গতকাল ২৫ জুন ইন্তেকাল করেছেন বিশিষ্ট আলেমে দীন মাসিক মদিনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। তার ইন্তেকাল নাড়িয়ে গেছে সবাইকে। শোকাবহ হয়েছে ফেসবুকও। ফেসবুকাররা তাকে নিয়ে নানারকম অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। স্মরণ করছেন অতীতে তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য এমন কিছু স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো।
ড. আফম খালিদ হোসেন
বিদায় হয়ে গেলেন আমাদের অভিভাবক বিদায় হয়ে গেলেন আমাদের অভিভাবক, সীরাত গবেষক, ইসলামি রেনেসাঁর পুরোধা ব্যক্তিত্ব হযরত মাওলানা মুহউদ্দিন খান। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম নসীব করুন। আমীন।
সালাহউদ্দীন খান
`আমার আব্বা ইন্তেকাল করেন ১০ রমজানে। আম্মা ইন্তেকাল করেন ২০ রমজানে। আজ ১৯শে রমজান ইফতারের আগমূহুর্ত (৬টা ১০) আমার শ্রদ্ধেয় বড়ভাই, মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওঃ মুহিউদ্দীন খান ঢাকার ল্যাবএইড হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগকরেন। (ইন্নালিল্লাহি...)।
আমরা জানি "বিসমিল্লা হিররাহমা নিররাহিম" এর মাঝে ১৯টি হরফ রয়েছে এবং পবিত্র কোরআনুল কারীমের মাঝে এই ১৯ সংখাটি গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
আমরা জানিনা আল্লাহর তাঁর পবিত্র কোরআনের এই খাদেম তফসীরে মা আরেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদককে পবিত্র রমযান মাসের ১৯ রমজানের ইফতারের সময়ে কবুল করে নেয়ার মাঝে কি হেকমত লুকায়িত, আমরা এটাকে ইতিবাচক হিসাবেই মনে করছি, দেশবাসীসহ সকল বন্ধুদের প্রতি নিবদন যে, আমার ভাইয়ের বিদেহী আত্বার মাগফিরাতের জন্যে মাওলার দরবারে একটু দোয়া করবেন। আল্রাহ যেন তাঁর এ বান্দকে জান্নাত নসীব করেন- আমীন।
মাওলানা লাবীব আবদুল্লাহ
কিছু ব্যথা, কিছু কষ্ট। ‘কখনো কখনো মানুষ মনের আঘাতের কারণে হাতে কলম ধরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিছু ব্যথা/ কষ্টের প্রকাশ মানুষ লেখনির মাধ্যমে বা কথায় প্রকাশ করতে পারে না। কিছু বিয়োগ ব্যথা এমন যার ক্ষত শুকানো অসম্ভব। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কর্ম বা অবদানের কাছে মানুষ চির ঋণী। পৃথিবীর কেউ তাদের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা রাখে না। আজ এমনই একজনের মৃত্যু হয়েছে। যিনি হলেন, মাওলানা মহিউদ্দীন খান সাহেব। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুক। আমিন।
মাওলানা আতিকুল্লাহ আতিক
আরেকটি নক্ষত্রের পতন! বাক্যটা একজন মুমিনের সাথে ঠিক যায় না বলেই মনে হয়! মৃত্যুর মাধ্যমে মুমিনের পতন হবে কেন? পতনের সাথে উপমাই বা কেন দেয়া হবে? মৃত্যুর কারণে মুমিনের তো প্রকৃতপক্ষে উত্থানই ঘটে! ভিন্নমতও থাকতে পারে! অথবা আমার চিন্তাও বদলে যেতে পারে!
আর মাওলানা মহিউদ্দীন খান রহ. মোটেও নক্ষত্রতুল্য নন, তার বিকিরণ সূর্যের মতো ছিল! যখন কেউ ছিল না ময়দানে! তিনি একাই তেপান্তর পাড়ি গিয়েছেন! ঝাণ্ডাকে বুলন্দ রেখেছেন!
মাওলানা খালেদ সানোয়ার
অনেক কষ্ঠ পেয়ে এগিয়ে যায় লাইফ সাপোর্ট। আমি আর রেজওয়ান যাই বারডেমের ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে। অতপর অনেক রাত হওয়ায় আর আপনাকে দেখলাম না্। আর যাব না গেন্ডারিয়া পার হয়ে। আপনি চলে যাওয়ায় নীরব হয়ে আছে ভাবের পৃথিবী। আপনার মদীনা আর কোন নতুন খবর বয়ে আনবে না। আপনিতো ছিলেন আলোক মশাল। জীবনের খেলাঘরে আমাদেরকে একা ফেলে গেলেন। বাহিরে প্রচন্ড ঢেউ সামলাই কিভাবে
মদীনার দিকে হৃদয় তীর্থ এই আমার ভরসা। ইফতারীর প্রতিটি লোকমায় কষ্ঠ হচ্ছিল। বার বার আপনার আতিথেয়তার কথা মনে পড়ছিলো
আপনার প্রস্থান বড়ই এক অপ্রস্তুত সময়ে। আপনি জান্নাতি নবীজির মায়াময় পরশ পেয়ে ।
গাজী মোহা্ম্মদ সানাউল্লাহ
আরও একজন কিংবদন্তি মনিষির বিদায়। চলে গেলেন মা'রিফুল কুরআনসহ অসংখ্য গ্রন্থের লেখক ও অনুবাদক, এদেশের অগণিত আলেম ও ইসলাম প্রিয় মানুষের অভিভাবক মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান রাহিমাহুল্লাহ...। এই রমজানেই আমরা হারিয়েছি খতিব ওবায়দুল হক, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও কাজী মুতাসিম বিল্লাহ এর মত রাহবারকে। বরকত পরশিত এ মানুষগুলো বরকতের মাসেই ফিরে যান রাব্বে কারীমের দরবারে।
ইমতিয়াজ আহমাদ
আমরা এতিম হলাম। আমরা আরোও একবার এতিম হলাম, হলাম মুরুব্বীহারা। আমি নির্বাক, কী বলব, ভাষা নেই। এভাবেই কী কোন যোগ্য কা-ারি না রেখে আমাদের মুরুব্বীরা সবাই চলে যাবেন?
সৈয়দ শামসুল হুদা
বাংলাদেশের সম্ভ্রান্ত এমন কোন মুসলিম পরিবার পাওয়া যাবে না যাদের ঘরে মদীনার একটি কপি পৌঁছেনি। আজ সন তারিখ মনে নেই। জীবনের প্রথম যে পত্রিকার সাথে পরিচয় সেটা হলো মাসিক মদীনা। মদীনা নামটি এত সুন্দরভাবে কচিমনে গেঁথে গিয়েছিল যে, যার দ্বিতীয় কোন নজির আমার কাছে নেই।
বাংলাদেশে ইসলামি পত্র-পত্রিকা প্রকাশের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, মহান পুরুষ, মহান সীরাত বিশেষজ্ঞ, অসংখ্য ইসলামী গ্রন্থের রচয়িতা, অনেক লেখকের পিতাসূলত অভিভাবক, মাআরেফুল কুরআনের ভাষ্যকার, বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চার অন্যতম আদর্শ, আন্তর্জাতিক মাহফিলসমূহে চিত্তাকর্ষক ঐতিহাসিক সাহসী আলোচক, বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির অন্যতম নেপথ্য কারিগর, এদেশের ইসলামি অঙ্গনই শুধু নয়, সমস্ত ডানপন্থী লেখকদের মুরুব্বি মাওলানা মহিউদ্দীন খান আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এভাবে সবাই একদিন চলে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় আর একজন মহিউদ্দীন খান আর জন্ম নিবে বলে হয় না।
তাঁর মতো প্রতিভাধিকারী, উঁচু ব্যক্তিত্বের লালনকারী, দূরদর্শী, ভাষাবিদ, লেখক, গবেষক, সংগঠক, আলোচক আর আমরা পাবো কি? তাঁর তুলনা তিনিই। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের উচুঁ মাকাম দান করুন।
তামিম রায়হান
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমার কৈশোরে আমি বারবার তার কাছে গিয়েছি। শিখেছি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের রমজান মাসে এক দুপুরে গিয়েছিলাম।তিনি তখন বিছানায় শোয়া। অসুস্থ এবং ক্লান্ত। কিন্তু কণ্ঠ ছিল সজীব এবং তাঁর ভেতরের জগত তখনও প্রাণবন্ত। আমার একটি বইয়ের জন্য তথ্যসংগ্রহে আমি গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ঘন্টা দুয়েক সময় দিলেন। আমার খুঁটিনাটি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেন। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলাম, রাজনীতিতে জড়িয়ে কী পেয়েছেন এই জীবনে? হাসিমুখে আঙুল গোল করে দেখিয়ে বলেছেন, গোলআলু পেয়েছি। জিজ্ঞেস করেছিলাম, সুস্থ হলে প্রথমে কী করতে চান? তিনি বলেছিলেন, জীবনের খেলাঘরের বাকি অংশটুকু লিখে যেতে চাই। আজ থেকে মহীরুহতুল্য এই প্রাজ্ঞজন নাম লেখালেন ইতিহাসের পাতায়। তার পরকাল শান্তিময় হোক মহান দয়াময়ের করুণাছায়ায়। যতদিন কুরআন আছে, কুরআনের তাফসির মাআরিফুল কুরআনের বাংলা অনুবাদ আছে, ততদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার এই মহান কর্মের মধ্য দিয়ে।
মাওলানা আলী আযম
সত্যিই আজ আকাশ কাঁদছে, বাতাস কাঁদছে, জীবজন্তু আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টি কাঁদছে, এককথায় পুরো ভুবন কাঁদছে! কাঁদবেই তো, কারণ তিনি সেই জীবনই গঠন করেছিলেন, যার জীবনী আজ আমাদের কাঁদাচ্ছে। অথচ তিনি হাসছেন, মহান রবের সান্নিধ্য লাভ করেছেন। তিনি নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন। এই পৃথিবী আজ ভালো মানুষের বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে দিনদিন।
ইফতেখার জামিল
যেদিন নবীজির ছেলে ইব্রাহীম রাঃ মারা যান, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা বলতে লাগলো, আকাশ মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া করছে। নবীজি বললেন, চন্দ্র সূর্য আল্লাহর নিদর্শন , কারো মৃত্যুতে এতে গ্রহণ হয়না। কোন বড় মানুষের মৃত্যুর পর বৃষ্টি হলে আকাশ কাঁদছে বলা, একই কারণে, অর্থহীন বিষয়। আমাদের এইসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। অতিরিক্ত সম্মান অনেক সময় ভুলের কারণ হয়।
সাইফ রাহমান
মুহিউদ্দীন খান রহঃ। একজন কিংবদন্তী। মাসিক মদিনার সম্পাদক। তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআনের সর্বপ্রথম অনুবাদক। বাংলা সাহিত্যের এক বিজয়ী পুরুষ। পথিকৃৎ মানুষ। বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন।
একাধারে সবগুলো গুণ-ই এই মানুষটির পাশে লাগালেও নিতান্তই কম হয়ে যাবে। একজন মহারথী হিসেবে যার নাম আজীবন মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় গেঁথে রইবে, সেই পুরোধা ব্যক্তিত্ব হলেন মুহিউদ্দীন খান রহঃ।
শুধু তিনি একজন আলেম নন, আলেম হওয়ার যত বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত, ঠিক ততটাই যেন তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিলো। আর রাজনীতি'র ক্ষেত্রে তিনি একজন বিচক্ষণ মানুষ হিসেবে ছিলেন সবার কাছে সমাদৃত।
তিনি চলে গেলেন। ছায়াও চলে গেল মাথার ওপর থেকে। জানিনা, এমন ছায়া আর পাবো কী না! অভিবাবকহারা হলাম আমরা। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতে আসীন করেন। আমীন
তানভির এনায়েত
খালি হয়ে গেছে যেই স্থান
সেই স্থান পুনপূর্ণ করাই
চাওয়া হবে কল্যাণ
তাঁর স্বপ্নের সন্তান
যুগে যুগে আরো জন্মিত হোক
মুহিউদ্দিন খান
আবুল কাসেম আদিল
ত্রিকালজীবী মানুষ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ— ঘটনাবহুল ও ঐতিহাসিক এই তিন সময়েরই সাক্ষী তিনি। নিজের এ বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের অভিজ্ঞতারই বয়ান "জীবনের খেলাঘরে"। বইটি পড়লে মাওলানা খানের জীবনই জানা হবে না, জানা হবে তাঁর দেখা এই তিন সময়ের সামাজিক চালচিত্র। সেই সময়কার শিক্ষা-দীক্ষা, মূল্যবোধ এবং তৎকালীন আর্থসামাজিক অবস্থার বিবরণ রয়েছে বইটিতে। স্বাভাবিক কারণেই বইটির ঐতিহাসিক মূল্য অসামান্য। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আজ ইন্তেকাল করলেন। তাঁর মহাজীবনের কিছু অংশ রেখে গেলেন তাঁর রচনাসম্ভারে; বিশেষতঃ তাঁর আত্মজীবনী "জীবনের খেলাঘরে"তে তিনি প্রত্যক্ষভাবে রয়েছেন।
চৌধুরী সাবেত
বাবা ফোন দিলেন, এই মাত্র বললেন, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব নেই। মাওলার সান্নিধ্যে চলে গেছেন। (আমি বাদ মাগরিব সংবাদ পেয়েছি।) অবাক হলাম! তিনি কেমন করে তাঁকে চিনলেন। বাবা তো জেনারেল শিক্ষিত! কোন আলেমকেই তেমন চিনেন না। আল্লামা শফী সাহেবকে চিনেন হেফাজতের আন্দোলনের কারণে।
কথার ফাঁকে বললেন, আমি উনার মাসিক মদীনার একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম। আমার উনার জানাজায় শরীক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল! কিন্তু ডুবাই থেকে এসে জানাজা পড়া সম্ভব হবে না। তুমি যেও। কথাগুলো শুনে আমি অশ্রুসিক্ত হলাম। বাবা আরো বললেন, এত্তো বড় একজন আলেম ইন্তেকাল করলেন, অথচ কোন চ্যানেলে দেখালো না! আমরা এখানকার বাংলাদেশি সহকর্মীরা অধীর আগ্রহে বসে ছিলাম। কোথায় জানাজা হবে এটা শুনার জন্য।
হায় আফসোস...!
কিবোর্ড টিপছি আর অশ্রু ঝরছে... মাওলার শান বুঝা বড় দায়। তুমি সপে দাও নিজেকে মাওলার ধ্যানে, মাওলাকে চিনো। বিশ্ব তোমায় চিনবে । আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হচ্ছে মাদরাসার ছাত্র হিশেবে।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর