জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ দেশের আপামর জনগণের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে সেই ব্যাংকটাকে শেষ করে দিয়েছে। আমরা শুনেছি, এই ব্যাংকের টাকা চুরি করেছে পলাতক শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং তার পরিবার। এখন এই চুরির দায়ে তাঁরা লন্ডনেও জেরায় পড়েছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য এবং ভাগ্যক্রমে তিনি মন্ত্রীও হয়েছেন। এখন সেখানকার দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁকে দুর্নীতির দায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এটা বাংলাদেশ এবং জাতির জন্য লজ্জার। আমাদের লজ্জা হলে কী হবে! ওদের কোনো লজ্জাবোধ নেই।’
আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দ্দার।
সম্মেলনে ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘যাঁরা স্বাধীনতার লগ্নে জাতিকে ওয়াদা করেছিলেন, সব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। তাঁরা কেউ অধিকার ফিরিয়ে দেননি। তাঁরা কথা রাখেননি। তাঁরা দফায় দফায় জাতির সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। অধিকার হরণ করেছেন। তাদের নেতৃত্বে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এ দেশ আমাদের সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষের। আমরা রহুকাল ধরে এই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করে আসছি। পূর্বে আমরা দুই দুইবার স্বাধীন হয়েছিলাম; ৪৭-এ, ৭১-এ।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘দেশে যেখানেই তাদের হাঁড়িতে হাত ঢুকছে, সেখানে টাকার খনি। এই টাকা এরা পেল কোথায়? তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পিয়নের অ্যাকাউন্টে ছিল ৪০০কোটি টাকা। পিয়নের যদি এত টাকা হয় মালিকের কত টাকা? হ্যাঁ, মালিকের টাকাও বের হয়ে আসছে। এই কুষ্টিয়ার পাশেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখান থেকে মালিকের পরিবার শুধু একটা প্রকল্প থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। এইভাবে যেখানেই মেগা উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই মেগা ডাকাতি করা হয়েছে।’
তিনি আরও সমালোচনা করে বলেন, একটা পদ্মা সেতু তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে অন্তত চারটা পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত। তাহলে বাকি তিনটা গেল কোথায়? হিসাব একেবারেই পরিষ্কার। দেশের টাকা দিয়ে যাঁরা বিদেশে বেগমপাড়া গঠন করেছেন, তাঁরাই এই টাকা চুরি করেছেন। কিন্তু চোরের মার বড় গলা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের পারিবারিক বিষয় তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ছিল তাদের ইনকাম সোর্সের জায়গা। আর তাদের কলিজা ছিল বিশ্বের অন্য জায়গায়। এই দেশের প্রতি তাদের দরদ থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাদের সব পরিবার, বিদেশের কোথায়-বেগমপাড়ায়।’
সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটি এই কথা শুনতে চাই না। কিসের মেজরিটি আর মাইনরিটি; বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করবে, তারা সবাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই দেশের গর্বিত মর্যাদাবান নাগরিক। রাষ্ট্রের সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। আল্লাহর সংবিধানও তাদের সমান অধিকার দিয়েছে।’
নারীদের পোশাকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বোরকা কালো হবে না লাল হবে; সাদা হবে না বেগুনি হবে এটা দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়। বোরকা কাউকেই জোর করে পরানো হবে না। যে মা মনের সন্তুষ্টির সঙ্গে বোরকা পরতে চাইবেন, পর্দা করতে চাইবেন, তিনি করবেন। আমি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মায়েদের কীভাবে বোরকা পরাব। ইসলাম কী আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে, না অধিকার দিয়েছে? কোনোটাই নয়। তাঁরা যা পছন্দ করেন, সেই রকম তাঁরা চলবেন।’
দীর্ঘ ১৮ বছর পর প্রকাশ্যে কর্মিসভাকে কেন্দ্র করে কুয়াশা ও কনকনে শীত মাড়িয়ে আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার জামায়াতের কর্মী মিছিল নিয়ে সরকারি কলেজ মাঠে হাজির হন। সকাল ৯টায় পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। আশপাশের সড়কেও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। তাঁরা নানা রকম স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন কলেজ মাঠ।
এমএইচ/