শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ২৩ মাঘ ১৪৩১ ।। ৮ শাবান ১৪৪৬


ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পরিকল্পনা: রাজনৈতিক বিতর্ক ও আইনি চ্যালেঞ্জ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুহাম্মাদ শোয়াইব ||

বিশ্ব রাজনীতি ও কৌশলগত স্বার্থের জটিল সমীকরণের মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২.২ মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।

গাজাকে দীর্ঘ ১৫ মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর "পরিষ্কার" করার অজুহাতে এ পরিকল্পনা হাজির করা হলেও এটি আন্তর্জাতিক ও আইনি অনেক বাধার সম্মুখীন। ইতিহাসে এমন জোরপূর্বক স্থানান্তরের কৌশল বহুবার ব্যর্থ হয়েছে।

এই প্রবন্ধে, আমরা ট্রাম্পের বিতর্কিত পরিকল্পনার আইনি দিক বিশ্লেষণ করব, অতীতে জোরপূর্বক স্থানান্তরের চেষ্টাগুলোর পর্যালোচনা করব এবং মিশর, জর্ডান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয় ও অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিরোধ ও স্থিতিশীলতার কৌশল কীভাবে কার্যকর হতে পারে, সেটাও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হবে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

গাজার ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য এমন এক সময় এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। একের পর এক ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।

এই পরিকল্পনার সাথে ট্রাম্পের "ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরি" বা "শতকের সেরা চুক্তি" পরিকল্পনার সম্পর্ক রয়েছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ফিলিস্তিনিদের কিছু অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন দেখানো হলেও তাদের রাজনৈতিক অধিকার অগ্রাহ্য করা হয়েছে, যা ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে "আব্রাহাম চুক্তি" স্বাক্ষর করেছিল, যা ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অনেকটাই কমিয়ে দেয়।

আন্তর্জাতিকভাবে, এই পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনার সঙ্গেও যুক্ত। ইরান গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দিয়ে আসছে, আর ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমাতে চাইছিল।

দেশের অভ্যন্তরে, ট্রাম্প মূলত ইসরায়েলপন্থী ও বিশেষ করে ইভানজেলিক খ্রিস্টানদের ভোট টানতে চেয়েছিলেন। একইসঙ্গে, মিশর ও জর্ডানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করার কৌশল নিয়েছিলেন, যাতে ইসরায়েলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বোঝা কমে।

ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের ঐতিহাসিক পরিকল্পনা ও সেগুলোর ব্যর্থতার কারণ

ইতিহাসে একাধিকবার ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ বা পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে, তবে প্রতিবারই তা রাজনৈতিক জটিলতা ও প্রবল জনবিক্ষোভের কারণে ব্যর্থ হয়েছে।

এর মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৫৫ সালের সিনাই পুনর্বাসন প্রকল্প, যা ইসরায়েল যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে প্রস্তাব করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের উত্তর সিনাইতে পুনর্বাসন করা। কিন্তু তৎকালীন মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসের এই পরিকল্পনাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ফিলিস্তিনিরাও তীব্র বিরোধিতা করেন।

৬০ ও ৭০-এর দশকে ফিলিস্তিনিদের জর্ডানে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা তীব্র উত্তেজনার জন্ম দেয়। এই পরিস্থিতি ১৯৭০ সালের "ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর" (কালো সেপ্টেম্বর) সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যায়, যেখানে জর্ডান সরকার ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহিংস সংঘাত ঘটে।

এছাড়া, জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিকভাবে পুনর্বাসনের বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিল, বিশেষ করে "UNRWA" (জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা) এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহায়তার বিনিময়ে তাদের অন্যান্য দেশগুলোতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা তাদের ফিরে যাওয়ার অধিকার (Right of Return) রক্ষায় দৃঢ় থাকায় এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। একই সঙ্গে, আরব দেশগুলোও আশঙ্কা করেছিল যে, এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের দায় তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলের দায়মুক্তি নিশ্চিত হবে।

ইসরায়েলের বিতাড়নের প্রচেষ্টা: ধারাবাহিক ব্যর্থতা

দীর্ঘকাল ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের, বিশেষ করে গাজার জনগণকে বিতাড়নের চেষ্টা করেছে। কখনো নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে, আবার কখনো সামরিক অভিযান চালিয়ে অঞ্চলটিকে শূন্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের "অপারেশন প্রটেকটিভ এজ" (গাজা যুদ্ধ) চলাকালীন ইসরায়েল গাজার উত্তর অংশ, বিশেষ করে বেইত হানুন ও বেইত লাহিয়া এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় এবং সাধারণ মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। অনেকেই সাময়িকভাবে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিলেও যুদ্ধ শেষে তারা ফিরে আসে। ফলে ইসরায়েলের পরিকল্পিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ব্যর্থ হয়।

পরবর্তীতে, ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন বা উচ্ছেদের ইচ্ছা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে থাকেন।

  • ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন গিভির প্রকাশ্যে বলেন, "গাজার কয়েক লাখ অধিবাসীকে অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে।"
  • অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ গাজার জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন।

২০২৩ সালের গাজার যুদ্ধের সময় ইসরায়েল সরাসরি উত্তর গাজা খালি করার ঘোষণা দেয়, এই দাবি করে যে তারা হামাসের সুরঙ্গ ও সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে চায়।

  • জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুন এর মতো এলাকাগুলোর পাশাপাশি কামাল আদওয়ান হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
  • ইসরায়েল বারবার মানুষকে দক্ষিণ গাজায় যেতে বাধ্য করার চেষ্টা করলেও, যুদ্ধ শেষে অনেকেই আবার নিজেদের এলাকায় ফিরে আসেন।

ইতিহাসের শিক্ষা: কেন এসব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে?

ইসরায়েল বহুবার সামরিক শক্তি দিয়ে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন করতে চেয়েছে, কিন্তু কেন তারা সফল হয়নি?

১) ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় প্রতিরোধ – প্রতিবারই ফিলিস্তিনিরা নিজেদের জমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

২) আন্তর্জাতিক চাপ ও নিন্দা – ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার সমালোচনা করেছে।

৩) ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা – ১৯৪৮ সালে নাকবার সময় জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হলেও পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিনিরা অধিকার রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং বারবার নিজেদের জায়গায় ফিরে এসেছে।

ইসরায়েলের বিতাড়নের প্রচেষ্টা এবং জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের কৌশল সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে অগ্রসর হলেও ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক সমর্থন এর বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ইতিহাস সাক্ষী যে, যতবারই ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই তা ব্যর্থ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ

আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদকে (Forced Displacement) নিষিদ্ধ করেছে এবং এটি যুদ্ধ ও শান্তি উভয় সময়েই মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।

১. আন্তর্জাতিক আইনের মূল বিধান

  • ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন (চতুর্থ কনভেনশন)
  • ধারা ৪৯: দখলকৃত অঞ্চলের অধিবাসীদের জোরপূর্বক স্থানান্তর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • ধারা ১৪৭: জোরপূর্বক উচ্ছেদকে গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
  • ১৯৯৮ সালের রোম সংবিধান (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইন)।
  • ধারা ৮(২)(বি)(৮): জোরপূর্বক উচ্ছেদকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি।
  • ধারা ৭(১)(ডি): ব্যাপক বা পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদ হলে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ।

জাতিসংঘের সাধারণ ঘোষণাসমূহ

  • সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা (UDHR) ব্যক্তির নিজ ভূমিতে থাকার অধিকার নিশ্চিত করে।
  • জাতিসংঘের রেজোলিউশন ১৯৪ (১৯৪৮) ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।
  • রেজোলিউশন ২৪২ (১৯৬৭) দখলকৃত অঞ্চলে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে।

২. কেন ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন?

ইসরায়েল যে কৌশলে গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন করতে চায়, তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী কারণ:

  1. এটি একটি দখলদার শক্তির (Occupying Power) মাধ্যমে জোরপূর্বক জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা।
  2. ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও বসতি স্থাপনের মাধ্যমে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ইহুদি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, যা "জাতিগত নির্মূল (Ethnic Cleansing)" হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
  3. আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যেকোনো সামরিক অভিযান বা সংকটের অজুহাতে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন বৈধ নয়।

বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: কেন আন্তর্জাতিক আইন কার্যকর হয় না?

যদিও আন্তর্জাতিক আইন জোরপূর্বক উচ্ছেদকে নিষিদ্ধ করেছে, তবে এর বাস্তব প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হয় কিছু মূল কারণের জন্য:

১. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাধা

  • যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বৈত নীতি:
  • জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র বহুবার ভেটো ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আটকে দিয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও বাস্তবে শাস্তি আরোপ করা হয়নি।
  • আরব ও মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক বিভক্তি:
  • আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব ফিলিস্তিন বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গঠনে বাধা সৃষ্টি করে।

২. বাস্তবায়ন ও শাস্তির দুর্বলতা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) সীমিত ক্ষমতা:

  • শুধুমাত্র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিচার কার্যকর করা সম্ভব, কিন্তু ইসরায়েল এই আদালতের সদস্য নয়।
  • আদালত কেবল তখনই কার্যকর হতে পারে যখন অভিযুক্ত দেশ সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।

জাতিসংঘের প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব:

  • জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশনগুলো নৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে, কিন্তু সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষমতা নেই।
  • নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতি প্রয়োজন, যা প্রায়শই অনুপস্থিত থাকে।

৩. বৈশ্বিক শক্তিগুলোর স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা

  • পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে তাদের কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে।
  • যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বছরে ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা দেয়, যা তার দখলদারি নীতিকে আরও শক্তিশালী করে।
  • অনেক ইউরোপীয় দেশ ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করলেও, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে পিছিয়ে থাকে।

মিশর ও জর্ডানের অবস্থান: কীভাবে তারা প্রতিরোধ করছে?

মিশর ও জর্ডান ফিলিস্তিনি জনগণের জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

মিশর:

  • গাজার সাথে রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রেখেছে যাতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের মিশরে ঠেলে দিতে না পারে।
  • মার্কিন ও ইসরায়েলি চাপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে, যাতে গাজার জনগণ তাদের ভূখণ্ডে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য না হয়।
  • মানবিক সাহায্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করছে।

জর্ডান:

  • অতীতেও ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংকটের চাপে পড়েছে, তাই নতুন কোনো গণউচ্ছেদ মেনে নিতে চায় না।
  • জর্ডান রাজতন্ত্র ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে।
  • জাতিসংঘ ও আরব লিগের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জোরদার করছে।

সমাধানের পথ: কী করা যেতে পারে?

১. আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি

  • মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকরভাবে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে সম্পৃক্ত করা।
  • নিরাপত্তা পরিষদের ভেটোর সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো।

২. আইনি পদক্ষেপ জোরদার

  • আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (ICJ) আরও বেশি মামলা দায়ের করা।
  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ উপস্থাপন করে জাতিসংঘে ভোট আয়োজন।

৩. আরব ও মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য বৃদ্ধি

  • ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি ঐক্যবদ্ধ কূটনৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করা।
  • ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বয়কট জোরদার করা।

৪. গণআন্দোলন ও প্রচার কার্যক্রম বৃদ্ধি

  • পশ্চিমা বিশ্বে ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনকে আরও সংগঠিত করা।
  • আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফিলিস্তিনি ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ তুলে ধরা।

আন্তর্জাতিক আইনে জোরপূর্বক উচ্ছেদ নিষিদ্ধ হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক শক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কারণে আইনের কার্যকর প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে মিশর ও জর্ডানের মত দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকায় ইসরায়েলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে। ভবিষ্যতে সফল হতে হলে আইনি, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সব দিক থেকেই একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: আন্তর্জাতিক বিশ্লষক

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ