গুলশানের আর্টিজান রেস্টুরেন্টে গতরাতের জিম্মি ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে । অভূতপূর্ব ঘটনাটি সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে দারুণভাবে। আলোচনা চলছে ফেসবুকেও। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্যে এই ঘটনা নিয়ে করা কিছু ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরা হলো।
ওয়ালিউল্লাহ আরমান
“গুলশানের ঘটনাকে সাজানো নাটক বলা যাবে কি?"
এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি একবাক্যে বলবো, নাহ, সাজানো নাটক বলা যায় না৷
আতংকিত মনে দুর্ভাবনা জেগে উঠছে; গুলশান বাংলাদেশকে শশ্মানের দিকে নিয়ে যাবে নাতো?
গুলশানে দেশী অভিজাত এবং বিদেশীদের পছন্দের ‘হোলি আর্টিজান' রেস্টুরেন্টে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলা, গ্রেনেড বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলিতে দু'জন পুলিশ কর্মকর্তা সহ পাঁচজন নিহত৷
বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান৷
পাবলিক এবং দেশীয় গণমাধ্যমকে ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার পর টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচারেও বাধা৷ যখন চ্যানেলগুলো পাবলিকদের নিয়ে রবীন্দ্র সংগীতে ডুব দিচ্ছে একই সময়ে সিএনএন, বিবিসি, সিবিএস সরাসরি প্রচারে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা জানাচ্ছে৷
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আইএসের পাশাপাশি একই ঘটনার মালিকানা দাবী করছে, ‘আনসারুল ইসলাম' ‘আল কায়েদা৷' আনসারুল্লাহ বাংলা টিমও হয়তো দাবী করবে৷ আর সন্ত্রাসীদের মুক্তির কথিত দাবীর প্রেক্ষিতে জেএমবিকে তো জড়ানোই যায়৷ মরা গরুর হাড়, কংকাল নিয়ে যেভাবে শকুনেরা কামড়াকামড়ি করে, ছদ্মবেশীরাও তেমন করে ছিড়ে খুড়ে খেতে চাইছে আমাদের দেশটাকে৷
বিবিসি বলছে, এপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০ জন৷ সেখানে দেশী মিডিয়া জানাচ্ছে, আর্টিজানে ৫জন মারা গেছে৷
ঘটনার পরপর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ বলেছে, আইএস এই জিম্মী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে৷
ঘটনার পরম্পরা বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই সন্ত্রাসী ঘটনাকে সাজানো নাটক বলা সম্ভবত ঠিক হবে না৷
এবং অতীতের মতো এই ঘটনাকেও আওয়ামীলীগ কর্তৃক বিএনপি-জামায়াতের উপর চাপানো অথবা তার প্রতিক্রিয়ায় বিপরীত দিক থেকে উল্টো ক্ষমতাসীন মহলকে দোষারোপের খেলায় অপুরণীয় ক্ষতি হবে দেশের৷ সুযোগ নিবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী মহল৷
এই ঘটনা আরো একবার আমাদেরকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, আইএস নামক নৃশংস সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আসলে ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদেরই তৈরী৷
দেশী, বিদেশী চক্রান্তে কঠিন ঝুঁকির মুখে পড়ে গেলো প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ৷ হোলি আর্টিজানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মতো রক্তাক্ত প্রান্তর বানানোর চক্রান্ত সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলো বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, সাম্প্রতিককালে আএএসের আগুন যেখানেই লেগেছে, তছনছ হয়েছে গোটা ভূখণ্ড৷
আমরা সমস্বরে আওয়াজ তুলি, হোলি আর্টিজানে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে চিহ্নিত করার পাশপাশি ফাঁসি দিতে হবে৷
ইসলামের ন্যায় মহান এবং শ্রেষ্ঠ একটি ধর্মকে কলুষিত করার অধিকার নেই কারোই৷
আমরা সন্ত্রাসীদের প্রতি নিন্দা, ঘৃণা ও ধিক্কার জানাই৷
তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ইসলাম, মুসলমান এবং এই দেশের স্বার্থেই৷
আমরা যেনো ভুলে না যাই যে, “নগরে আগুণ লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না৷"
রেজাউল করিম রনি
চেতনা বন্ধুগন কি বলবেন:
এটা...বাংলাদেশ....নাকি.....আফগানিস্তান......?
শেখ হাসিনাই কি আমাদের হামিদ কারজাই?
উত্তর দেন শুয়রের বাচ্চারা।
বার বার সতর্ক করেছি, তখন রাজাকার কইছেন? ছাত্র-লীগের সন্ত্রাসী লেলায়া দিছেন? এখন কই? কই আপনার চেতনার হেডম? কই শাহবাগ? বিদেশের মিডিয়াতে নিজের দেশের এমন খবর দেখে লজ্জা করে না? দেশে-বিদেশের সব বাংলাদেশি নাগরিকদের বিপদে ফালানোর জন্য তো তোদেরই ফাঁসি হওয়া উচিত-কুলাঙ্গার কোথাকার। সরি ফর ল্যাঙ্গুয়েজ।
২.
টিভিতে দেখা যাচ্ছে হামলার ফলে রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম হয়েছে। জ্যামে আটকা মানুষ বিরক্তি নিয়েবাইট দিচ্ছে। খুব একটিভ রিপোর্টার ঘটনার থেকে আধা মাইল দূরে থেকে গাড়ির ফাঁক দিয়ে চুঙ্গা ডুকিয়ে দিচ্ছে, গরমে আরও অত্যাচার করছে পাবলিকরে। অনেকে মুখ ফিরায়া নিতেছে। যা হোক জ্যামের যাত্রির ধারণার মতোই এই ঘনটা নিয়ে আপনি মিডিয়ার কল্যানে কোন খবরই পাবেন না।
ঘটনারআশ-পাশ থেকে সব মিডিয়া ( চেতনা-অচেতনা) দেশের স্বার্থে নাকি সরায়া দেয়া হয়েছে, মুন্নি সাহারে মিস করতেছি? এই ঘটনার ফলে জ্যামের খবর দেখে..জনগন মনে করবে এটা আর নতুন কি?
জ্যামতো আমাদের প্রতি দিনের বন্ধু।
এই মিডিয়া থেকে আপনি কিছুই জানতে পারবেন না -এটা নিশ্চিত থাকেন।
দেশে কোন জঙ্গি নাই। সব বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র।ভারতকে অসস্তোষ্ট করাই এদের মূল লক্ষ। এই গান শোনার জন্য
রেডি হন, খাঁটি ষরিসার তেল দিয়া কান পরিষ্কার করে নেন।
সৈয়দ শামসুল হুদা
গুলশান ঘটনা নিয়ে কেউ মিথ্যা রং ছড়াবেন না। এখানে কতিপয় সন্ত্রাসী আক্রমন চালিয়েছে। তারা কারা সেটা সরকার বের করবে। ঘটনার আদ্যোপান্ত না জেনে ইসলাম শব্দের প্রয়োগ করবেন না।
স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- আল্লাহু আকবর বললেই সেটা ইসলাম হয়ে যায় না, র্যাবের বেনজির যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তার প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই গুলশানের অপরাধীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এখানে যেন দ্বিতীয় ফাহিমের মঞ্চায়ন আমরা না দেখি।
হাসান আল বান্না
পত্রিকায় দেখলাম আইএস নাকি দায় স্বীকার করছে! ওদের কি রোজা নামাজ কিছু নাই? তারাবী পড়া কিংবা সেহরির জন্য প্রস্তুতি রেখে নিরপরাধ মানুষদেরকে এভাবে মেরে ফেলতে জিম্মি করে রেখেছে।
আল্লাহ্ এদের হেদায়াত দান করুন। আর নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মান জানাই। দেশের জন্য প্রাণ দিলেন। আর ভাইলোগ, উনারা মরে গেছেন, এখন পুলিশ হিসেবে তারা যত নিরপরাধ মানুষের সাথে জুলুম করেছেন, ক্রসফায়ার করেছেন সেইসব টেনে আনবেন না। সেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ্ সিদ্ধান্ত নেবেন, ক্ষমা করবেন না শাস্তি দেবেন। আমরা কেবল তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, আর এর মাধ্যমে যেন কাল থেকে যেসব পুলিশ সদস্য আবার অপকর্ম ও জুলুমে মেতে উঠবেন তাদের যেন হিদায়াত হয়।
হে প্রভু, এই অসহায় দেশটার জন্য তুমি সাহায্যকারী পাঠাও! অবশ্যই আইএস এবং ইউএস ছাড়া।
রোকন রাইয়ান
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হামলাকারীদের একজন ধরা পড়েছে। সুখবর।
সদিচ্ছা থাকলে আসল ঘটনা জানা যেতে পারে। তবে সেই ইচ্ছা হবে কিনা আল্লাহই মালুম। অতীতে অনেক ধরা পরেও এবং সিসি ক্যামেরায় অপরাধী নিশ্চিত হওয়ার পরও ঘটনার কোনো কুল কিনারা জাতি জানতে পারেনি...
এবারও সেরকম কিছু হয় কিনা কে জানে। তবে এরকম কিছু না হোক, মনে প্রাণে আশা করছি...
সাঈদ কাদির
গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলার দায় স্বীকার যারাই করুক, সেটি কোন খুশির খবর নয়; খুশির খবর হলো-- জায়গাটি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে। দায় স্বীকারকারী সংগঠনের যে-সূত্র, সেটা নিশ্চিত কোন সূত্রও নয়। তবে রেস্টুরেন্টের ভিতরে জীবিত যে-সব সন্ত্রাসীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে, তাদের কাছ থেকে নিশ্চিত তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব। তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করলে -ই আসল খবর বের হয়ে আসবে।
বনানী থানার ওসি ও ডিবি কর্মকর্তা রাতেই নিহত হয়েছেন। আমি যদ্দুর পর্যবেক্ষণ করেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ ইতিবাচক ভূমিকাই রেখেছেন। সুতরাং তাদের জীবনের মূল্যায়ন করুন। প্রকৃত অপরাধীর পরিচয় প্রকাশ করুন। এবিষয়ে জনসাধারণকে পরিষ্কার ধারণা দিতে অকুণ্ঠ ভূমিকা রাখুন।
হলি আর্টিজানের ভিতরে অভিযান চালিয়ে যাদেরকে জীবীত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তাদেরকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি করা উচিত। এখানে কোন ধরনের অস্পষ্টতা বা ধামাচাপা আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কট ডেকে আনবে। সরকারকে অনুরোধ করবো, সন্ত্রাসী যে -ই হোক, তাকে চিহ্নিত করুন -- অবিলম্বে বিচারের সম্মুখীন করুন। আমরা শান্তি চাই। নিরাপদে বসবাস করতে চাই।
ইতিমধ্যেই প্রামাণিত হয়েছে, আমাদের দেশীয় বাহিনী এধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম। সুতরাং সীমান্তের বাইরের কাউকে এক্ষেত্রে ডেকে আনা অনুচিত হবে। শকুনদের দিয়ে মৎস্যশিকারের চিন্তা করবেন না। কারণ, শকুন আমন্ত্রনকারী আর শিকারীর পার্থক্যবিধানে বিশ্বাসী নয়।
সাইফ হাসানাত
আমরা সাধারণ নাগরিকরা কতোটা নিরাপদ? আমাদের মনে কি এই প্রশ্ন আসছে? এসে থাকলে প্রতিকার হিসেবে আমরা কী চিন্তা করছি? ক্ষমতালোভী সরকার এবং গদিমুখী রাজনীতি, গত ৪৫ বছরে আমরা আর কিছু দেখিনি। নিজেদের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যত সুরক্ষার জন্য এখন নতুন কিছু ভাবাটা দরকার। এখন মানে আজকেই। কয়েকদিন পর আর সুযোগ মিলবে না। ভালো থাকতে না চাইলে, আমাদেরকে কেউ এসে ভালো থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবে না। যা হওয়ার হোক, বলে বলে কিন্তু বহুদিন কেটে গেছে। সামনে আর এভাবে নাও কাটতে পারে। ইরাক-সিরিয়ার ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে আমাদেরও। তার আগে জরুরি সতর্ক অবস্থান কি আমরা গ্রহণ করবো? নাকি পুরোনো বিবাদেই জড়িয়ে থাকবো? এই সিদ্ধান্ত এখন আমাদের নিতে হবে।
আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ