আবু তাহের : সমকামিতা শব্দটি বিশেষ্য। এটা এসেছে মুলতঃ বিশেষণ সমকামী। ভাষাগত দিক থেকে সম মানে একই এবং কামী মানে বাসনাকারী। তাই সমকামী শব্দটির অর্থ দাঁড়াচ্ছে একই রকম বাসনাকারী। কিন্তু প্রয়োগগত অর্থ ভিন্ন। সমকামী শব্দটির মূল সংস্কৃত সমকামিন। মূল ধাতুর সাথে ইন প্রত্যয়যোগে গঠিত হয়েছে সমকামিন (সম+কাম+ইন) যার অর্থ যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে। প্রাচীন কালে সমকামীদের বোঝাতে ঔপরিস্টক শব্দটি ব্যবহৃত হত। বাতস্যায়নের কামসুত্রের ষষ্ঠ অধিকরণের নবম অধ্যায়ে ঔপরিস্টক শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়।
যাই হোক, সমকামিতা অনেক পুরোনো একটি বিষয়। হাজার বছরের ইতিহাস। ১৮৬৯ সালে কার্ল মারিয়া কার্টবেরি সডোমি আইনকে তিরষ্কার করে ইংরেজিতে প্রথম ‘হোমোসেক্সুয়াল’ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিং ১৮৮০’র দশকে তাঁদের সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সুয়ালিস গ্রন্থে হেটারোসক্সুয়াল ও হোমোসেক্সুয়াল শব্দ দুটো দ্বারা যৌন পরিচয়ক দুই ভাগে বিভক্ত করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী যৌন পরিচয়ের শ্রেণিবিভাজন হিসেবে ব্যাপক পরিসরে গৃহীত হয়।
২৪০০ খ্রি: পূ: মিশরের খনুমহোটেপ ও নিয়ঙ্খ্নুম-কে ইতিহাসে নথিভুক্ত প্রথম সমকামী যুগল বলে গণ্য করা হয়। এরা পরস্পরের নাক চুম্বনরত অবস্থায় চিত্রিত হয়েছে; এই ভঙ্গি প্রাচীন মিশরীয় শিল্পে প্রদর্শিত সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ ভঙ্গি। চিত্রে এই যুগলের চারদিকে আরও অনেক মানব-অবয়ব দেখতে পাওয়া যায়। এদেরকে উক্ত যুগলের উত্তরাধিকারী অনুমান করা হয়। নৃতত্ত্ববিদ স্টিফেন ও. মারে এবং উইল রস্কো প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী লেসোথোর মহিলারা সমাজ-কর্তৃক অনুমোদিত “দীর্ঘমেয়াদী যৌনসম্পর্কে” লিপ্ত হন। এই ব্যবস্থার স্থানীয় নাম “মৎসোয়ালে”। ই. ই. ইভান্স প্রিচার্ড পর্যবেক্ষণ করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর পুরুষ আজান্দে যোদ্ধারা নিয়মিত বারো থেকে কুড়ি বছর বয়স্ক প্রেমিক নির্বাচন করত। এই প্রেমিকেরা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ স্বামীদের বাড়ির কাজে সাহায্য করত ও উরুমৈথুনের মাধ্যমে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করত।
সমকামিতা বিষয়টি পুরোনো হলেও, সেই আদি যুগ থেকেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছেই ঘৃণিত ছিল। বিষয়টি প্রকৃতি বিরুদ্ধ। এই প্রকৃতি বিরুদ্ধ কথাটা আবার অনেকে মানতে চান না। আর এই না মানার পাল্লাটা দিন দিন ভারী হচ্ছে। বিভিন্ন যুগে এর বিপক্ষে যেমন লোক ছিল এর পক্ষেও লোক নেহায়েত কম ছিল না। যেমন প্লেটো। বিখ্যাত এই দার্শনিকের কাজকর্মে অপ্রাকৃতিক বিভিন্ন আচরণ পরিলক্ষিত হয়। বিষয়টি অনেক পুরোনো হলেও সামাজিকভাবে এর প্রতিষ্ঠা লাভ কখনো হয়ে উঠেনি। তারপরেও বেশকিছু দেশ সমকামিতা তাদের দেশে বৈধতা দিয়েছে। কেন দিয়েছে সে বিষয়ে পরে আলোচনা হবে। তার আগে আসুন কিছু জরিপ দেখে নেয়া যাক। জরিপগুলো যদিও পুরোনো তারপরেও ঘেটে নেয়া যাক।
২০১০ সালের বিবিসি রিপোর্ট অনুসারে যুক্তরাজ্যের মাত্র ১% জনসংখ্যা সমকামী, ৯৯% বিষমকামী । ২০০৬ সালের রিপোর্ট অনুসারে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ২-৩% জনসংখ্যা সমকামী, অর্থাৎ বিশাল ৯৭-৯৮% বিষমকামী । ২০০৩ সালের রিপোর্ট অনুসারে কানাডার মাত্র ১.৩% জনসংখ্যা সমকামী, অর্থাৎ ৯৮.৭% জনসংখ্যা বিষমকামী ! ১৯৯২ সালের র্যান্ডম সার্ভে অনুসারে ১৩৭৩ জনের মধ্যে ডেনমার্কে মাত্র ২.৭% সমকামী।
এই সংখ্যাগুলো হয়ত ২০১৬ তে এসে কিছু বেড়েছে। তবে মজার বিষয় হলো পুরো সমকামী বিষয়টির পিছনে যুক্তরাষ্ট্র নামটা ঘুরে ফিরে আসে। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়ে এটিকে জায়েজ করা হয় তাহলে মার্কিন মুল্লক যেতে হয়, যদি উদাহরণ হিসেবে কোন কিছু পেশ করা হয় তার বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক। আর এই আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের আগে দ্বৈত সত্তাবিশিষ্ট মানুষদের কেন্দ্র করে সমকামিতার বিশেষ একটি প্রকারের স্বীকৃতি ছিল। সাধারণত এই ধরণের মানুষদের ছোটবেলাতেই শনাক্ত করা হত, তার মা-বাবা তাকে উক্ত স্বীকৃত পথে জীবন কাটানোর প্রস্তাব দিতেন, আর সন্তান সম্মত হলে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে পালন করে তার নির্বাচিত লিঙ্গের জন্য নির্দিষ্ট আচারের শিক্ষা দেওয়া হত। দ্বৈত সত্তার মানুষেরা সাধারণত শামানের স্থান লাভ করত এবং সাধারণ শামানদের চেয়ে অধিক ক্ষমতাশালী বলে গণ্য হত। তাদের যৌনসঙ্গী হত গোষ্ঠীর অন্যান্য সমলিঙ্গের সদস্যেরা।
লাতিন আমেরিকার প্রাক্-ঔপনিবেশিক বিভিন্ন সভ্যতা, যেমন : আজটেক, মায়া, কেচুয়া, মোচে, জাপোটেক এবং ব্রাজিলের টুপিনাম্বা জনজাতির মধ্যে প্রকাশ্য সমকামী ও রূপান্তরকামী ব্যক্তিবর্গে বসবাস ছিল। স্পেনীয় বিজেতারা স্থানীয় সমাজে অবাধ “সডোমি” উৎযাপন দেখে ভীত হয়ে তা নির্মূল করার বিশেষ চেষ্টা করে। এই চেষ্টার মধ্যে ছিল জনসমাগমে মৃত্যুদ-, পুড়িয়ে মারা এবং অভিযুক্তকে কুকুর দিয়ে খাওয়ানো।
১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আদালত বোয়ার বনাম হার্ডউইক মামলার রায়ে জানা যায়, রাষ্ট্র সডোমিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারে। ২০০৩ সালে এই রায় বাতিল হয়। ১৯৯৮ সালে হাওয়াই রাজ্য সমলৈঙ্গিক বিবাহের বিরুদ্ধে সংবিধান সংশোধন করে। ২০১৩ খ্রিঃ রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল সমলৈঙ্গিক বিবাহের স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাশ করান।
অনেকদিন ধরেই এই স্বল্পসংখ্যক লোকেরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য তৎপর । ১৯৭৩ সালে পাশ্চাত্য মনস্তাত্ত্বিকরা ‘সমকাম প্রবণতাকে’ মনোবিকলনের তালিকা থেকে বাদ দেন। ১৯৭৫-এ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মনস্তত্ত্ব ফেডারেশন ‘সমকাম প্রবণতাকে স্বাভাবিক বলে দাবি করে। কিন্তু এর পূর্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে মানসিক রোগ বলে গণ্য হত। একটা সময় খোদ যুক্তরাষ্ট্রই এর বিরুদ্ধে ছিল। এই বিষয়টিকে তারাই মানসিক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছে। এমনকি ভয়াবহ এইডসে সংক্রামক বলে তারা সমকামিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আর এখন তাদেরই সুর পাল্টে যাচ্ছে। ১৯৭৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সমকামীদের রক্তদানে নিষেধাজ্ঞা চলে আসছিল। আর তার কারণ ছিল এইডস। আসলে গুটি কয়েক লোক যারা নিজেরাই সমকামী এবং এদের পক্ষে তারাই সারাক্ষণ তাদের ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক নামী দামী লোকেরা। এরাই মূলত বিষয়টিকে ঘোলাটে করছে। যেমন: আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইওয়াহানা সিগুরডোটির। সিগুরডোটির হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম মেয়ে সমকামী রাষ্ট্রপ্রধান। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি৷ এরপর ২০১০ সালে সেদেশে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হলে সঙ্গিনী লিওসডোটিরকে বিয়ে করেন সিগুরডোটির৷
আমাদের দেশের প্রায়াত অভিজিৎ রায় যিনিও এর পক্ষে ছিলেন এবং এই বিষয়ে একটা বইও লিখেছেন। বইটির নাম “সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান”। যে বইতে তিনি সমকাতিার পক্ষে বিস্তর আলোচনা করেছেন। এই বইয়ের একটা অংশে তিনি ‘সমকামিতার কারণে এইডস ছড়ায় না-বলেছেন। এইডস সমকামিতা-বিষমকামিতায় বাছবিচার করেনা, যৌনসঙ্গীর দেহে এইচআইভি জীবাণু থাকলে এইডস হবে, নচেৎ হবেনা ।’ কিন্তু তিনি এখানে একটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। সমকামিতার কারণে এইডস ছড়ানোর সম্ভবনা অনেক বেশি, যা এর বিপরীত ক্ষেত্রে কম। বিষয়টি নিয়ে আমি বিস্তর আলোচনা করতে চাচ্ছি না। প্রয়োজনে কেউ চিকিৎসকদের কাছ থেকে জেনে নিবেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে পূর্বেও এর বিস্তর খারাপ দিকগুলো আলোচনা করা হয়েছে। তবে বর্তমানে অনেকে (যারা এই বিষয়ে সমমনা) তারা এর পক্ষের যুক্তিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছে। মানবিক বিষয়টি বেশি উঠে আসে এখানে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের ডিএসএম-৪ টেক্সট রিভিশন মোতাবেক সমকামিতা কোন মানসিক রোগ নয়। তবে মানসিক রোগ না হলেও আমেরিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ইউএনএইডস মোতাবেক সমকামিতা এইডসসহ বিভিন্ন যৌনরোগের একটি অত্যন্ত বড় রিস্ক ফ্যাক্টর।
যাই হোক যুক্তরাষ্ট্রের কথায় ছিলাম। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোয় গে নাইট ক্লাবে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ অনেকেই এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। নিন্দা ছিল হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে। সবাই চায় এগুলোর সুষ্ঠ বিচার হোক। হত্যাকাণ্ডগুলো বন্ধ হোক। আর তাই এই সমকামীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সমকামীদের আন্দোলনকে সম্মান দিতে এই প্রথম ছোট্ট একটি পার্ককে জাতীয় স্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা করলেন! সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের স্বীকৃতি। পুরুষ সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের জন্মস্থান হিসাবে নিউ ইয়র্কের একটি বারের নামকরণ করলেন বারাক ওবামা।
বিষয়টি কেন যেন খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আবার একদিক থেকে দেখলে হিসেব মিলে যায়। এত দিনের আন্দোলন তারপর কিছু প্রাণ বিসর্জন। আর এভাবেই তো প্রত্যেক আন্দোলন জীবন্ত হয়ে উঠে। এটা ছিল সমাকামীদের জন্য একটা বড় জয়। তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁদের আন্দোলনকে সম্মান জানালেন তিনি।
খবরের শিরোনামে উঠে এল স্টোনওয়াল ইন ও ক্রিস্টোফার পার্ক। ম্যানহাটনের গ্রিনউইচ গ্রামে ছোট্ট জমিতে ক্রিস্টোফার পার্ক। কাছেই স্টোনওয়াল বার। ১৯৬৯-এ রেড করে পুলিশ। বিক্ষোভ- আন্দোলন দাঙ্গার চেহারা নেয়। এই বারকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সমকামীদের অধিকার আন্দোলন। ১৯৭০-এ দেশে প্রথম গে প্যারেড করে আন্দোলনকারীরা।
এভাবেই একটি আন্দোলন চাঙ্গা হয়। কারণ তাদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড ইউরোপ আমেরিকার মতই।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ার মত নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা আমেরিকার মত না হলেও তারা দীর্ঘ সময়ে তাদের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু আমরা সুস্থ্যতা চাই, সভ্য ও স্বাভাবিক জীবন চাই। এরজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
যে বিষয়টি এতদিনের ঘৃণিত আর সে বিষয়টিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন একটা পরিস্থিতিতে পজেটিভ করে তুললেন তাতে বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ ২০০৮ সালে নির্বাচনি প্রচারণার সময় বারাক ওবামা সমকামী বিয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও, ২০১২ সালের নির্বাচনের আগে তিনি সমকামী বিয়ের পক্ষে অবস্থান নেন৷ যার ফলে বিশ্বে সমালোচিত হয়েছিলেন যদিও তিনি নিজে সমকামী নন?
যে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয় সেই তামাককেই ইউরোপিয়ান ডাক্তাররা (১৫’শো শতকে) মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ও ক্যান্সারের নিরাময়কল্পে সেবন করার পরামর্শ দিতো। তাছাড়া আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় তামাক চাষে উৎসাহ দান করা হতো, কারণ এই তামাক চাষের দ্বারা তারা ফরাসীদের কাছ থেকে করা ঋণ পরিশোধ করতে পারত। তামাক ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসাকে নির্ঝঞ্ঝাট রাখতে পেরেছিল শক্তিশালী লবিস্ট গ্রুপদের দ্বারা। আপাত যে তামাককে একসময় উপকারী বলে ধরা হয়েছিল সেটা ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। নগ্নতার মধ্যে যেরকম আধুনিকতা থাকে সমকামিতার পক্ষাবলম্বনের মধ্যেও থাকে সভ্যতার অহমিকা! ফলে এর কিছু প্রচারক ও সমর্থকও আনাচে-কানাচে পাওয়া যায়।
এত দীর্ঘ কথা বলার কারণ ২০০৯ সালে ভারতের দিল্লী হাইকোর্ট সমকামীদের মধ্যে কথিত বিয়েকে আইন সংগত ঘোষণা করে। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। ভারতীয় দ-বিধিতে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেড়শো বছরের পুরনো আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল সেই বৃটিশ শাসনের ঔপনিবেশিক যুগে তখনকার ভিক্টোরীয় মূল্যবোধ অনুসরণে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে বৈধতার বিষয় এলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশেও এর প্রভাব কিছু পড়ে।
বাংলাদেশ দ-বিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পায়ুমৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদ- এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে। কিন্তু আমেরিকার সেই ইতিহাসের মত হাটিহাটি পা পা করে বাংলাদেশেও যাত্রা শুরু করেছে সমকামী সংগঠন।
এলজিবিটি সংক্রান্ত জনসচেতনতা গড়ে তোলার বৃহত্তর প্রয়াস শুরু হয় ১৯৯৯ সালে যখন রেংগ্যু নামক এক উপজাতীয় ব্যক্তি বাংলাদেশের সমকামীদের জন্য প্রথম অনলাইন গ্রুপ ‘গে বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’ হল দেশের বৃহত্তম পুরুষ সমকামী সংগঠন; যেটি ২০০৯ থেকে ঢাকায় এলজিবিটি সচেতনতাবর্ধক অনুষ্ঠান করে আসছে। এই দলটি বাংলাদেশে একটি সুসংহত এলজিবিটি সমাজ গড়েতে চায়, এবং একই সঙ্গে ৩৭৭ ধারাটির অবসান চায়।
হাটি হাটি পা পা করে অনেকদূর এগিয়েছে তারা। ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের সমকামীদের শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর খুন হন অন্যতম সংগঠক জুলহাজ মান্নান। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডিতে কাজ করতেন। যদিও অরল্যান্ডোয় হত্যার মত বাংলাদেশে জুলহাজ হত্যার পর সরকারের মার্কিন প্রেসিডেন্টের মত কোন পদক্ষেপ ছিল না। কিন্তু এভাবেই একটি আন্দোলন চাঙ্গা হয়। কারণ তাদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড ইউরোপ আমেরিকার মতই।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ার মত নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা আমেরিকার মত না হলেও তারা দীর্ঘ সময়ে তাদের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু আমরা সুস্থ্যতা চাই, সভ্য ও স্বাভাবিক জীবন চাই। এরজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
শেষ করার আগে ভারতের জ্যোতিষ সুরেশ কুমার একটি কথা যিনি কাউশাল হাইকোর্টের সমকামিতা বিষয়ক রায়ের বিরোধিতা করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সমকামী বিবাহের মতো বিকৃত বিষয়কে যদি আইন সংগত করা হয় তবে এরপর প্রাণীর সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হওয়ার জন্য কেউ কেউ অনুমোদন চাইতে পারে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট ([email protected])
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর