চিন্তিত চিন্তাফা: নাদিয়া হোসেইন হিজাবী একজন টিপিক্যাল লুকিং বাংলাদেশী মেয়ে। গ্রেইট ব্রিটিশ বেইক অফে যেটি ওভেনে বেইকিং এর মাধ্যমে নানা ডেজার্ট – খাবারের শেষে মিস্টান্ন নামে পরিচিত জিনিস রান্নার প্রতিযোগীতা ছিল তাতে, প্রথম হয়ে ব্রিটেইনে রীতিমত সেলেব্রিটি বনে গেছেন। তিনি ব্রিটেইনের রাণীর জন্য কেইক তৈরীও করেছেন। নরম্যালি বন্যায় টিনের চালার উপর দুর্গতরা বসে আছে এমন খবর কিংবা সম্প্রতি জঙ্গি হামলার খবর ছাড়া ব্রিটিশ খবরে বাংলাদেশের নাম পজিটিভ নিউজে এসেছে, আমাদের সবার তৃপ্তির ঢেকুর তোলা উচিত। যাহোক উনি সম্প্রতি ইন্টারভিউতে কিছু কথা বলেছেন, যার সারমর্ম হচ্ছে, বাংলাদেশে ডেজার্টের প্রচলন নাই। ব্যস বাঙ্গালীদের জাত চেনানো শুরু হয়ে গেছে। নাদিয়া হোসেইন সিলেটের গ্রাম থেকে আসছে, আর বাকি আমরা সবাই ছুড়ি আর কাটা চামচে ভাত খাই, আর সে সময় আমাদের পাইক পেয়াদারা আমাদের বাতাস করেন এইটা প্রমাণ করার জন্য সবাই উইঠা পড়ে লাগছে।
পাশ্চাত্যের থ্রি-কোর্স মিলের প্রচলন বাংলাদেশে নাই। আমরা কোন জায়গায় দাওয়াতে গেলে গলা পর্যন্ত পোলাও মাংস গিলি, বেশীরভাগ সময়ে খাওয়ার পরে মিস্টান্নের জায়গা থাকেনা। অ্যাপেটাইজার বা স্টার্টার যদি থাকেও সেটা খাবারের অনেক আগে নাস্তা হিসেবে দেয়া হয়। সেটাও কোন বাসায় গেলে আমরা অনেক সময় গলা পর্যন্তই গিলি। আমাদের মায়েরা প্রায়ই ধমক দিয়ে বলেন, ভাত খেতে পারবানা কিন্তু পরে। যাহোক পাশ্চাত্যের প্রপার ডাইনিং এরকম না। রেস্টুরেন্টেও মানুষ থ্রি-কোর্স অর্ডার দেয়। প্রথমে হালকা কিছু দিয়ে স্টার্টার, এরপর একটা ভারী ডিশ বা মেইন কোর্স এবং সর্বশেষে হালকা কোন মিস্টি আইটেম দিয়ে ডেজার্ট। এটা অনেকে বাসায়ও মেইনটেইন করে, আর আমরা সোজা ভাতে চলে যাই, ভাজি দিয়ে শুরু তারপর ডাল দিয়ে খেয়ে বিশাল ঢেকুর। বাসায় কখনও খাওয়ার পর পায়েশ খেয়েছি মনে পড়েনা।
একবার পাশ্চাত্যের এক পশ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভিজ্ঞতা বলি। প্রথমে স্টার্টার হিসেবে অর্ডার দিয়েছিলাম স্যুপ। বাটির তলানীতে কতখানি স্যুপ এনে দিয়েছে। আম্মু আর আমি পরিমাণ দেখেতো হাসতে হাসতে শেষ। আমরা চাইনিজে গেলে দুই বাটি ভর্তি করে স্যুপ খাই, বাটি থেকে কে আগে চিংড়ী আর মাংসগুলো ছেকে নিবে তার প্রতিযোগীতা চলতে থাকে, শেষে বাটি নিয়ে যাওয়ার আগে একজন বলে, এই কেউ আর নিবা, নাইলে আমি ঢেলে নিলাম। যাহোক, মেইন কোর্সেই তারপর খাওয়া শেষ। যাহোক আব্বু অর্ডার দিয়েছিল সালাদ। লিটারেলি কতগুলা পাতার উপর তেল দিয়ে এনে দিয়েছে। দেখলাম কাটা চামচ দিয়ে বেশ কায়দা করে খাচ্ছেন। আমি আর আম্মু হেসেই গেলাম। যাহোক শেষে যে ডেজার্ট দিবে, বাটির মধ্যে ডিজাইন দেখেই চোখ জুড়ায় যাবে, আমাদের বাঙ্গালী মুখে লাগতে না লাগতেই শেষ। কিছুতেই ঢেকুর তোলা যাবেনা। ঢেকুরকে বিদেশে খুব রুড হিসেবে দেখা হয়।
জ্বী আমরা বাংলাদেশী। আমাদের রীতিনীতি আলাদা। আমরা হাত দিয়ে খাই, পেট পুড়ে খাই। প্লেট ভর্তি করে খাই। আমাদের ৮০% লোক গ্রামে থাকে তারা মাটিতে বসে খায়। সত্য প্রকাশ করে নাদিয়া হোসেইন এখন বিরাগভাজন হয়েছেন। বিদেশীদের কাছে আমাদের ইজ্জত চলে গেছে। কারণ আমাদের অনেক ইজ্জত আদারওয়াইজ বিদেশীদের কাছে। হায়রে বাঙ্গালী চেতনা!!!
আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ