জিয়া হাসান : উৎসবের প্রতি আমাদের একটা মোহ আছে। এই জন্যে নবান্নের উৎসব, ইদ উৎসব,পিঠা উৎসবের দেখা দেখি, এখন ট্যাক্স ম্যান ভ্যাটম্যানেরা কর উৎসব , মোবাইল কোম্পানিরা সিম বিক্রয় উৎসব, ব্যাংক গুলো লোণ উৎসব, কন্সট্রাকশান ইন্ডাস্ট্রি ফ্ল্যাট বিক্রয় উৎসব করে। বেনিয়ারা এখন বাঙ্গালির উৎসবের প্রতি মোহ টাকে বুঝে গ্যাছে।
সেই উৎসবের তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে ভারতীয় ভিসা উৎসব। এই ভিসা উৎসবে নাকি এইবারের ঈদে ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মানুষকে ভিসা প্রদান করা হবে।
যেই ভারত কাটাতার দিয়ে সারা দেশকে ঘিরে রাখতে চায় সেই ভারত হঠাৎ ঈদের সময়ে ভিসা উৎসব করে, ১ লক্ষ পর্যটককে নিয়ে যেতে চায় কেন?
সেইটা বুঝতে হইলে, উৎসবের অর্থনীতি, বিশেষত ঈদ উৎসবের অর্থনীতিটা বুঝতে হবে।
রিটেল মার্কেটের খবর যদি নেন, তাহলে দেখবেন, অনেক মার্কেটে দোকানিরা সারা বছর তাদের দোকানের ওভারহেড কস্ট টাই উঠাতে পারছেনা । উনারা সারা বছর ধরে, ঈদের অপেক্ষায় থাকেন। এবং অনেক শপে রমজানের এই এক মাসে যে সেল হয়, সেই সেল সারা বছরের সমান।
রোজার সময়ে, অধিকাংশ অফিস বোনাস দেয়া হয়। এবং এই বোনাসের পুরো টাকাটা পরিবারের কর্তারা , পরিবারের সদস্যদের জন্যে কাপড় বা অন্য কোন পন্যে ক্রয়ে ব্যয় করেন।
এইটা দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্ছার করে। উৎপাদক, হোলসেলার, রিটেলার ,কর্মচারী সবাইকে বাড়তি অর্থ যোগের সুযোগ করে দেয়।
এই বাড়তি অর্থ আবার তারা কোন পন্য ক্রয়ে ব্যয় করেন। এই ভাবে সাইক্লিক ভাবে, উৎসবের অর্থ অর্থনীতিতে প্রান সঞ্ছার করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটা ভয়াবহ দুর্যোগ পিরিয়ড পার হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান ভয়াবহ ভাবে কমে গ্যাছে। পোশাক শিল্প, উচ্চ শিক্ষা, হসপিটাল বা আরো কিছু সারভিস শিল্প, প্যাকেজিং এবং সরকারী লুটপাটের সাথে জড়িত লোক জন বাদে দেশের অধিকাংশের অবস্থা খুবই করুন। মধ্যবিত্তের সঞ্ছয় সংকুচিত হচ্ছে।
গত দিন একজন বন্ধুর ওয়ালে একজন ব্যবসায়ী তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য করেছিলেন, এই বছর, কিছু কিছু অঞ্ছলে উৎপাদন সিজনে দৈনিক মজুরের বেতন ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে যা অন্যান্য বছর গুলোতে ৫০০ টাকা ছিল।
কিন্ত, সারভিস সেক্টর, গার্মেন্টস এবং সরকারী লুটের সাথে জড়িত যারা ভালো আছে তারা উন্নতি করছেন, তাদের ক্যাপিটাল একুমুলেশান হচ্ছে। তাদের উন্নয়ন দেখায়, দেশের উন্নয়ন দেখানো যাইতেছে।
এই গ্রুপটার হাতে যে টাকা আছে, সেই টাকা ঈদে পন্য ক্রয়ের অর্থনীতিতে যোগ হলে, সেইটা কিছু হলেও প্রান সঞ্ছার করবে।
কিনত, এই গ্রুপ থেকে ক্রিম ডি লা ক্রিম এক লক্ষ লোক যদি ইন্ডিয়াতে গিয়ে বাজার করে, সেইটা ইন্ডিয়ার অর্থনীতিতে যোগ হবে, দেশের রিটেল মার খাবে। এই গ্রুপ টাই ভারতের ঈদের সময়ে ভিসার উৎসবের টার্গেট। এই জন্যে ভারত ঈদের সময়ে ভিসা উতসব করে, এই ক্রিম ডিলা ক্রিম থেকে এক লক্ষ লোককে নিয়ে যেতে চায়।
এইটা ভারতের অপরাধ না। ভারত তার নিজের ইন্টেরেস্ট দেখবে।
কিনত, ভিসাকে একটা উৎসবের নামে ক্যাম্প খুলে, পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিতরন করার যে এগ্রেসিভ বানিজ্য আছে সেইটা যে কোন সরকারের বোঝা উচিত এবং সেইটায় তাদের আপত্তি তোলা উচিত।
নিজের দেশের অর্থনীতির বেসিক ইন্টেরেস্ট যে সরকার বোঝে না-তাকে দায়ী করতেই হবে।
আমার ভারতকে নিয়ে আপত্তি একটা জায়গায়। অর্থনীতি, রাজনীতি, সরকার, ব্যবসা, রিটেল মার্কেট, আইটি সেক্টর, চাকুরীর বাজার, চিকিৎসা, সংস্কৃতি, মাদক, খনিজ সম্পদ ,বিদ্যুৎের উৎপাদন, বিতরন সবই যখন দখল করে নিলো তখন তারা পূর্ব বাংলাকে অধিগ্রহন করে নিলেই পারে।
বাউন্ডারি দিয়ে বেধে রেখে ভিসা দিয়ে পাঠানোর দরকার কি?
লেখক : অনলাইন এক্টিভিস্ট
/আরআর