সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ ।। ৩ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৭ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
কবে দিচ্ছে কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাকের রেজাল্ট ? ‘শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে হবে’ ইফতা-আদবসহ সকল বিভাগে ভর্তির সুযোগ শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে   আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস শিক্ষাবোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত বেরোবি মসজিদের খতিবের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন জার্মানি থেকে হজের জন্য সাইকেলযাত্রা ‘মুসলমানদের নিরাপত্তা প্রদানে ভারতের ব্যর্থতা সভ্যতার জন্য লজ্জাজনক’ ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ পড়ায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ৭ দফা সুপারিশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ভারতীয় মিডিয়া বিশ্বব‍্যাপী বাংলাদেশের বদনাম ছড়াচ্ছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্তানকে দেখে যেতে পারেননি শহীদ হাফেজ নূরে আলম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

২০২২ সালে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মরিচারচর এমদাদুল উলুম নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে হাফেজি পাস করেন নূরে আমল সিদ্দিকী রাকিব। নিজ গ্রামে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে ২০ জুলাই ২০২৪ সকালে গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে গিয়েছিলেন রাকিব। তখন কলতাপাড়া বাজারে ছাত্র-জনতার সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময়ে তিনি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন। আর তখনই পুলিশের গুলিতে আহত হন রাকিব। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। 

কুরআনে হাফেজ রাকিব গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও মধ্যপাড়ার আব্দুল হালিম শেখের ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন হাফেজ নূরে আলম রাকিব। ছেলে হত্যার ঘটনায় আবদুল হালিম বাদী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। 
‘আমার মৃত্যুর পর জানাজায় ছেলে ইমামতি করবে সে জন্য তাকে হাফেজ বানিয়েছিলাম। একটি গুলি আমার একমাত্র সেই ছেলেকে কেড়ে নিল।’ এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হাফেজ নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের (২২) মা নুরুন নাহার। 

‘আমি বাবা হব, তুমি মা হবে, ঘর আলোকিত করবে আমাদের সন্তান। আমাকে রেখে দূরে কোথাও যেতেন না। সব সময় কাছে কাছেই থাকতেন। আমরা দু’জন সন্তানকে নিয়ে ভাবতাম। সব স্বপ্ন কেড়ে নিল একটা বুলেট।’ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সাদিয়া আক্তারকে এভাবেই স্বপ্নের কথা বলতেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব। তিনি শহীদ হওয়ার ৬ মাস পর ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ রোববার ভোর ২টা ৩০ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কন্যাসন্তান জন্ম দেন সাদিয়া। কন্যা সন্তান নিয়ে সাদিয়া এখন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের পুনাইল গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকছেন।

স্ত্রী সাদিয়া আক্তার জানান, গত বছরের ২০ জুলাই ২০২৪ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় পুলিশের গুলীতে শহীদ হন রাকিব। সাদিয়া আরও জানান, তার স্বামী সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। ও আসবে, ওর জন্য ঘর সাজাতে হবে। ও আমাকে স্পর্শ করে সন্তানের ছোঁয়া অনুভব করত। কত আবেগ-আপ্লুত ছিল সে। রাকিবের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, তার সন্তান হবে, সেই জন্য বাবা হিসাবে রাকিব খুব আবেগ-আপ্লুত ছিল। সব স্বপ্ন একটি গুলীতে শেষ হয়ে গেল। সন্তান তার বাবার মুখ দেখতে পারল না। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, আমার সন্তানের কী দোষ ছিল, সে কেন এতিম হলো। ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে সন্তানকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের পুনাইল গ্রামে বাবার বাড়িতে যান সাদিয়া।

সাদিয়ার বাবা মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, একদিকে কষ্ট, অন্যদিকে আনন্দ! যে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হওয়ার কথা। সে তো নেই। সাদিয়ার ভাই শামীম আহমেদ বলেন, আমার ভগ্নিপতি শহীদ হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে। আমার ভাগ্নিটা যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। সে যেন তার প্রাপ্য অধিকারটুকু পায়। মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার নাতনি যখন কাঁদছে, আমাদের মনে হচ্ছে ও বাবা বাবা বলে চিৎকার করছে। ওর বাবাও হয়তো ওর কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ