মোস্তফা ওয়াদুদ; গাজীপুর থেকে: আজ মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বাদ জোহর গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে ভাংগাহাটি দারুল উলুম আব্দুস সাত্তার কওমী মাদরাসার আনুষ্ঠানিক দরস উদ্বোধন করলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদীন, দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দেস আল্লামা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী।
এইচ এম আবূ সালেহ এর পরিচালনায় ও মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমীর সঞ্চালনায় মাদরাসার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে কুরআন কারীম তেলাওয়াত করেন বিশ্বের ৭২ দেশে আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকারী হাফেজ নাজমুস সাকিব ও সদ্য সমাপ্ত জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী হাফেজ নাহিয়ান হাসান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, শায়খুল হাদীস উবায়দুল্লাহ ফারুক, হাফেজ নাজমুল হাসান, মুফতি মকবুল হোসাইন, মুফতি ইকবাল হোসাইন, মুফতি আমজাদ হোসাইন, আবুল হাসান মোহাম্মদ আলাউদ্দীন, মুফতি মাহমুদুল হাসান, মুফতি জাকির হোসাইন, মুফতি ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা সানাউল্লাহ, স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব রহমত আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, প্রসাসনিক কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা আরশাদ মাদানী বলেন, মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর ও মাদরাসা হচ্ছে নবীর ঘর। মানুষ মরে যাওয়ার পর তার সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও সদকায়ে জারিয়ার আমল বাকি থাকে। আর এ জাতীয় দ্বীনী মারকাজগুলো হচ্ছে সদকায়ে জারিয়াহ। নবী করিম সা. ইরশাদ ফরমান, তিন জিনিস মানুষের মৃত্যুর পরও সাওয়াব পৌঁছাতে থাকে। তন্মধ্যে একটি হলো মসজিদ-মাদরাসা। মসজিদে নামাজ হবে। দ্বীনি আলোচনা হবে। এর যত সাওয়াব হবে তার একটি অংশ যিনি এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তার কবরে পৌঁছাতে থাকবে। এমনিভাবে মাদরাসায় যত লোক পড়বে, পড়াবে সব কিছুর সাওয়াব তিনি পাবেন। আর এ দুনিয়ার ধন-দৌলত, নাজ-নেয়ামাত সবকিছুর মালিক আল্লাহ তায়ালা। মানুষ তার প্রতিনিধি মাত্র। তার দেয়া নেয়ামাত তার পথে খরচ করা হলো সর্বউত্তম কাজ।
পাঁচ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত দারুল উলুম আব্দুস সাত্তার কওমী মাদরাসা। আর মোঘল আমলের স্টাইলে তৈরি মসজিদটির কারুকর্য যে কারো দৃষ্টি কাড়বে। মসজিদটির মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। সামনে রয়েছে দুটি দৃষ্টিনন্দন বিশাল মিনার। মসজিদের ভেতরে মার্বেল পাথরে খচিত সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত লেখা রয়েছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে ওজু ও প্রাকৃতিক হাজত সারার টাইলসে মোড়ানো মনোরম জায়গা। আলাদা বাথরুম ও পেশাবখানা।
প্রথমবারের মতো গাজীপুর জেলায় এরকম কোনো মসজিদ স্থাপন করা হলো। মসজিদটি নির্মাণে কত সময় লেগেছে? জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল হাসান বলেন, প্রায় দুইশ শ্রমিকের হাতে মোট দুই বছর সময় লেগেছে।
ঢাকার পাশে গাজীপুরের অদূরে অজপাড়াগাঁয়ে এতো নজরকাড়া ব্যয়বহুল মসজিদ কেনো নির্মাণ করা হালো- এ ব্যাপারে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা হাজী আব্দুস সাত্তার জানান, মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে কতকিছুই তো করেন। আমি নগন্য তার দরবারে যেনো অন্তত একটি মসজিদ নিয়ে দাড়াতে পারি। এ জন্যই আমি এটি নির্মাণ করেছি। তাছাড়া আমার বন্ধু মাওলানা মুনীর হোসাইন কাসেমীর পরামর্শে ও দিক নির্দেশনায় আমি এটি নির্মাণ করেছি।
তিনি বলেন, পাশে একটি মাদরাসাও নির্মাণ করেছি। যেনো ছাত্ররা দ্বীনি ইলম অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দেশ জাতীর সেবা করতে পারে। বিশেষত মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমীসহ আরো যারা আমাকে অনেক অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
মসজিদের খতীব জনাব মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী বলেন, এ মসজিদ নির্মাণে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমি শুরু থেকে এর দেখাশুনা করে আসছি। আজকের এই উদ্ধোধনী মুহূর্তে আমি প্রাণ খুলে দোয়া করছি এ মসজিদটি যেনো কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে যেনো উত্তম প্রতিদান দেয় আমি তার জন্য মহান প্রতিপালকের কাছে দোয়া করছি।
মসজিদটি নির্মাণে ভাংনাহাটি এলাকার সবাই খুশি। ৮০ উর্ধ বয়সের এক মুরুব্বি জানান, আমার জীবন বড়ই সুখকর যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের এলাকায় এরকম একটি সুন্দর মসজিদ দেখে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর