শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ২৩ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘নামাজী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অপরাধপ্রবণতা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে’ আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে আগামীর ইসলামের জন্য কাজে লাগাতে হবে: আজহারী বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সভাপতি পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন ‘কুরআনের সাথে সম্পৃক্ততা মানুষকে আলোকিত করে’ মসজিদে হারাম ও নববীতে তারাবি পড়াবেন ১৫ ইমাম সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে দেশবাসীকে নিয়ে আন্দোলন হবে : সিইসি স্থানীয়-জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যা বললেন জামায়াত আমির ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি নেজামে ইসলাম পার্টির চীন সফরে যাচ্ছেন মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন কালেমা তাইয়্যেবা হচ্ছে ঐক্যের মূল সূত্র: খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগর

ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠক আজ


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ ঢাকায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ উক্ত বৈঠকে। বর্তমানে ২৩২ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক দিচ্ছে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হবে টিকফার সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ।

বাংলাদেশের পক্ষে এতে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্বে থাকবেন ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

২০১৩ সালে অভিন্ন উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরই মধ্যে চুক্তির এক দশক পার হতে চলেছে। এর আওতায় ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই সময়ে ছয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এসব বৈঠক থেকে এখনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাপ্তি মিলেনি। মেলেনি জিএসপি সুবিধা। উল্টো ২৩২ দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

টিকফা চুক্তি-পরবর্তী গত এক দশক সরকারকে নানা প্রেসক্রিপশন তথা শর্ত পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সামলাতে হয়েছে। বিশেষ করে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ইস্যুতে তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মপরিবেশ রক্ষা, শ্রম অধিকার নিশ্চিত এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে এখনো মার্কিনিদের নানা বাক্যবাণ বাংলাদেশকে শুনতে হচ্ছে ।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির মুখে অতি সম্প্রতি সে দেশ থেকে আমদানি করা তুলা বাংলাদেশে কোনো ফিউমিগেশন বা পুনঃপরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আসন্ন টিফা ফোরামের বৈঠককে কেন্দ্র করে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ সিদ্ধান্তটিও মার্কিনিদের স্বার্থসংরক্ষণমূলক। এর ফলে বাংলাদেশে দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়লেও এতে সমৃদ্ধি ঘটবে মার্কিন ব্যবসার ।

এদিকে দুই দেশের মধ্যে এবারের টিকফা ফোরামের আলোচনার জন্য তৈরি করা চূড়ান্ত এজেন্ডা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সপ্তম বৈঠকেও মার্কিনিদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী শর্ত পূরণের অগ্রগতি ব্যাখ্যা করতে হবে। শুনতে হবে আরও অগ্রগতির সবকও। যদিও গত এক দশকে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার উন্নয়ন এবং কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করে তৈরি পোশাকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ ও সবুজ শিল্পের স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় খোদ মার্কিন প্রতিষ্ঠান থেকেই ।

তার নমুনা মিলেছে ইউএসটিআরের নির্ধারিত এজেন্ডাতে। এতে দেখা গেছে, মার্কিনিরা টিকফা ফোরামের আলোচনায় এবার ছয় এজেন্ডা ধরে ১৮ ইস্যুতে যেসব প্রস্তাব করবে তার বেশিরভাগই তাদের ব্যবসা প্রসার এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট আইনকানুন সংস্কার, পরিবর্তন ও উন্নয়নধর্মী; যা এদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ আরও সুগম করবে। শুধু শ্রম ইস্যুতেই ইউএসটিআর পাঁচ সুনির্দিষ্ট বিষয় জোরালোভাবে পর্যালোচনায় আনবে। ক্ষেত্রবিশেষে একই সঙ্গে এর ব্যাখ্যাও চাইবে। তবে উল্লিখিত তথ্যমতে, এ-বিষয়ক আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশে শ্রমিক ইউনিয়নবিরোধী অপতৎপরতা বা শ্রমিকবিরোধী সহিংসতার বিষয়ে। এ ছাড়া ইউনিয়ন গঠন বা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে—অন্যান্য ক্ষেত্রেও অন্যায্য শ্রম অনুশীলন হচ্ছে—এমন অভিযোগ রয়েছে তাদের কাছে, এসবের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে এবারের আলোচনায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম আইনসহ স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) এবং ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধনের খুঁটিনাটি, শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শন ও বাস্তবায়ন ইস্যুগুলো তারা সুচারুভাবে পর্যালোচনা করবেন।

এ ছাড়া ডিজিটাল বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনায় খসড়া ডাটা সুরক্ষা আইন এবং ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের খসড়া প্রবিধান ইস্যুতে জোর দেবেন ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা।

অন্যদিকে মেধাস্বত্ববিষয়ক আলোচনায় তাদের গুরুত্ব থাকবে এসব খাত সম্পর্কিত নকল পণ্য এবং মেধাস্বত্ব আইন সংশোধনের ওপর। এ ক্ষেত্রে কপি রাইট আইন সংশোধন, শিল্প নকশা আইন, পেটেন্ট বিল এবং বাস্তবায়ন প্রবিধান, আমদানি-রপ্তানি বিধি বাস্তবায়নের নানা দিক ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা বৈঠকে পর্যালোচনা করবেন। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষেত্র বিশেষে এসব আইন, বিধি ও প্রবিধির খসড়া এবং চূড়ান্ত কপি চাওয়া হতে পারে। এ ছাড়া কৃষি বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনায় ঢাকার সঙ্গে কৃষি জৈব প্রযুক্তি সংলাপ চাইবে ওয়াশিংটন। একই ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের বীজ আইন বিধিমালার সংশোধন অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন। ইউএসটিআরের তথ্যমতে, এই বৈঠকে বিনিয়োগের সমস্যা সম্পর্কিত আলোচনায় আমেরিকান কোম্পানিগুলোর পাওনা পরিশোধ এবং মুনাফা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব বিড়ম্বনার সুরাহা চাইবে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নোটিফিকেশন ইস্যুতে শুল্কস্তর এবং বিভিন্ন বিষয়ে চেকলিস্ট সমস্যা সমাধানে অগ্রগতিও মূল্যায়ন করবেন ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এবারের বৈঠকে এলডিসি উত্তরণে মার্কিন সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি তুলায় ফিউমিগেশন না করার পরিবর্তে ওই তুলাসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব তুলবে সরকার। দেশে ইতোমধ্যে জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আছে। আগামীতে যাতে এই বিনিয়োগ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে হয়, তার প্রস্তাব রাখবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিবিসি ফান্ড আছে। সেখানে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাবে।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, একক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিভিন্ন দেশকে তারা বহুল আলোচিত জিএসপি সুবিধা দিয়ে গেলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এর থেকে বঞ্চিত। অন্যান্য কিছু রপ্তানি পণ্যে জিএসপি কোটা রাখা হলেও সেটিও কেড়ে নেওয়া হয় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ইস্যুতে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর দফায় দফায় চাওয়ার পরও জিএসপি আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। অবস্থাটি এরকম যে, আরও উন্নতি করলে জিএসপি মিলবে—এরকম আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের একটা কৃত্রিম হাহাকার ছড়িয়ে রেখেছে মার্কিন প্রশাসন।

ফলে মার্কিন বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘পিউ রিসার্চ’মার্কিন সরকারের ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশন’-এর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে ২৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হয়। তাদের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে গড় আমদানি শুল্কহার যেখানে শতকরা ১ ভাগের মতো, সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এসব সার্বিক বিষয় নিয়েই আজ বৈঠকটি হবে।

এম আই/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ