[caption id="attachment_5685" align="alignright" width="507"] বগুড়া জামিল মাদরাসা ভবন[/caption]
লাবীব আব্দুল্লাহ: কওমি মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ শুরু শাওয়াল থেকে৷ ভর্তি কার্যক্রম চলবে সপ্তাহজুড়ে৷ তালেবে ইলমদের চাহিদা শীর্ষ মাদরাসায় ভর্তি৷ ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহে মাদরাসা সংখ্যা বেশি৷ প্রায় এগারোটি শিক্ষাবোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মেধাতালিকায় শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চাহিদা থাকে তালেবে ইলমের৷
নতুন বছরে চাহিদা থাকে মাদরাসা পরিবর্তন৷ সাধারণত তালেবে ইলমরা রাজধীনীমুখী নানা কারণে৷ কিন্তু একজন তালেবে ইলম কেন কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে তা স্পষ্ট থাকতে হবে৷ স্পষ্ট থাকতে হবে কাকে সে নির্বাচণ করবে উস্তাজ হিসেবে৷ ঢাকার মাদরাসাগুলোতে ভর্তি হলেও বড় আলেম বা বড় কিছু হওয়া যাবে এই প্রবনতা অনেকাংশে সঠিক নয়৷ ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ঢাকার বাইরে মফস্বল শহরেও অনেক সেরা প্রতিষ্ঠান আছে৷ ভর্তির সময় এ বিষয়েটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষায় তালিমের সঙ্গে প্রয়োজন তারবিয়াত৷ যেসব মাদরাসায় তালিমের সঙ্গে তারবিয়ার গুরত্বারোপ করা হয় সেইসব মাদরাসা নির্বাচন করা যেতে পারে৷ ইলমের সাথে আমলের দীক্ষা নিতে হয় ছাত্র জীবন থেকেই৷ ভর্তির ক্ষেত্রে যে মাদরাসায় উস্তাজ প্রবীন ও দক্ষ সেসব মাদরাসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে৷
এখন শিক্ষা বাণিজ্যের মানসিকতা থেকে গজিয়ে ওঠেছে অনেক প্রাইভেট মাদরাসা যেখানে পড়ারচে থাকা খাবারের পরিবেশ উন্নত কিছুটা৷ একজন দূরদর্শী তালেবে ইলমকে এ বিষয়ে কষ্ট হলেও যেখানে পড়ালেখা ভালো সেখানে ভর্তি হলে ভালো৷ ভর্তির ক্ষেত্রে সাধারণ একটি সমস্যা ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম, ভর্তি পরীক্ষার বিষয় এবং আবাসিক সুযোগ সুবিধা জানা থাকে না তালেবে ইলমের বিশেষ করে যারা ঢাকার মাদরাসগুলোতে নতুন ভর্তি হয়৷ এ ক্ষেত্রে বন্ধুদের সহযোগিতা নিলে ভালো৷
[caption id="attachment_5785" align="alignnone" width="817"] জামিয়া ইসলামিয়া সেহরা মোমেনশাহী[/caption]
বোর্ডি এ ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা তাই ভর্তি হতে হবে সেই প্রতিষ্ঠানে এটি ভুল চিন্তা৷ সচ্ছলতা থাকলে ফ্রি ও লিল্লাহ বোর্ডিং এর খাবার থেকে বিরত থাকা উচিৎ৷ এটি শুধুই দরিদ্রদের হক৷ এই ফ্রি খাবারের মানসিকতায় চিন্তার সংকীর্ণতা জন্ম দেয়৷ ভর্তির আগে দক্ষ, অভিজ্ঞ, উদার, কল্যাণকামীও মাদরাসা শিক্ষার অতীত বর্তমান জানেন এমন দরদি কোন উস্তাজকে তালিমি মুরব্বি নির্বাচণ করা উচিৎ৷ এই ক্ষেত্রে ভুল করলে এলোমেলো হয় শিক্ষাজীবন৷ তা ছাড়া যারা কওমির পাশাপাশি আলিয়া বা স্কুলে পরীক্ষা দেবে তাদের দরদি রাহবর না থাকলে হতাশায় ভোগতে হয়৷
মাদরাসা কর্তপক্ষ আলিয়া বা স্কুলের পরীক্ষার সুযোগ দেবে কি না তা কথা বলে জেনে নিয়ে ভর্তি হওয়া ভালো৷ আলিয়া স্কুলে পরীক্ষা দেবার ক্ষেত্রেও সময়ের চাহিদা উপলব্দি করেন এমন উস্তাজের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে৷ সবকিছু নিজে করতে গিয়ে কলেজে গিয়েও ইসলামিক স্টাডিজ পড়ে বিশেষ কিছু হয় না৷ যারা শুধুই কওমি সিলেবাসে আলেম হতে ইচ্ছুক তাদের দরসে নেজামি ও জাদিদ নেসাবগুলোর ভালো মন্দ দিকগুলো আগেই জেনে নিতে হবে৷ অন্যথা সময় ও মেধার অপচয় হবে৷
তালেবে ইলমকে অবশ্যই সাবেক উস্তাজ এবং অভিভাবকের মতামতকে গুরত্ব দিতে হবে৷ শুধু নিজের মতে মাদরাসা নির্বচণ অনেক ক্ষেত্রে ভুল পথে জীবন পরিচালিত করে৷ মাদরাসার শিক্ষার গুণগত মান, আবাসিক পরিবেশ, উস্তাজের দক্ষতা ও আন্তরিকতা নানা বিষয় থেকে মাদরাসা পরিবর্তণ করা উচিৎ৷
মাদরাসা পরিবর্তণের সময় টিসি বা অনুমতি দিতে রাজি নয় অধিকাংশ মাদরাসা৷ এ ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ কৌশলী ভূমিকায়৷ নিয়ত সহিহ করেই পথ পারি দিতে হবে ইলমে দীনের৷ উস্তাজের প্রতি আদব ইহতেরাম রেখে চলতে হবে পথ৷ জীবনের হদফ ও টার্গেট নির্ধারণ করে এই পথ পারি দিলে অবদান রাখা সম্ভব দীনের নানা অঙ্গনে৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গেনে৷ চলবে...
লেখক: পরিচালক, মাদরাসা ইবনে খালদুন ময়মনসিংহ
14/7/2016 সকাল ৬টা