আওয়ার ইসলাম: তুরস্কে ক্ষমতাসীন সরকারকে হটাতে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার পর দেশটিতে ভারপ্রাপ্ত নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সেনা প্রধানের নাম উমিত দুনদার। আর এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬০।
খবরে দেখা গেছে, অভ্যুত্থানকারী সেনারা দেশটির রাজধানী ইস্তাম্বুলের বসফরাস সেতুতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তুরস্কের জনগণের দাবি, তাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখেই সেরা আত্মসমর্থন করতে বাধ্য হয়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এর আগে বলেছিলেন, দেশটির সেনাপ্রধান হুলুসি আকার কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন, তিনি তা জানেন না। পরে জেনারেল উমিত দুনদারকে ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলদ্রিম।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদুল জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৭৫৪ জন বিদ্রোহীকে আটক করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য।
তুরস্কের আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে গতকাল শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একাংশ ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান নিয়ে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে রাতভর সংঘর্ষ চলেছে। এ সময় বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অভ্যুত্থানকারীদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৬০ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
এর আগে অভ্যুত্থানকারীদের রুখে দাঁড়াতে সরকার সমর্থকদের আহবান জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এ ঘোষণা পাওয়ার পরপরই রাস্তায় নামতে থাকে লাখো মানুষ। নারীরা পুরুষ নির্বিশেষে সবাই জড়ো হতে থাকে রাস্তায়। খালি হাতেই বহু মানুষকে সেনাদের ট্যাংকের সামনে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ অভুত্থানকারী সেনাদের ট্যাংকের সামনে শুয়েও পড়েন।
একটি আরবি পত্রিকা টুইটার দেয়া এক পোস্টে দাবি করেছে, সরকারের আহবানের পর দেশটির রাস্তায় ৩ মিলিয়ন মানুষ জড়ো হয়। তারা বিপথগামী সেনাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে সর্বাত্মক সহায়তা করেন। সরকার সমর্থনে চলতে থাকে বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ।
এরদোগানের প্রতি বিশ্ব নেতাদের সমর্থন
এদিকে সেনা অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন দেশের নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন এবং এরদোগানকে সমর্থন জানাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েব এরদোগানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, তুরস্কের সকল পক্ষের উচিত দেশটির নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন করা। একই সঙ্গে তিনি দেশটির সকল পক্ষের প্রতি সরকার পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্কের সকল পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। দেশটির পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানিয়েছে ওই সংস্থাটি।
এরদোয়ান সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রধান অংশীদার। এ কারণে দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ইইউ-র পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
তুরস্কের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের নতুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি সেখানে অবস্থারত ব্রিটিশ নাগরিকদের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত জনাকীর্ণ স্থানসমূহ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কমনওয়েল কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
[caption id="attachment_5969" align="alignright" width="297"] সরকারের ঘোষণা শুনে এভাবেই রাস্তায় নেমে আসেন এক নারী[/caption]
এক টুইটার বার্তায় তুরস্কের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফও। তিনি তুর্কি কর্তৃপক্ষের প্রতি দেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তা দিকে দৃষ্টি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটিতে অবস্থানরত রুশ নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভারভ।
আরো আসছে..