যুবাইর ইসহাক : বাবা তুমি এখন খাও কেন?
মেয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আগের মতো নিচ দিকে মাথা দিয়ে ভাত খেতে থাকেন শরীফ আহমেদ। আর সে কী উত্তর দিবে। রমজান মাসে এই দিন দুপুরে খাবার খাচ্ছেন এর উত্তরই বা কী হতে পারে।
শরীফ আহমেদ একজন ব্যবসায়ী। শহরের কয়েকটা কম্পানির মালিক। তবে তিনি ধর্মের ধার ধারেন না। কোন ওয়াক্তিয়া নামাজও পড়েন না।শুধু মাঝে মধ্যে ঈদের নামাজে দেখা যায়। তাছাড়া ইসলামের অন্যান্য বিধানও অাদায় করে না। এমনকি রমজানের রোজা পর্যন্তও।
অন্যান্য মাসের মতো এ মাসেও মদপান করে সেহরির আগে বাসায় ফিরেন। তাকে দেওয়ার কেউ নেই। দোয়া ছাড়া স্ত্রী শাহেদা টু শব্দটিও করতে পারেন না। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে অনেক দিন শাহেদাকে মারপিট করেছে। কথায় কথায় ঝগড়া, বকাবকি তো আছেই। রোজা ছাড়ার অপরাধ গুরতর এ কথা কে তাকে বুঝাবে।
ইসলামে রোজা ভঙ্গকারীর অনেক ভয়াবহ শাস্তির নির্দেশ এসেছে। রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের একটি রোজা ভাঙ্গল, সে যদি সারা বছর রোজা রাখে তারপরও রমজানের এক রোজার সমান হবে না। তাছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারীর কাফ্ফারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্ব নিম্ন কাফ্ফারা হচ্ছে, একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখা।
রোজার অনেক ফজিলতও আছে, রাসুল সা. বলেছেন, রোজাদারের মুখের দূর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকে আম্বরের চেয়ে পছন্দনীয়। আল্লাহ বলেন, রোজা কেবল আমার জন্য, আমি তার প্রতিদান দেবো।
রিমি তাদের একমাত্র মেয়ে। শাহেদার সঙ্গে বিয়ের আট বছর পর তাদের কোলে রিমি আসে। এর ভেতরে কোনো সন্তান হয়নি। তাই শরীফ মেয়েকে খুব ভালোবাসে। বর্তমানে রিমির বয়স ১০ বা ১২ হবে। স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। একটু একটু করে সবকিছু বুঝে। মায়ের রোজা রাখা আর বাবার না রাখায় তাকে বেশ চিন্থিত করে।
শরীফ আহমেদ রমজানেরর রোজা না রাখলেও শাহেদা পুরোই বিপরীত। কখন রোজা ভাঙ্গেন না। বরং সময় মতো সব ওয়াক্তের সালাত আদায় করেন। শাহেদা স্বামীকে বুঝিয়ে ব্যর্থ হন। বরং দিনের বেলা অন্যান্য দিনের মতো শাহেদাকে রেঁধেও দিতে হয়। তা না হলে তার উপর চলে অত্যাচার। তাই বাধ্য হয়ে শাহেদা রাঁধে।আড়ালে চোখ মুছে।
বাবা তুমি রোজা রাখ না কেন? সেঁজুতির বাবা তো রোজা রাখেন। মেয়ের ২য় বার প্রশ্নে শরীফ আহমেদ বেশ লজ্জিত হয়ে গেল।
শাহেদা একটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছ না কেন?
শরীফ আহমেদের মুখ লজ্জাল লাল হয়। খাবার প্লেট রেখে উঠে যায়। মনে মনে ভাবে আর কখনও মেয়ের সামনে খাবে না।
পরদিন সেহরির সময় রিমি তার মায়ের সঙ্গে উঠে। বাবা তখনও ঘুমে। রিমি মাকে প্রশ্ন করে, বাবা কী সেহরি খাবে না? মা বলে, তোর বাবা রোজা রাখবে না, তাই সেহরিও খাবে না।
কিন্তু রিমির কষ্ট হয়। সে বাবাকে ডাকে। মেয়ের ডাকে শরীফ আহমেদ ঘুম থেকে উঠেন। দ্বিতীয়বারের মতো লজ্জায় তার মুখ লাল হয়। তিনি সেহরি খেতে বসেন। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, কখনো রোজা ভাঙ্গবেন না।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর / আরআর