হাসান অাল মাহমুদ : মুসলমানদের জীবনে বছর ঘুরে দুইটি দিনই অাসে ঈদের দিন হিসেবে। এ দুদিন খুশির দিন।অানন্দের দিন।যার একটিকে বলা হয় ঈদুল ফিতর অারেকটিকে বলা হয় ঈদুল অাযহা।ঈদুল অাযহা অনুষ্ঠিত হয় জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে অার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র রমজান মাসের শেষে শাওয়ালের এক তারিখে।
মুমিন জীবনে এ দুই ঈদের মাহাত্ম্য অপরিসীম। একটিতে দিতে হয় সামর্থবানদের অার্থিক ত্যাগ অারকটিতে দিতে হয় বালেগ, সবলদের দৈহিক ত্যাগ। অার এর মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয় অানন্দ।এ অানন্দ নির্মল। স্বচ্ছ,পবিত্র। মুমিনের সে অানন্দ উদযাপনের উদ্বোধনটা কতইনা চমৎকার! নিখিলের স্রষ্টা দয়াময় অাল্লাহর কুদরতি পায়ে মাঠে সেজদার মধ্য দিয়েই হয় শুভউদ্বোধন।দুরাকাত নামায পড়তে ছুটে যায় মুমিন মাঠে। ঈদগাহে। দিনভর চলে মুমিনের ঈদোৎসব ।মুমিনের এই ঈদ উৎসব উদযাপিত হয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহিস সালামের দেখানো পথ অনুযায়ি। অনুযায়ি। অাসুন তাই জেনে নিই মুমিনের ঈদের দিনের উদযাপন পদ্ধতি বা সুন্নাত সম্পর্কে এবং ঈদ উৎসবের উদ্বোধনী বা নামাযের মাসাইল সম্পর্কে।
ঈদের দিনের সুন্নাত
মুমিন অন্য দিনের তুলনায় সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। ফজরের নামায পড়বে নিজ মহল্লার মসজিদে। ঈদটা ঈদুল ফিতরের হলে সকালে কিছু হলেও অাহার করবে। অবশ্য আহার্য বস্তুটি খেজুর হলে খুবই ভালো এবং খেজুরের সংখ্যা বেজোর সংখ্যক হলে অতি উত্তম। হযরত আনাস (রাযি,) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অন্য সনদে হযরত আনাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি শরিফঃ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া সংক্রান্ত অধ্যায়, হাদিস নং-৯৫৩) খেজুরের ব্যবস্থা না থাকলে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া উচিৎ, মিষ্টি জাতীয় জিনিসও না থাকলে কিছু না কিছু ঈদুল ফিতরের দিন ঈদ্গাহে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া সুন্নাত। এই কিছু না কিছু খাওয়ার সুন্নাত কিন্তু ঈদের নামাযের সুন্নাত নয়; বরং ঈদের দিনের সুন্নাত। কেননা এক মাস সিয়াম পালনের পর দিনের বেলা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দাওয়াত কবুল করার বিষয় এখানে নিহিত। খাওয়ার ব্যাপারে সুন্নাত তিনটি: খেজুর খাওয়া (খেজুর না থাকলে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া) বেজোর সংখ্যক খাওয়া, ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খাওয়া। অপরদিকে ঈদুল আযহার নামাযের পূর্বে কিছু না খেয়ে নামাযের পর নিজের কুরবানির গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। তবে ঈদুল আযহার
নামাযের পূর্বে কিছু খাওয়া মাকরুহ নয়।
মুমিন নামাযে যাওয়ার জন্যে মিসওয়াক করবে। গোসল বা অযু করবে। নামাযের জন্য এবং বড় কোন সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে মিসওয়াক করা নবীজির সুন্নাত। সেক্ষেত্রে ঈদের দিন মিসওয়াকের গুরুত্ব অত্যধিক। হ্যাঁ, মিসওয়াক যেন হয় এক বিগত পরিমান লম্বা, এক আঙ্গুল পরিমান মোটা এবং গাছের ডাল বা শিকড় জাতীয় হয়, যাতে চাবানো সম্ভব হয়। মিসওয়াক চার আঙ্গুলের চাইতে ছোট হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ করা উচিৎ। উপর-নীচ ভাবে মিসওয়াক না করে আড়াআড়ি ভাবে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। গোসল করবে সুন্নাত তরিকায়। তারপর সাধ্যমত উত্তম,সুন্দর পোষাক পরিধান করবে। পোষাক যেন হয় সুন্নাত সম্মত। নতুন কাপড় হলে বেশ ভালো। নতুন কাপড় না হলেও অসুবিধা নাই। তবে পোষাক সাদা হলে অতি ভালো। সাদা না থাকলে লাল রং ব্যতীত যে কোন পোষাক পরিধানে কোন সমস্যা নেই। তবে সাদা রংয়ের কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ অালাইহিস সালামের কাছে খুবই পছন্দ।
তারপর রঙ বিহীন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যেন শরীরে কোন রঙ না লাগে।এক্ষেত্রে জেনে রাখা জরুরী, এলকোহলযুক্ত সেন্ট ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আঙ্গুর, খেজুর ও কিসমিস থেকে তৈরি এলকোহলযুক্ত সেন্ট ব্যবহার করা হারাম এবং তা নাপাক। মোটকথা মুমিন নিজেকে সুসজ্জিত করবে। অার তা করবে শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে। নিজের সাধ্য অনুযায়ি। খুবই জেনে রাখা প্রয়োজন, পুরুষের জন্য মাথা ও দাড়ি ছাড়া মেহেদি ব্যবহার করা বৈধ নয়। মহিলাদের জন্য নেল পালিশ ব্যবহার করা মাকরূহ। অবস্থাভেদে হারামও।অার ঈদুল ফিতরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর অাদায় করা। যাদের কাছে স্থাবর-অস্থাবর, বর্ধনশীল-অবর্ধনশীল যাবতীয় সম্পদ মিলে যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমান সম্পদ থাকে তাদের উপর ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর অাদায় করা ওয়াজিব। তারপর মুমিন প্রভাতে অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ঈদগাহে গমন করবে। ঈদগাহে যাওয়ার ব্যবস্থা পায়ে হেঁটে যাওয়া নবীজির সুন্নাত। ঈদগাহে যাওয়ার সময় যাবে এক রাস্তা দিয়ে এবং ফিরার সময় অাসবে অন্য রাস্তা দিয়ে। যাতে করে বিভিন্ন পথে মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয় এবং তাদের খোঁজ খবর নেয়া যায়। হযরত জাবের (রাযি,) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহ থেকে রাস্তা পরিবর্তন করে ফিরতেন। (বুখারি শরিফঃ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার পথে রাস্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত অধ্যায়, হাদিস নং-৯৮৬)। অার ঈদের নামায পড়বে ঈদ্গাহে গিয়ে। হ্যাঁ, কারণবশত মসজিদেও পড়া যাবে। অসুবিধা নেই।নিজেকে গোমরামুখি রাখবে না বরং আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করবে। অার সাধ্যমত বেশি বেশি দান-খয়রাত করবে।চলতে ফিরতে তাক্বাব্বালাল্লাহুু মিন্না ওয়া মিনকুম ( আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে কবুল করুক) এই জাতীয় বাক্য দ্বারা অপর মুসলমানকে অভ্যর্থনা জানাবে। ঈদগাহে যেতে পাঠ করবে তাকবীরে তাশরীক তথা অাল্লাহু অাকবার অাল্লাহু অাল্লাহু অাকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অাল্লাহু অাকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। ঈদুল ফিতরে পড়বে আস্তে আস্তে অার ঈদুল আযহায় পড়বে উচ্চস্বরে। ঘরে-বাইরে সব সময় এই তাকবীর পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই। ঈদ্গাহে পৌঁছে ইমাম সাহেব কর্তৃক ওয়াজ-নসিহত শুরু করার আগ পর্যন্ত তাকবির পড়তে থাকবে। ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল অযহার তুলনায় দেরিতে পড়বে।কেননা,ঈদুল ফিতরের পরতো ঈদুল আযহার মত কুরবানি করতে হয় না।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর/ওএস