ইন্টারনেট, মোবাইল সেবা, ঔষধ, পোশাক, টয়লেট টিস্যূসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার উপর নতুন করে ধার্যকৃত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। আজ (১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ইং বুধবার) সকাল সাড়ে ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনা; ব্যাংকখেকো, ঋণখেলাপিদের থেকে টাকা ও সম্পদ উদ্ধার, অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে’ আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানান খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা মাহবুবুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মোফাচ্ছির হোসাইন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম জামালী, মুফতি আখতারুজ্জামান আশরাফী, মুফতি জসিম উদ্দিন, মুফতী রুহল আমীন প্রমুখ।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জনগণ তাদের নায্য অধিকারের জন্য লড়াই করে আসছে। কিন্তু দু:খের বিষয় হল জনগণ আজ পর্যন্ত তাদের নায্য অধিকার বুঝে পায়নি। বিগত সরকার এদেশের ১৮ কোটি মানুষের অধিকার হরণের কারণে এদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানকে বলতে চাই, পূর্বের সরকার যেই জুলুম করেছে সেই জুলুম যেন আপনাদের থেকে না হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই অনেকগুলো পণ্যে কর ও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই করের বোঝায় জনগণ আরও পিষ্ট হবে। আমরা চাইনা এদেশের জনগণের উপর আর কোন বোঝা চাপুক। এই সরকারের কাছে আমরা উদাত্ত আহবান জানাব, আপনারা জনগণের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকুন। এমন কোন কাজ করবেন না, এমন কোন ট্যাক্স এবং কর বৃদ্ধি করবেন না যার জন্য জনগণের ক্ষতি হয়। এদেশের সব শ্রেণীর জনগণ মিলে ৫ আগস্ট নতুন করে দেশকে স্বাধীন করেছে। ৫ আগস্টের স্বাধীনতা কোন একক গোষ্ঠীর জন্য নয়। এদেশের জনগণ, সব শ্রেণীর মানুষ দল, মত নির্বিশেষে রাস্তায় নেমে এসে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই আমরা বলতে চাই, এই স্বাধীনতা যেন আমরা নষ্ট না করি। সরকারের কাছে উদাত্ত আহবান, কর ও শুল্ক বৃদ্ধির এই জনবিরোধী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন।
সভায় নেতৃবৃন্দ, জনগণের উপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে সরকারের বাজেট ঘাটতি থাকলে তা পূরণের জন্য দেশ থেকে পাচারকৃত টাকা উদ্ধার, ব্যাংক লুটপাটকারী ও ঋণখেলাপীদের থেকে দেশের টাকা ও সম্পদ উদ্ধারের দাবি জানান। সেই সাথে এসবের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ঋণখেলাপীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণারও দাবি জানান তারা। তারা বলেন, টয়লেট টিস্যূ, ঔষধ , মোবাইল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। দেশের ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার বাইরের বায়ারদের কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেটের উপর ১০% শুল্ক বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার উপর দ্বিগুণ ভ্যাট আরোপ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে, জনগণের জীবনকে আরও দুর্বিসহ করে তুলবে। সরকারের উপদেষ্টারা কোন মুখে জনজীবনে ভ্যাট বাড়ানোর কোন প্রভাব পড়বে না বলছেন তা বোধগম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নেতৃবন্দ বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চালসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্যের দাম কমলেও অধিকাংশেরই কমেনি। নতুন করে ভ্যাট আরোপ এই পরিস্থিতিকে জনগনের জন্য আরও কঠিন করে তুলবে। তারা জনগণের উপর ভ্যাট ও সম্পূর্ক শুল্কের মত পরোক্ষ করের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে প্রত্যক্ষ কর অর্থাৎ ধনী ব্যক্তিদের, ব্যবসায়ের মোট লাভের উপর কর বাড়ানোর পরামর্শ দেন সরকারকে। পাশাপাশি নিত্যনতুন করের বোঝা চাপানোর প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়নেরও দাবী জানান নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে সরকারের প্রতি প্রয়োজনে বিজ্ঞ উলামাদের পরামর্শ নেয়ার আহবান জানান তারা।
হাআমা/