মোস্তফা ওয়াদুদ : মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সব সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন শ্রেষ্ঠ করে। মানুষ পৃথিবীর সব মাখলুকাতের ওপরে ক্ষমতাবান। সৃষ্টিজীবকে মানুষের খেদমতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য কেয়ামতের দিন শুধু মানুষ ও জিন জাতির হিসাব হবে। অন্য কোনো প্রাণীর হিসাব হবে না। মানুষের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নেয়া হবে। হাদিসে আছে, 'কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে কোনো মানুষ এক কদমও নড়তে পারবে না।' (বোখারি, মুসলিম)।
আল্লাহর সেরা মাখলুক মানুষ আরও মূল্যবান ও দামি হতে পারবে যখন তার জীবনের প্রতিটি কর্মই সুন্নত হিসেবে পালনীয় হবে। প্রতিটি মুহূর্তে সুন্নতের অনুসরণ করবে। সুন্নত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে। আর মূলত সুন্নতের অনুকরণেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি, সফলতা, কামিয়াবি, নাজাত ও মুক্তি। জগতে যে যত বেশি সফলতা লাভ করেছে সে সুন্নতের পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমেই সফলতা লাভ করেছে। সফলতা অর্জনের মাপকাঠি হলো, সুন্নতে নববির মতো ও তাঁর দেখানো আদর্শ পথ। রাসুল (সা.) এর আনুগত্যের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করো।' (সূরা নিসা : ৫৯)। আবার সূরা আহজাবের ২০নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'তোমাদের জন্য রাসুল (সা.) এর মাঝেই
রয়েছে উত্তম আদর্শ।'
নবীজির প্রতিটি কাজই আমাদের জন্য আদর্শ। নবীজির প্রতিটি কথা আমাদের পালনীয়। নবীজির প্রতিটি কর্ম আমাদের অনুসরণীয়। নবীজি (সা.) যখন রাস্তায় হাঁটতেন, ডানপাশ দিয়ে হাঁটতেন। অথচ নবীজির সুন্নতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আজকে বিভিন্ন পার্কের দেয়ালে লেখা দেখা যায়, 'রাস্তার বামে হাঁটুন।' এটা কখনোই উচিত নয়। রাসুল (সা.) খাবার খাওয়ার সময় দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খেতেন। পানি খেতেন তো দোয়া পড়ে। আর এখন আমরা ডাইনিং টেবিলে খাবার খাই। টেবিলের ওপর দস্তরখান থাকে না। ঝুটা রাখার পাত্র থাকে না। আমরা ইহুদি-খ্রিস্টানদের মতো খাবার খাই। আমাদের চরিত্র নাসারাদের চরিত্রের সঙ্গে মিলে গেছে। নাসারারা রাস্তার বাঁয়ে হাঁটে। খাবার খায় দস্তরখান ছাড়া। আমরাও তাই করছি। তবে আলহামদুলিল্লাহ! কিছু কিছু পরিবারে ডাইনিং টেবিলের ওপরে দস্তরখান রাখে। এটা ভালো লক্ষণ। আবার অনেকে আছে নবীজির সুন্নত মেনে রাস্তার
ডানে হাঁটে। ইসলাম ধর্মের নিজস্ব শিয়ার রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি। নাসারাদের নীতির সঙ্গে ইসলামের নীতি মিলতে পারে না। তাই আমাদের রাসুলের সুন্নত মোতাবেক ইসলামের রীতিনীতি ও সুন্দর আদর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। আমরা যদি দুনিয়াতে নাসারাদের অনুসরণ করি তবে কেয়ামতের দিন নাসারাদের সঙ্গেই আমাদের হাশর হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুসরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।' (তিরমিজি)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'যখন আমার উম্মত বিশৃঙ্খলায় ডুবে থাকবে তখন কেউ মৃত সুন্নতকে জিন্দা করলে সে একশ' শহীদের সওয়াব পাবে।' (মিশকাত)। তাই আসুন আমরা সুন্নতের ওপর জীবন পরিচালনা করি। আমাদের ঘরে আজকাল বিভিন্ন মূর্তির ছবি দেখা যায়। ঘরের চারপাশের দেয়ালে ছবির সমাহার। যেন কোনো স্টুডিও। এসব ছবির কারণে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না। নবী করিম (সা.) বলেন, 'যে ঘরে মূর্তি বা কুকুরের ছবি থাকে তাতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।' (মুসলিম)। নবীজির সুন্নতের অনুসরণ না করার ব্যাপারে নবীজি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, 'যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।' (বোখারি, মুসলিম)