আতিকুল্লাহ আতিক : সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর, গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছেন। একান্তে নিরিবিলিতে বাকী সময়টুকু কাটাবেন, এমনটাই ইচ্ছে। চাকরিকালে তার কাজ ছিল প্রশিক্ষণ দেয়া। এখন চাকরিশেষেও অভ্যেসটুকু ছাড়তে পারলেন না।
-
বাড়ির উত্তর পাশে বড়সড় একটা জায়গা খালি পড়ে আছে। গ্রামের যুবকদের নিয়ে সেখানে একটা ‘আখড়া’ গড়ে তুললেন। শরীরচর্চা শেখাবেন বলে। একটা মফস্বলের কাগজে ছোট্ট করে বিজ্ঞাপনও দিয়ে দিলেন:
= যারা শরীরচর্চায় আগ্রহী, সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী, তাদের জন্যে সুবর্ণ সুযোগ!
বি: দ্র: অত্যন্ত অল্পসময়ে এখানে মেদভূড়ি কমানোর ব্যায়াম করা হয়।
-
বেচারা সারাদিন ‘জিম’ নিয়ে পড়ে থাকেন। মসজিদের ইমাম সাহেবের খুব দুঃখ! স্যার এত মেহনত করেন, কিন্তু নামায-কালামের ধার-ধারেন না। দান-খয়রাত, কথাবার্তায় বাছার কিছু নেই। শুধু আল্লাহর দেয়া ফরযটা আদায় করলেই খামতি থাকে না।
-
এর মধ্যে মসজিদে একটা জামাত এলো। ইমাম সাহেব জামাতের আমীর সাহেবকে নিয়ে একদিন ফজর পড়ে পায়ে পায়ে আখড়ায় এলেন। খুসুসী গাশতে। দেখলেন এই সাতসকালেই বেশকিছু যুবক ‘হুঁ হাঁ’ করে শরীর ভাঁজা শুরু করে দিয়েছে! বেশ ঘাম ঝরানো কসরৎ করছে। একপাশে কয়েকজন শহুরে ভদ্রলোকও দেখা যাচ্ছে। বেশ থলথলে চর্বি নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ব্যায়াম করছে। তারা কয়েকদিন একনাগাড়ে থাকার জন্যে এসেছেন।
চর্বিদারদের কাছে গেলেন। প্রশিক্ষকও সেখানে আছেন। ব্যায়ামের বিরতিতে একটু কথা বলার অনুমতি চাইলেন। ছোট্ট ভূমিকা দিয়ে কথা শুরু করলেন। সংক্ষেপে ইসলাম সম্পর্কে বললেন। নবীজি সা. সম্পর্কে বললেন। একজন মুসলমানের করণীয় সম্পর্কে বললেন । সবশেষে নামাযের কথায় এলেন। অল্প দু‘য়েক কথায় যা বলার বলে ফেললেন। শেষে উপসংহার টানলেন এই বলে:
= আমরা শরীরের চর্বি কমানোর জন্যে ঘণ্টা কে ঘন্টা ব্যায়াম করছি, কিন্তু আমলনামার গুনাহ কমানোর জন্যে পাঁচ মিনিট নামাযের পেছনে সময় দিতে পারছি না! কুরআনে আছে:
-নিশ্চয় নামায বিনম্র ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের ওপর অত্যন্ত ‘কষ্টকর’( সূরা বাকারা)!
-
দরদ নিয়ে বললে মানুষ মানতে দেরী করে না। আখড়ার গুরু তো বটেই শাগরেদরাও নামায পড়তে সম্মত হলো। প্রশিক্ষক সাহেব বললেন:
-এভাবে আগে ভেবে দেখিনি! আসলেই চর্বি কমানোর জন্যে, বাড়তি মেদ কমানোর জন্যে এত মেহনত-কসরৎ করতে পারলে, গুনাহ কমানোর জন্যে সামান্য ‘হরকত’ করতে পারবো না কেন?