কে আই ফেরদৌস; বৃটেন প্রতিনিধি : গতকাল শুক্রবার ছিলো 'নতুন' বৃটেনের প্রথম দিন। বৃটেনের কট্রর ইমেগ্র্যান্ট বিরোধী দল ইউকিপ (ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি) এর নেতা নাইজেল ফ্যারেজ এ দিনটিকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি করছেন গণমাধ্যমে।
আগের রাতে অনেক বৃটিশই উৎকণ্ঠা নিয়ে লাইভ দেখেছেন ভোট গণনা। যা জাতীয় নির্বাচনের সময়ও দেখা যায় না। শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বৃটেনের সর্বত্র আলোচনা পর্যবেক্ষণ। রাস্তায়, হাটে মাঠে রেস্টুরেন্টে একই বিষয়, ইইউ বিষয়ে গণভোগ! বিশেষ করে এই গণভোট নিয়ে বৃটিশ তরুণ প্রজন্মের মাঝে আগ্রহ, আলোচনা চোখে পড়ার মতো। সাধারণত বৃটেনের যেকোন জাতীয় নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের তেমন একটা আগ্রহ থাকে না। ইউরোপে থাকা না থাকার এই গনভোটকে ঘিরে স্পষ্টভাবেই বৃটেনের জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। কারো মুখে খুশির ঝলক, কারো মুখে কপালে চাপ। এক রাতেই বৃটেনের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতনে পাউন্ডের দাম ইতিহাসের সর্বনিম্নে পৌঁছে গেছে! যা দেখে বৃটিশদের একটি অংশ আশঙ্কা করছেন আবারও বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বৃটেন। যে মন্দা থেকে উঠতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
অন্যদিকে ইউরোপ ছাড়ার পক্ষের অংশটি মনে করছেন, কিছুদিনের ভেতরেই এই মন্দা কাটিয়ে উঠবে ইউরোপমুক্ত বৃটেন। তারা মনে করেন ইউরোপমুক্ত হওয়ার ফলে বৃটেন তার বর্ডার কন্ট্রোল ফিরে পাবে, চাকুরি, কর্মসংস্থানের অভাব দূর হবে। বেকারত্বে সমস্যা কাটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে যুক্তরাজ্য। তাছাড়া বৃটেনে অবাধে ইমেগ্র্যান্টদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইউরোপ ছাড়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই দলটি।
অন্যদিকে বৃটিশ এশিয়ানদের মাঝেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। গতকাল জুম'আ নামাজের পর মাসজিদগুলোর বাইরে জটলা বেঁধে বেঁধে বেশ আলোচনা তর্কবিতর্ক করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের মাঝে। লুটন শহরের মুহাম্মদ সালেহ খুবই আক্ষেপের সাথে বলেন, ‘গতকাল পাউন্ডের রেট ছিলো একশ সতেরো টাকা, আজ নেমে গেছে একশ সাত টাকায়! বেশ কয়েক লাখ টাকা দেশে পাঠাতে হবে। কিন্তু রেট কমে যাওয়ায় লাখ প্রতি আমাকে দশ পনেরো হাজার লস গুনতে হবে ‘ এতো কষ্টের টাকা এভাবে লস হবে ভেবে খুব আফসুস করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ইউরোপ ছাড়াটা খুবই ভুল একটা সিদ্বান্ত হয়েছে। আমাদের শিক্ষা ফান্ডেও এর মারাত্বক প্রভাব পড়বে।’ অন্যদিকে চাকরিজীবি বৃটিশ বাঙালি মিস্টার আহমেদ বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে বলেন, ‘ইউরোপ ছাড়ার ফলে বৃটেন আরও স্ট্রং হবে বলে আমার বিশ্বাস। বড় লোক, ব্যাবসায়ীদের জন্য ইউরোপ ছাড়া তাদের জন্য কিছুটা ক্ষতি হলেও আমরা সাধারণ জনতা, চাকরিজীবীদের জন্য খুবই ইতিবাচক। অবাধে ইউরোপীয় মানুষ এসে চাকরি ক্ষেত্রের একটা বড় অংশ দখল করে বসে আছে। যার ফলে আমরা স্থানীয় বৃটিশ নাগরিকদের চাকরি পেতে কষ্ঠ হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বৃটেনে চরম চাকরি সংকট দেখা দিয়েছে। বেকারত্বের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।’ এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই ইউরোপমুক্ত বৃটেন জরুরি।
সব মিলিয়ে এই গনভোটের ফকাফল নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা চলছেই বৃটেনজুড়ে। তবে ইউরোপমুক্ত বৃটেনের প্রকৃত চেহারা দেখতে হলে কম পক্ষে আরও দু'বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী কোন দেশ বের হতে চাইলে সিদ্বান্ত জানানোর দুই বছর পর বের হতে হয়।
লেখক : শিক্ষক, এমকেজেএম ইভনিং মাদরাসা, মিলটন কিন্স, ইংল্যান্ড।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর