সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

ইলমে দীনের পথে: ফিকহ কীভাবে পড়বেন? (৪)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

deubond2মাওলানা লাবীব আবদুল্লাহ: কওমী মাদরাসার মাধ্যমিক স্তরে উসুলে ফিকহ শুরু৷ উসূলুশ শাশি কিতাবটি পড়ানো হয় কাফিয়াতে৷ শরহে বেকায়া জামাতে পড়ানো হয় নূরুল আনোয়ার৷ প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু হয় ফিকহের দরস৷ তালীমুল ইসলাম, বেহেশতি জেওর, বেহেশতি গাওহার, মালাবুদ্দাহ মিনহু, নুরুল ইযাহ, আলফিকহুল মুয়াচ্ছার, মুখতাসারুল কুদুরী, কানযুদ দাকায়িক, শরহে বেকায়া, হেদায়া৷ কওমীর পূর্ণ সিলেবাসে ফিকহের অনেক গুরুত্ব৷

প্রাথমিক কিতাবগুলো উর্দু ফার্সীতে৷ পরের সবগুলো কিতাব আরবীতে৷ একজন তালেবে ইলম ইচ্ছে করলে সবগুলো কিতাবের সূচিপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ফিকহের কোন কোন কিতাব এবং কোন কোন অধ্যায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ৷ ফিকহের দক্ষ উস্তাযের কাছে পথনির্দেশনা নিলে পথ চলতে সহজ হবে ইলমে দীনের পথ৷ একই মাসআলা বার বার আসবে৷ একই মাসআলা বার বার নানা কিতাবে পড়তে হয়৷ সবগুলো বিষয় পুরনো৷ আকাঈদ, ইবাদত, মুআয়ামালা, মুআয়াশারার সমস্যা ও সমাধান হলো ফিকহের কিতাবগুলো৷

চার মাযহাবের মাসআলার বিবরণ৷ সবগুলো কিতাবে মাযহাবে হানাফীকে তারজিহ দিয়ে লেখা বর্ণিত কিতাবগুলো৷ সাধারণত মাদরাসাগুলোতে শাফী, মালিকি, হাম্বলি মাযহাবের কোনো কিতাব পড়ানো হয় না৷ এমন কি অন্য মাযহাবের কিতাবের নামগুলোও শেখানো বা জানানো হয় না৷ এই ক্ষেত্রে লামাযহাবীদের নানা প্রশ্ন আছে মাযহাব ও তাকলিদ নিয়ে৷ তাদের রচিত কিতাবপত্রও আছে৷ আছে ফিকহের প্রাচীন ও আধুনিক চিন্তকের মতবিরোধ৷ মাযহাবে মাযহাবে অধিকাংশ মাসআলায় দ্বিমত৷ তৃতীয় মত৷ এই ইখতিলাফে আমলে প্রসস্ততা তৈরি হয়৷

আহলে হাদীসের পক্ষ থেকেও নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাকলিদ ও ইজতিহাদ নিয়ে৷ মাযহাবের উদ্ভব ও বিকাশ নিয়ে৷ কওমী মাদরাসায় কুরআন ও হাদীসের প্রতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিগুলোতে তেমন গুরত্ব নেই৷ শুধু কুরআন তরজমা৷ তাও আবার অশুদ্ধ বাংলা বা উর্দুতে তরজমা৷ হাদীসেরও দু একটি কিতাব৷ যাদুত্তালিবীন বা আলফিয়াতুল হাদীস৷ যদি হাফেয না হয় তাহলে এই লেভেলে কুরআনের আয়াত হিফযের কোনো তৎপরতা বা আয়োজন নেই৷ কুরআনের প্রতি চরম অবহেলা৷ তাজবিদের প্রতি চরম উদাসীনতা৷ যার প্রমাণ দাওরার তালেবে ইলমদেরও কুরআনের তিলাওয়াত অশুদ্ধ অনেক ক্ষেত্রে৷ আলিয়া ও স্কুল কলেজে তো মারত্মক অবনতি কুরআন তিলাওয়াতে৷ কওমীতেও শুরু হয়েছে এই অবনতি৷ একজন তালেবে ইলমকে এই বিষয়গুলো জানলে ভালো৷

ফিকহ নির্ভর সিলেবাস কওমীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেভেলে৷ ফিকহের পুরনো কিতাবে আধুনিক শত শত মাসআলার কোনো সমাধান নেই৷ সমাধান নেই ব্যাংকিং বিষয়ের৷ চিকিৎসা সংক্রান্ত আধুনিক সমস্যার সমাধান৷ পুরনো কিতাবে আধুনিক যুগের মাসআলার সমাধান না থাকারই কথা৷ এ ক্ষেত্রে একজন সচেতন তালেবে ইলমকে ফিকহের আধুনিক মাসাআলার সমাধানসমৃদ্ধ কিছু কিতাব পড়তে হবে৷ পড়তে হবে সময়ের দাবি পূরণে৷ কিন্তু আমাদের সিলেবাসে সেই আয়োজন রাখা হয়নি৷

ফিকহের ভাষা আরবী৷ কিন্তু কিতাব শুরু হবে উর্দুতে৷ পরে ফার্সিতে৷ পরে আরবীতে৷ প্রাথম ক্লাস থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত ফিকহ৷ অজু গোছল, পানি, নামায রোযা হজ যাকাত, বেচাকেনা, বিয়ে শাদী, ওয়াকফ তালাক এই জাতীয় মাসআলা৷ তিন্তু শুধু মাসআলা পড়ানো হবে৷ এই ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হলো মাসআলাটি কীভাবে জন্ম হলো এবং মাসআলার পক্ষে হাদীস কী? কুরআনের কোন আয়াতের ভিত্তিতে এই মাসআলা? ইজতিহাদের রুপ কী এই মাসআলায়? এই জাতীয় আলোচনা না হবার সম্ভাবনা বেশী৷ কারণ অনেক৷ একজন তালেবে ইলমকে দরসে নেজামীর পড়ালেখার মানচিত্র মনে রাখতে হবে৷ কী কী পড়ানো হবে তা প্রথমে জেনে নিতে হবে৷ জীবনের এক যুগ অজানা পথে পরিচালনা করলে আফসোস করতে হয় পরিণামে৷ আট দশ বছর ফিকর পড়েও তোপের মুখে পড়তে হয় মাসআলার পক্ষে কেউ দলিল চাইলে৷

রেগে গিয়ে আওয়ামকে বোকা বানানোর যুগ নয় এটি৷ ফিকহের প্রতিটি মাসআলার পক্ষে কুরআন, হাদীস, ইজমা কিয়াছের প্রভাব ও প্রমাণ আছো৷ একজন তালেবে ইলমকে সেই প্রমাণের সন্ধান করতে হবে নিরন্তর৷ হতে হবে গবেষক৷ নিত্য নতুন মাসআলার উদ্ভব ঘটিয়ে সমাধান বের করতে হবে উসুলে ফিকহের আলোকে৷ তিন্তু উসুলে ফিকহের মাত্র দুটি কিতাবে বেশী কিছু হবে না৷ প্রাচীন ও আধুনিক কিতাব সংগ্রহ করতে হবে এবং সূত্রগুলো মুখস্ত করতে হবে৷ দলিল হিফয করতে হবে৷ ইস্তেমবাত, ইস্তেখরাজ, ইজতিহাদের বিষয়গুলো বোঝার জন্য অবিরাম পরিশ্রম করতে হবে৷

মনে রাখতে হবে ফিকহের ভাষা উর্দু বা ফার্সি নয়৷ ফিকহ ও উসূলে ফিকহের ভাষা আরবী৷ মাতৃভাষায় মুখে মুখে আলোচনা করে বা মৌলিক কিছু কিতাব রচনা করে বাংলা ভাষায় ফিকহের কিছু প্রাথমিক কিতাব পড়া যেতে পারে তবে উচ্চচর শ্রেণিতে ফিকহের ভাষা আরবীতেই৷ তালীমুল ইসলামের অনুবাদ বা কুদূরী হেদায়ার অশুদ্ধ অনুবাদ পড়ে ইলমের গভীরে যাওয়া সম্ভব নয়৷

ফিকহের বাংলা নোট, অনুবাদ, গাইড পড়ে বাংলা মৌলভী হওয়া যাবে৷ নোট পড়ে নোটিয়া মাওলানা হওয়া যাবে কিন্তু ফিকহের মজা অনুভব সম্ভব নয়৷ তালেবে ইলমকে চার মাযহাবের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, চার ইমামের জীবনী, ফিকহ শাস্ত্রের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে গভীর পড়ালেখা করতে হবে৷ ভাসা ভাসা তথ্য জেনে এই সময়ের কোনো দাবি পূরণ সম্ভব নয়৷ তালেবে ইলমকে সময়সচেতন ফকীহ বা মুফতীয়ানে কেরামকে ফিকহের উস্তায নির্ধারণ করতে হবে৷ আরবী ভাষার আদীকে ফিকহের উস্তায বানালে যা হবে তা লিখলাম না৷

তালেবে ইলমকে বছরের শুরুতে বা ফিকহ পড়ার শুরুতে বিষয়গুলো ভাবতে হবে৷ এই ভাবনায় সহযোগী হোক দরদী কোনো রাহবর৷ উস্তায৷ ফকীহ৷ মুফতী৷ রাহবর হোক এমন ব্যক্তিত্ব যিনি উপলব্দি করেন একুশ শতকের চাহিদা৷ সময় ও যুগের স্পন্দন বোঝেন৷ ফিকহ সাত আট বছর পড়ার নাম নয়; জীবনব্যাপী সাধনার বিষয়৷ চলবে...

লাবীব আব্দুল্লাহ পরিচালক, মাদরাসা ইবনে খালদুন ময়মনসিংহ
21/7/2016 সকাল ৬ টা

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ