শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ২২ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
রাখাল রাহা, সোহেল ও ধর্ষক আলেপের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ ফরায়েজী আন্দোলনকে নিবন্ধন দিতে অনুরোধ করবেন ধর্ম উপদেষ্টা রাসুলুল্লাহ ﷺ- এর অবমাননার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী কওমী ছাত্র আন্দোলনের নিন্দা ও প্রতিবাদ খিলগাঁওয়ে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোলা চিঠি দিলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ইংরেজি শিখলেই বাংলা ভুলে যেতে হবে, এমনটি নয়: ড. ইউনূস জামায়াতে ইসলামীর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মুসলমানরা এখনও পরাধীন; আরেকটা বিপ্লব হবে: আব্বাসী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতদানকারী রাখাল রাহার বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম ‘উচ্চ আদালত ও উচ্চ শিক্ষায় বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারা হতাশাজনক’

মাতৃভাষা : হৃদয়ের গভীরতম এক স্পন্দন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তাওহীদ আদনান ইয়াকুব

ভাষা শুধুই কথা বলার মাধ্যম নয়, এটি আত্মপরিচয়ের উৎস, হৃদয়ের নিবিড়তম অনুভূতির প্রকাশ।
মাতৃভাষা হলো সেই সুর, যা মায়ের মুখে শুনে শিশু প্রথম বলে, যে ভাষায় হাসে, প্রথম কথা বলে,
প্রথম স্বপ্ন দেখে। মাতৃভাষা আমাদের অস্তিত্বের গভীরে প্রোথিত শেকড়, যা কেটে ফেলা যায় না,
ভোলা যায় না। এই ভাষার প্রতি ভালোবাসা হৃদয়ের গভীরতম আবেগের বহিঃপ্রকাশ। মাতৃভাষা কেবল
শব্দ নয়, এটি আমাদের আত্মার গভীরে প্রবাহিত এক মহিমান্বিত স্রোত। ভাষার প্রতিটি অক্ষর
যেন আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন, প্রতিটি উচ্চারণ যেন ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। মাতৃভাষার প্রতি
আবেগহীনতা মানে আত্মপরিচয়ের শিকড় বিস্মৃত হওয়া।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এক রক্তঝরা ইতিহাস, এক অবিনাশী গৌরবগাথা। মাতৃভাষার জন্য
এমন আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এই নামগুলো শুধু
ইতিহাসের পৃষ্ঠায় খোদাই করা কয়েকটি অক্ষর নয়, বরং এক মহিমান্বিত ত্যাগের প্রতীক। তাদের
বুকের তাজা রক্তে রাঙানো পথ ধরে এসেছিল আমাদের ভাষার অধিকার, জন্ম নিয়েছিল এক অবিনাশী
চেতনা। তাদের সেই আত্মত্যাগের ঋণ আমরা কীভাবে শোধ করবো? আজও কি আমরা মাতৃভাষার
প্রতি সেই ভালোবাসা দেখাতে পেরেছি? ইউনেস্কো তাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ২১শে
ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যার ফলে এটি বিশ্বব্যাপী ভাষার
অধিকারের প্রতীক হয়ে ওঠে।

ইসলাম মানুষের ভাষার প্রতি সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন: “আর
তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের
পার্থক্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা রূম: ২২)।

এই আয়াত প্রমাণ করে, ভাষার বৈচিত্র্য আল্লাহর এক মহান সৃষ্টি। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা
ও সংস্কৃতি আল্লাহরই দান, এবং তা সংরক্ষণ করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। ইসলাম মাতৃভাষা শিক্ষা
গ্রহণের গুরুত্বও দিয়েছে।

হাদিসে এসেছে, “তোমরা মানুষের সাথে তাদের বোধগম্য ভাষায় কথা বলো।” (সহিহ মুসলিম)। অর্থাৎ,
মানুষের ভাষাকে অবহেলা করা নয়, বরং তা সঠিকভাবে রক্ষা করা ও প্রচার করা ইসলামের দৃষ্টিতে
গুরুত্বপূর্ণ।

যে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা হয়েছিল, সেই ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।
বাংলা ভাষা শুধু আমাদের পরিচয় নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ভাবনার বাহন। অথচ আজ
অনেকেই নিজেদের ভাষার প্রতি অবহেলা দেখায়, অন্য ভাষার প্রতি অধিক মুগ্ধতা প্রকাশ করে।
মাতৃভাষার প্রতি এমন অবহেলা আত্মপরিচয়ের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমাদের উচিৎ মাতৃভাষার
শুদ্ধ চর্চা করা, তা যথাযথভাবে রক্ষা করা, এবং আগামী প্রজন্মকে এই ভাষার সৌন্দর্য ও মহিমা
সম্পর্কে সচেতন করা। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ইতিহাসের ধারক-বাহক এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করাই হবে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া।

মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অবহেলা যেন তাদের রক্তকে ব্যর্থ না করে দেয়। মাতৃভাষা শুধু কথা বলার মাধ্যম নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশের শ্রেষ্ঠ উপায়। এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দেখানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। ভাষা শহীদদের রক্তে অর্জিত এই ভাষা যেন কখনো অবহেলিত না হয়, হারিয়ে না যায়, সেটিই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। ভাষার জন্য ভালোবাসা, ভাষার জন্য গর্ব এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হোক প্রতিটি হৃদয়। মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা
যেন কখনো আত্মপরিচয়ের সংকট সৃষ্টি না করে। আজ, আগামীকাল এবং অনন্তকাল, আমাদের
হৃদয়ে জয়ধ্বনি ধ্বনিত হোক বাংলা ভাষার।

লেখক: ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ