সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

মাহে রমজান সাম্যমৈত্রীর অনন্য মাধ্যম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ramadan-guide copyআমিনুল ইসলাম হুসাইনী : পশ্চিম আকাশে এক চিলতে বাঁকা চাঁদের হাসিতে বিশ্ব মুসলিম আজ পুণ্যের আলোয় উদ্ভাসিত। তৎপর পুণ্যময় ব্যস্ততায়। কেননা এ যে মাহে রমজানের চাঁদ। আর মাহে রমজান মানেই পুণ্যের বসন্তকাল।

রমজান মাস, কল্যাণ, ক্ষমা আর মুক্তির মাস। আত্মসংযম আর আত্নশুদ্ধির মাস। এ মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এ মাস সম্পর্কে রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমান যে অন্য মাসে একটি ফরয আদায় করল।’ ( মিশকাত শরীফ, ১৮৬৮)
মাহে রমজানের রহমতের দশ দিন বিদায় নিয়ে শুরু হয়েছে মাগফিরাতের দশ দিন। এভাবে বিদায় নেবে মাগফিরাত আর নাজাতের দশ দিনও। কিন্তু আমরা মাহে রমজানের ফয়েজ কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি?

প্রতিবছর রমজান আসে মুমিনের হৃদয় মিনারে প্রোজ্জ্বল প্রদীপ হয়ে। রমজান আসে সাম্য-মৈত্রী গড়ে তোলার দ্বীপ্ত শপথ নিয়ে। কবি রমজানকে বরণ করেন নিখিলের চির কল্যাণ হিসেবে, ‘তোমারে সালাম করি নিখিলের হে চির কল্যাণ/ জান্নাতের পুণ্য অবদান।'

রমজান মাস শুদ্ধ হওয়ার মাস। প্রতি বছর রমজান আসে রমজান যায়, কিন্তু আমরা কি শুদ্ধ হতে পারি? রমজান মাস আত্নসংযমের মাস, কিন্তু আমরা কি আত্নসংযমী হতে পেরেছি? রমজান মাস সৌহার্দ-সম্প্রীতি, পরোপকার, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মাস, কিন্তু আমরা কি নিজেদের মাঝে এ গুণগুলো অর্জন করতে পারি? বরং রমজানকে কেন্দ্র করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারেই আমরা ব্যস্ত থাকি।

প্রতিবছর রমজান এলেই এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য-দ্রব্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। যে কারনে দ্রব্য-মূল্যের উর্ধগতি লাগামহীন হয়ে পড়ে। অথচ এভাবে বাড়তি মুনাফা লাভের জন্য পণ্য মজুদ রেখে অর্থ উপার্জন করা সম্পূর্ণ হারাম। হাদীসে এসেছে, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করে সে অপরাধী। আর জেনে রাখো, সে গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।’ -সহিহ মুসলিম ১৬০৫ অন্য হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করবে সে রিজিক প্রাপ্ত হবে, আর যে ব্যক্তি গুদামজাত করবে সে অভিশপ্ত হবে।’ -ইবনে মাজাহ ২১৪৪

অপরদিকে সমাজের বিত্তবানরা রসজানে খাবারের ক্ষেত্রে অসংযমী হয়ে পড়েন। ইফতার সেহরীতে ১০-২০ পদ খাবার নিয়ে বসেন। যতটুকু খান তার চেয়ে বেশি অপচয় করেন। অথচ এভাবে অপচয় জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর; এবং কোনো অবস্থায়ই অপচয় করো না। আল্লাহ তা'আলা অপচয় কারীকে কখনো পছন্দ করেন না।’ -সুরা : আরাফ ৩১

আত্নসংযম আর আত্নশুদ্ধির মহান বার্তা নিয়ে পবিত্র রমজান এখন আমাদের মাঝে উপস্থিত। নিজেদের গঠন করার এখনই সুবর্ণ সুযোগ। তাই আসুন! অন্তত এই রমজানে দরিদ্রদের নিয়ে ভাবি, তাদের পাশে দাঁড়াই। মানবতার ধর্ম ইসলাম সাম্য-মৈত্রীর যে মহান শিক্ষা দিয়েছে তার বাস্তবায়ন করি

কেউ খাবার অপচয় করবে আর কেউ খেতেই পাবে না এমনটা ইসলাম সমর্থন করে না। কেউ পুণ্য সংযম মৈত্রী সৌহার্দ-সম্প্রীতি জঘন্য ধন-রত্ন আর ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যে আত্মহারা হবে, আর কেউ দারিদ্রের যাতনায় জর্জরিত হবে এমনটা তো ইসলাম কখনোই পছন্দ করে না। ইসলাম বলে, প্রত্যেক ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সম্পদে গরীবদের প্রাপ্য রয়েছে। ইসলাম বলে, তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর অপরের জন্যও তাই পছন্দ কর।

মাহে রমজানের রোযা এ উপলব্ধিই যোগায় যে যারা দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পায় না তাদের ক্ষুধার জ্বালা কতটা কষ্টের! পবিত্র রমজান অভাবহীনদের শিক্ষা দেয় সমাজের দারিদ্র, পীড়িত, ক্ষুধাতুরদের অবস্থা অনুধাবন করে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে। তাদের সাথে সহানুভূতি ও মমত্ববোধের সেতুবন্ধন তৈরি করতে। তাই বলা যায়, মাহে রমজান সাম্য-মৈত্রীর অনন্য মাধ্যম।

এই পৃথিবীতে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনে পরকালের সুখময় জীবন লাভ করা। আর মানবসেবা বা পরোপকার হচ্ছে মহামহিমের সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ উপায়। কবি শেখ সাদী রহ. যেন সে কথাই তাঁর কবিতার ছন্দে তুলে ধরেন,
'সেজদা ও তসবিহ দেখে
খোদ এলাহি ভুলবে না,
মানব সেবার চাবি ছাড়া
স্বর্গ দ্বারও খুলবে না।'

এই মানবসেবা বা পরোপকার শুধুমাত্র পরের জন্যই নয়, বরং তা নিজেরও অনেক কল্যাণ সাধন করে। রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, ‘অবশ্যই একজন মুসলমানের সদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে, অপমৃত্যু থেকে বাঁচায়। তার থেকে অহংকার ও অহমিকা দূর করে।’ -মুজামুল কাবীর ১৩৫০৮

আসুন না আমরা শুধুমাত্র নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত না থেকে আমাদের পাশের বাড়ির যে লোকগুলো না খেয়ে পড়ে আছে তাদেরকে নিয়েও একটু ভাবি। তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াই। এটাই হোক পবিত্র এই রমজানে আমদের মিশন। মহামহিমের পাক দরবারে এই প্রার্থনাই করি, পবিত্র রমজান আমাদের জন্য বয়ে আনুক শান্তি-সুখের বার্তা। কল্যাণময় হয়ে উঠুক আমাদের সবার জীবন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, আদ্রা জামে মসজিদ। কসবা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া

 

আওয়ার ইসলাম ২৪ ডটকম / এফএফ

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ