয়ারাও বাড়ির অভাবে মালপত্র নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় বাড়ি সন্ধান করা অমানবিক।
এখানে কেবল লেনদেনের বিষয় নয়, সূক্ষ্মভাবে মানবতার প্রশ্নও জড়িত। কারণ শহরের বাহিরে প্রত্যেকের বাড়িঘর রয়েছে, শহরে ছুটে আসে কেবল প্রয়োজনের তাগিদে।
তাছাড়া অনেক বাড়িওয়ালা তার বাড়িটি ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়া দেন দুটো কারণে; যদি বাড়িটি পুরাতন হয় কিংবা বেশি ভাড়ার প্রয়োজনে। ফলে এই বাড়িওয়ালারাও এখন ভীষণ বেকায়দায় পড়বেন। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে সচেতন বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া হিসেবে দুই পক্ষই নিজেদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় এগিয়ে আসা উচিত। সাম্প্রতিক জঙ্গি সংকট সকলের জানা; তাই নিজেদের পরিচয় ও আচরণ পরিচ্ছন্ন থাকুক একে অপরের কাছে। তারপর কোনো ভাড়াটিয়াকে বিচার বিবেচনা করে যদি সন্দেহ জাগে তাহলে তাকে না করে দিতে পারেন। কিন্তু ঢালাওভাবে কাউকে সন্দেহ কিংবা ঝামেলা ভেবে না করে দেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে সময়ে সময়ে ভাড়াটিয়ার বাসায় গিয়ে ঘুরে আসা যেতে পারে; বাসার পরিবেশ দেখেও কিছু বিষয় বোঝা যায়। আর সেই শর্ত ভাড়া দেওয়ার পূর্বেই বলে রাখা দরকার; তাতে যার আপত্তি থাকবে না সে ভাড়া নিবে, যার থাকবে সে অন্যত্র পথ খুঁজবে। মোটা দাগে বলতে গেলে, দুই পক্ষ নিজেদের স্বার্থেই স্পষ্ট থাকবে।
অপরদিকে, কাউকে অহেতুক হয়রানি না করে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে কেবলই কোনো ব্যাচেলর বাসা অনুসন্ধান করুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; তা না হলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা দুই পক্ষেরই বিব্রত হতে হয়। আশেপাশের বাসিন্দারা পরবর্তীতে নিশ্চয়ই তাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে।
আরেকটি বিষয় শোনা যাচ্ছে, এলাকার বিভিন্নজনের কাছ থেকে নাকি বাসা পাবার ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদেশে পদে পদে ভোগান্তি বলে একটি কথা প্রচলিত আছে, সেই দিক বিবেচনা করে এই ব্যাপারটি কতোটুকু যুক্তিযুক্ত হলো তা নিয়েও প্রশ্ন থাকে।
সেখানে যদি দুর্নীতির মতো কোনো ব্যাপার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে তাহলে তো নতুন করে রোগ সৃষ্টি হয়ে গেল। আর সেই আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সর্বোপরি এই সংকট ও বিড়ম্বনা দূর করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী