মুফতি মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান : কাল ঈদ। ঈদ মানে কী? কিভাবে ঈদ ঈদ হয়ে ওঠে? যে ব্যক্তি নতুন নতুন বাহারি জামা কাপড় পরে ঈদ তার জন্য নয়; বরং ঈদ তার জন্য, শাস্তির দিবসের ভয় দিলে রাখে এবং আরশের মালিককে ভয় করে। ঈদ গান বাদ্য, আনন্দ উল্লাশ, বাধাহীন আনন্দের মিছিল নয়; বরং ঈদ হলো আল্লাহর দেয়া নেয়ামত প্রকাশ করে সেই স্বীকার ও তার শুকরিয়া আদায়ের জন্য। দ্বীনের সম্মানার্থে, ইসলামের শত্রুদের মুখ কালো করার উদ্দেশ্য নিয়ে মুমিনদের কাফেলায় শামিল হওয়ার জন্য।
ঈদের অনেকগুলো বিধান আছে, যথা,
১. ঈদের দিন সকাল বেলা নামাযের পূর্বে কিছু খাওয়া। তবে এটা সবচেয়ে ভালো হবে খেজুর দ্বারা হলে। খেজুর খেয়ে আমরা ইফতারের ক্ষেত্রে আল্লাহর পালন করবো, যেভাবে আমরা রোযার ক্ষেত্রে তার আদেশ পালন করেছি।
২. নিজেদের রোযাকে অনর্থকতা আর অশ্লীলতার গুনাহ থেকে পবিত্র করার জন্য, দরিদ্রকে সাহায্যের জন্য, পারস্পরিক সহযোগিতার রুহকে যিন্দা করার জন্য, নিজের লোভ দমন করে নফসকে পবিত্র করার জন্য সাদকায়ে ফিতর আদায় করা।
৩. সুন্দরতমের সৌন্দর্য্যরে স্বীকার করে নতুন পোশাক পরা, খোশবু ব্যবহার করা। কারণ, আল্লাহ তায়ালা সুন্দর, সৌন্দর্য্যকে ভালোবাসেন। তিনি নিজের নেয়ামত প্রকাশ করাকে পছন্দ করেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন
“ আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাহর উপরে তার নেয়ামতের আছর দেখতে পছন্দ করেন।”
সুনানে তিমমিযি: ২৮১৯
৪. ঈদ মানে ফিরে আসা। ঈদ সেই সময় ঈদ হবে, যখন আমাদের কতক কতকের কাছে সাক্ষাত, সালাম আর ভালোবাসা নিয়ে ফিরে আসবে।
৫. ঈদ আসে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য, পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহারের জন্য, গরীব দুখীর উপর দয়াদ্র হওয়ার জন্য, প্রতিবেশির সাথে দয়া প্রকাশের জন্য।
৬.মুসলমানদের কাছে ঈদ হলো শরিয়তের গন্ডির ভেতরে থেকে, আদবের সাথে পরিশীলিত নির্মল ইমানি আনন্দ প্রকাশ করার জন্য।
ঈদের দিনে শান্ত উল্লাশ পরিশীলিত উচ্ছাস, নির্দোষ ক্রীড়া কৌতুক, হাসি, আনন্দ, বৈধ বিনোদনের অনুমতি আছে।
৭. ঈদ হাশরের ময়দানের সেই বিশাল জমায়েতকে মনে করিয়ে দেয়। হাজার হাজার জনতা; ছোট বড়; আমির ফকির, আশরাফ আতরাফ; সুখী দুখী; সব এক কাতারে......
৮. ঈদ পুরষ্কারের দিন। যারা ইমানের সাথে, সওয়াবের নিয়্যতে রোযা রেখেছে, তারাবিহ পড়েছে, তাদের জন্য এই দিনে এক মহা সুসংবাদ। এক মহা সফলতা, এক মহা প্রতিদান......
আর যারা রোযায় পাপাচার করেছে, তার প্রভুর আদেশকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছে, তার সীমা লঙ্ঘন করেছে, তার জন্য এই দিন এক মহা লজ্জার দিন। এক মহা আফসোসের দিন........
ঈদগাহ থেকে মানুষ দুদলে ভাগ হয়ে ফেরেন। একদল প্রতিদান পেয়ে প্রশংসিত হয়ে ফিরে আসে। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমরা ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাও। তোমরা আমাকে সন্তুষ্ট করেছো, আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি।” আরেকদল ফিরে আসে ক্ষতি, লাঞ্চনা আর আফসোস নিয়ে। বঞ্চিত হয়ে।
জনৈক বুযুর্গ ঈদের দিনে একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা খেলা ধুলাসহ নানা অনর্থক কাজ করছিলো। বুযুর্গ তাদের বললেন, তোমরা যদি রমযানে ভালো কাজ করে থাকো, তাহলে এটা ভালো কাজের শুকরিয়া নয়। আর যদি রমযানে ত্রুটি করে থাকো, তাহলে যারা আল্লাহর কাজে ত্রুটি করেছে; এমন দুঃসাহস কিভাবে করতে পারে?
একটু ভাবুন! আগের ঈদগুলোতে আপনাদের যে সব পূর্ব পুরুষ, মুরুব্বিয়ানে কেরাম, বন্ধু বান্ধব আপনাদের সাথে নামায আদায় করেছে; তারা কোথায়? কোথায় গেছে তারা?
দরবেশ আবুল আতাহিয়া র. বলেন, “মৃত্যু কত বাবা মাকে কষ্ট দিয়েছে, যুগ কত বাবা মাকে নীরব করে দিয়েছে। আমি কত সম্ভ্রান্ত যুবককে দেখলাম, যারা সম্ভ্রান্ত ঘর থেকে উঠে এসেছে। লৌহ বর্ম পরে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর ঠান্ডা রাত উপভোগ করছে।
মৃত্যুর তীর দ্বারা বিচ্ছেদ তাকে নিক্ষেপ করেছে, আর তারা শীতল ভূমিতে শুয়ে আছে।
আমার কী হলো যে, আমি সবাইকে গাফেল দেখছি, যেন তাদের কলব অমনোযোগী ।
তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে দুনিয়া গ্রহণ করেছে, অথচ তারা জানে যে, এই দুনিয়া নশ্বর। সকালে তারা কালো সাপের মতো ফোস ফোস করে ওঠে, মনে হয় তারা প্রচন্ড ক্রোধের সাথে রাত কাটিয়েছে। তাদের বাহ্যিক অবস্থা দর্শককে মুগ্ধ করবে, কিন্তু সম্পর্কে তাদের চিন্তাধারা একেবারেই ফাসিদ।”
আগামীকাল আপনি পুরষ্কার পাবেন। আগামীকাল আপনার আমলনামায় আপনার প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে লেখা হবে। আপনি এই আশা করেন যেন সেখানে ভালো কিছু লেখা হয়। যেদিন আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মাগফিরাত দিয়ে মহা সফল হবেন সেই মহা ঈদের দিনের জন্য অপেক্ষা করুন.... “যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফল ব্যক্তি। এই পার্থিব জীবন ছলনার সামানা ছাড়া আর কিছুই নয়।” সুরা আলে ইমরান:১৮৫