১. সঙ্কটটা কি ধর্মীয় বা জাতিগত?
ধর্মীয় বা জাতিগত, কোনটিই নয়। আমাদের দেশে এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়ছে না। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কোন অংশ এই আক্রমণকে সমর্থন করেনি, ফলে, একে জাতিগত সঙ্কট আখ্যা দেওয়া ভুল। একই সাথে, ধর্মীয় সঙ্কটও নয়। ধর্মীয় সঙ্কট মানে, ধর্মতত্ত্বকেন্দ্রিক সঙ্কট। যেভাবে আক্রমণ হয়েছে, একে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ইসলামি ধর্মতত্ত্ব সমর্থন করছেনা। বরং, একটু আগে বেড়েই, দ্বিমত জানাচ্ছে। জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়া এর প্রমাণ।
২. সঙ্কটটা কোথায়?
সঙ্কটটা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে মুসলমানরা ও ইসলামপন্থীরা যে জুলুমের শিকার হচ্ছে, সেখানে, প্রশ্ন উঠছে, বিদ্যমান ক্ষমতাবানরা মুসলমানদের কি প্রতিনিধিত্ব করেন, বা অন্য কাউকে প্রতিনিধিত্ব করতে দেন- রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে? নাই। তো, সমাজের একটা অংশ হতাশ হয়ে উগ্রভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছে। একই সাথে, উত্তর উপনিবেশি রাষ্ট্রকাঠামো নিজেই ইসলাম কায়েমে বাঁধা দেয়। হয়তো জানেন, ইসলামি অর্থনীতি ও আইন বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হতে পারছে না। কেন পারছে না। বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কারণে। ফলে, আমরা বলছি, আক্রমণটা ভুল ছিল। তবে, মনে রাখতে হবে, বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী চায়, ক্ষমতাবানরা তাদের সমস্যা-সুবিধের প্রতিনিধিত্ব করুক, বা তাদের কোন দলকে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হোক। রাষ্ট্রীয় কাঠামো এই প্রতিনিধিত্বের জন্য প্রস্তুত হোক। খেয়াল করুন, ভারত বা রাশিয়ার মত রাষ্ট্র ধর্ম ও রাষ্ট্রের এই সঙ্কট কিন্তু নেই। মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে, আমরা কেন পারবো না?
আক্রমণকারীরা মুসলিম কি অমুসলিম, এই প্রশ্ন তাহলে অবান্তর। তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে কিনা, এই প্রশ্নও অবান্তর। কেননা, আমরা এখনো রাষ্ট্র ও ধর্মের প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারিনি। মূল সমস্যাটা আসলে আমাদের। এই অমীমাংসা, নিজেই, এই আক্রমণের জন্য দায়ি।
৩. রানওয়ে মুভিতে যেমন দেখি, তাদের তরিকা ও ব্যাখ্যা মেনে আমরাও তো সন্ত্রাসের বিরোধিতা করতে পারি?
নাহ, পারি না। কেন পারি না? রানওয়েতে দেখানো হয়, উগ্রবাদের কারণ মোটাদাগে দুটি। আর্থসামাজিক বৈষম্য ও উগ্র মতাদর্শ। কেননা বর্তমানে যারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে, তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের সন্তান। কিছুদিন আগে আলি রিয়াজ এক গবেষণায় এর বিস্তারিত খতিয়ান দেন। এবং, একই সাথে, উগ্র মতাদর্শও জঙ্গিবাদের কারণ নয়। কেননা ইসলাম যেমন ক্ষমতা ব্যবহার করতে বলে, তেমনি অন্যের বিশ্বাসের অধিকার রক্ষা করতে বলে। কেননা অন্যের বিশ্বাস পাল্টাতে বাধ্য করলে এটা শেরেকি। তেমনি, মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে বলে, কেননা রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে। বান্দা একে বন্ধ করতে পারেনা। আবার ইসলাম ক্ষমতা ব্যবহার করতেও বলে। কেননা, আল্লাহ সূরা হজে যেমন বলেছেন, ক্ষমতা ব্যবহার না করলে বিশ্বাস , বাসস্থান ও সম্পদের অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, খৃস্টানীটি ও সেকুলারিজমের মত ইসলাম একক মতাদর্শ বাস্তবায়নের কথা বলেনা, আবার বৌদ্ধধর্মের মত ক্ষমতাহীন শান্তির কথাও বলেনা। কেননা ক্ষমতা ব্যবহারব্যতীত শান্তি নিশ্চিত সম্ভব নয়।
৪. পশ্চিমা সন্ত্রাস ব্যাখ্যার সমস্যা কোথায়?
গত দুই শতকে পশ্চিমাদের বিশ্বনিয়ন্ত্রণ নেবার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের তারা প্রজা আখ্যা দেন। মানে যারা আহার-পানাহার-নামাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাবে না। নিজেদের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা চালাবে না। কিন্তু মানুষ সামাজিক প্রাণী। মানুষ মাত্রই ক্ষমতা, সমাজ ও নেতৃত্ব। ফলে, নানাভাবে মুসলমানরা উপনিবেশ থেকে মুক্তির চেষ্টা শুরু করে। পশ্চিমারা এটা মেনে নিতে পারল না। বলল, অর্থনৈতিক-সামাজিক বৈষম্যের কারণে ও ধর্মীয় উগ্রতার কারণে মুসলমানরা এমন করছে। অথচ, সন্ত্রাস ধারণাটা সৃষ্টি হয়েছে খোদ পশ্চিমাদের মুসলমানদের প্রতি অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। মুসলমানদের ক্ষমতা, নেতৃত্ব ও সমাজহীন অনুমানের কারণে। এটা গ্রীকোখ্রিস্টান ফিলসফির ঐতিহাসিক সমস্যা। আমরা একে বহন করবো কেন?
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর