আমিন আশরাফ : মামুলাতে আশরাফিয়াতে আছে, রমজানের তারাবিতে অধিকাংশ সময় তিনি নিজেই কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে তিনি তারাবি পড়ানো কখনো বাদ দিতেন না। ১২ রমজান পর্যন্ত সোয়াপারা করে এবং পরে প্রতিদিন একপারা করে তেলাওয়াত করতেন।
প্রায় বছরেই ২৭ রমজান তারাবি শেষ করতেন। হযরতের তেলাওয়াতের মধ্য কী গভীর মাধুর্যতা ছিল তা নিজকানে যারা শুনেনি, তাদেরকে কখনো বলে বুঝানো যাবে না।
ওয়াক্তিয়া নামাজের মতো তারাবির নামাজও তিনি ধীরে সুস্থে পড়াতেন। প্রয়োজনে দ্রুত পড়লেও শব্দের উচ্চারণ আস্তে আস্তে পড়ার মতো পড়তেন। তিনি তিলাওয়াত করার সময় ওয়াকফ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রতি যেভাবে খেয়াল রাখতেন অন্যদের মাঝে তার নজীর পাওয়া যেত না। তার স্মরণ শক্তি এতই প্রখর ছিল যে, তার খুবই কম এক আয়াতের সঙ্গে অন্য আয়াতের প্যাচ লাগতো মানে মুশাব্বাহ হতো।
কুরআন তেলাওয়াতের সঙ্গে তার স্বভাবজাত সম্পর্ক ছিল। কুরআনের প্রথম আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি লাইন তার চোখের সামনে ভাসতে থাকতো। কানুপুরে থাকাকালীন তারাবিতে লোকজন এতো বেশি আসতো যে, জায়গা পাওয়ার জন্য মাগরিবের পর পরই মসজিদে চলে আসতে হতো। আর এতো বড় জামাতে সিজদার আয়াতের সেজদা আদায় করা খুব মুশকিল হয়ে যেত।
এমনকি অনেকের নামাজও নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হতো। এজন্য এক বছর থানভি রহ. এ মাসআলার উপর আমল করলেন যে, সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করার সঙ্গে সঙ্গে যদি রুকুতে চলে যাওয়া হয় এবং তাতে যদি তিলওয়াতে সিজদার নিয়ত করা হয় তাহলে সিজদা আদায় হয়ে যায়। আশ্চর্যের কথা হলো, এতদ্বসত্ত্বেও নামাজের রাকাতসমূহ ছোট বড় হতো না। সব সময় একই রকম থাকতো।
তিনি সাধারণত মাদরাসায় মেহমানদের সঙ্গে ইফতার করতেন। তারপর হাত ধুতেন, কুলি করতেন। এরপর ধীরে সুস্থে, মাগরিবের নামাজের জন্য দাঁড়াতেন। আজান ও জামাতের মাঝে এতোটুকু ব্যবধান হতো যে, একজন মানুষ ধীরে সুস্থে উজু করে তাকবিরে উলার সঙ্গে মাগরিবের জামাতে শরীক হতো।
মাগরিবের পর আনুসাঙ্গিক আমল শেষ করে খাবার খেতেন। ইশার সময় হলে আস্তে আস্তে তারাবি পড়া শুরু করতেন। তারাবির চার রাকাত পর পর বিভিন্ন দুআ-দুরুদ পড়তেন। অন্যান্য নামাজের মতো খুবই ধীর-স্থিরভাবে রুকু সিজাদ করতেন। তাহাজ্জুদেও অধিকাংশ সময় আস্তে আস্তে কিরাত পড়তেন। তবে মাঝে মাঝে জোরেও পড়তেন।
তিনি যখন ইতেকাফ করতেন, তখন তাহাজ্জুদের সময় দুচার জন তার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে যেত। তিনি তাদের কাউকে নিষেধ করতেন না। তবে জামাতের সঙ্গে তাহাজ্জুদ পড়ার কোনো ব্যবস্থা করা হতো না। একবারও এমন দেখা গেছে, ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় মাত্র দুই রাকাতে তিলাওয়াতের নির্ধারিত পরিমাণ আদায় করার পর বললেন, তোমরা সাহরি খেয়ে নাও। সাহরির শেষে সময় পেলে নিজে নিজে তাহাজ্জুদ পড়ে নিও।
তাহাজ্জুদের পর কিছুক্ষণ আরাম করে ফজরের প্রস্তুতি নিতেন। দিনরাতের আমল ঠিক ঠিক মতই করে যেতেন। তিনি রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন আবার কখনো শেষ তিনদিনও ইতেকাফ করতেন। এ সময় যেন সর্বত্র আলো ফোয়ারা বইতো। ইতেকাফের মধ্যে লেখালেখির কাজও করতেন। ‘কসদুস সাবিল’ গ্রন্থটি তিনি মাত্র আটদিনে ইতেকাফ অবস্থায় লিখে শেষ করেন।
সে সময় তিনি কসদুস সাবিলের সঙ্গে আল ফুতুহু ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিররুহি নামক কিতাবটিও লিখেন।{তিনিসহ আকাবিরদের রমজান পালন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন আকাবির কা রমজান কিতাবটি} [মামুলাতে আশরাফিয়া]
আরআর