|| হুমায়ুন আইয়ুব ||
রাত নামে ইজতেমার মাঠে। মুমিনের জোড়া চোখ জেগে থাকে কান্নায়। থেমে থেমেই ভেসে আসে কান্নার সুর। আলো-আঁধারিতে অবিরাম ইবাদতে মুসল্লিরা। তেলাওয়াত, জিকির, দরুদ, নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ শেষে মাটি-চাঁটাইয়ের বিছানায় হাউমাউ করে কাঁদে তারা। হাত দুটি উঁচিয়ে প্রভুর কাছে চাওয়া-পাওয়ার সে কী আকুলতা! তুরাগতীরে খেলা করে চাঁদ। সেজদারত মুমিনের কপালে চুমু এঁকে দেয় চাঁদ। আকাশ হয়ে ওঠে আত্মীয়। বিরামহীন ইবাদতে কখন যে চোখ ভারী হয়ে আসে! নেমে আসে আচ্ছন্ন ঘুম।
সুন্নতে নববীর এই পাঠশালায় বিরাজ করে তিল পড়ার নীরবতা। তখন মুমিনের স্বপ্নরাজ্যের বাসিন্দা হন মদিনার নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মুমিনরা মাটি-চাঁটাইয়ে শুয়ে আচ্ছন্ন ঘুমে সালাম করেন নবীজিকে। নবীজি! দেখা দেবেন বলে অপেক্ষায় থাকি।
আমি তখন ঢাকার চৌধুরীপাড়ায় শেখ জনুরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষার্থী। আমার চেতনার প্রদীপ আল্লামা ইসহাক ফরিদী রহ.। তিনি আমাদের দলবেঁধে ইজতেমায় নিয়ে যেতেন। ইজতেমার পথে পথে জিকির আর ইল্লাল্লাহর ধ্বনি। ইজতেমাগামী বাস জেগে থাকত সুরে। কুরআনের সুরে। কখনও বন্ধুবর সোহেলের কণ্ঠে সুরের মূর্ছনা। আমার লাশের খবর বন্ধু আসবে একদিন জানি/কাঁদবে সবে ফেলবে শুধু দুই নয়নের পানি... গজলটি আকুল হয়ে গাইত আবু বকর সোহেল। পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত পথ। ছন্দ-সুরে এগিয়ে যেত আমাদের কাফেলা।
মুন্সীগঞ্জের সাইফুল শিকদারের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেÑ ‘যারে যা দরুদ চলে যা মদিনায়’Ñ মায়াবি সুর। সাইফুলের ওই মদিনার পথেরে আমার ওই মদিনার পথে... গজলটি সমস্বরে গেয়ে উঠতো সবাই। সুর-লহরীর দ্যোতনায় জমে উঠত আমাদের আলাপ-আড্ডা। স্বতস্ফূর্ত অংশ নিত আবু বকর সিদ্দিক, নুরুল আলম, ফরিদ, সুলাইমান, আহসান উল্লাহরা। দরবেশ বন্ধু হামিদুল্লাহও বাদ যেত না। সুখের চাদর গায়ে নীরব স্মৃতিরা অপেক্ষা করে। বছর ঘুরেই ইজতেমা আসে। আসে না ফেলে আসা সুখের স্মৃতিরা। এই শূন্যতা ভরাট করার কোনো উপায় খুঁজে পাই না।
লেখক: সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোরা ডটকম
কেএল/