মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন : পৃথিবীর সব ধর্মেই অলৌকিকতার একটা উজ্জ্বল জায়গা আছে। আমাদের ইসলাম ধর্মের কৃতিত্ব হলো- এই অলৌকিকতায়ও ইসলাম সব ধর্মের শীর্ষে। আমাদের অলৌকিক সম্পদ মেরাজ- আজও ফুরায়নি তার বিস্ময়। আমাদের প্রিয়তম নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের এক নিশুতি প্রহরে মক্কা থেকে ফিলিস্তিন তারপর সাত আকাশ পার করে চলে গেছেন মহান মনিবের একান্ত সান্নিধ্যে। ধন্য হয়েছেন সরাসরি কথা বলার গৌরব লাভে।
এই গৌরব অতুল অনুপম। আনন্দের কথা হলো, আমরা উম্মতিরাও বঞ্চিত হইনি এই গর্বের ধন থেকে। আমরা বরং প্রতিদিনই ধন্য হই এই গৌরব ছোঁয়ায়- নামাজের মাধ্যমে। নামাজই আমাদের মেরাজ।
কারণ, মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে আছে- বান্দা যখন বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন- সব প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর’, তখন সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হামিদানি আবদি- আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল।’ তারপর বান্দা যখন বলে, ‘আর রাহমানির রাহিম- তিনি দয়াময়, তিনি করুণাময়।’ আল্লাহ তখন বলেন, ‘আমার বান্দা আমার স্তুতি বর্ণনা করেছে।’ বান্দা যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন- বিচার দিনের মালিক।’ আল্লাহ তখন বলেন, ‘আমার বান্দা আমার সম্মান বর্ণনা করেছে।’ বান্দা যখন বলে, ‘ইয়্যাকা নাবুদুৃ কেবল তোমারই এবাদত করি, সাহায্য চাই কেবল তোমারই কাছে’- আল্লাহ তখন বলেন, ‘এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর বান্দার জন্য রয়েছে যা সে চাইবে।’ তারপর বান্দা যখন পাঠ করে- ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিমৃ সরল পথ দেখাও- যাদের প্রতি তুমি নেয়ামত বর্ষণ করেছ তাদের পথ। যাদের প্রতি তোমার চির অভিশাপ কিংবা যারা পথহারা- তাদের পথ নয়।’ আল্লাহ তখন বলেন, ‘পূরণ করা হলো আমার বান্দার প্রার্থনা।’
আমরা জানি, সুরা ফাতেহা নামাজের প্রতিটি রাকাতেই পড়তে হয়। হয়তো লক্ষ্য করি না- এ কেবল মহিমান্বিত কালামের পূণ্যময় পাঠই নয়। বরং এ হলো আমার মালিকের সঙ্গে আমার নিবিড় আলাপন। সুতরাং নামাজ মানেই আমাদের অধিপতি মহান সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ। এখানে তৃতীয়জন নেই- যেমন মেরাজে ছিল না। বান্দা মাটির পাটাতনে দাঁড়িয়ে নিবিড় মগ্নতায় বলে যাবে তার প্রার্থনার কথা। মালিক সরাসরি শুনবেন তার প্রার্থনা। জবাব দেবেন সঙ্গে সঙ্গে। এ কারণেই আমরা দেখি- নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগে আকুল হয়ে পড়বেন আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত বেলালকে ডেকে বলতেন- ‘বেলাল! নামাজের ব্যবস্থা করো; আমাকে শান্তি দাও।’ কিসের শান্তি। আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার শান্তি! মেরাজের সুখ!
পৃথিবীর কোনো ধর্মেই এভাবে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে সরাসরি সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কথা বলার বিধান নেই। কারণ, মেরাজ কেবল আমাদেরই ধন। এই ধনে ভাগ বসাতে হলে প্রথমে নবিরূপে বরণ করে নিতে হবে আমাদের নবি-মেরাজের অধিপতি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। কত সৌভাগ্য আমাদের! আমাদের জন্মই হয়েছে তাঁর উম্মতিরূপে। মুনাজাত করি- আমাদের এই পরিচয় সার্থক হোক প্রতিদিন পাঁচবার প্রভুর সঙ্গে বাক্যালাপে- মেরাজের অনুপম কল্যাণে।
লেখক : মুহাদ্দিস, কলামিস্ট ও গবেষক
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর