ফেরেশতা মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। তারা সব সময় আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মগ্ন থাকেন। কোরআন মজিদে ফেরেশতাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তারা তো সম্মানিত বান্দা। তারা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তারই (একমাত্র আল্লাহর) আদেশে কাজ করে। তাদের সামনে এবং পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। তারা শুধু তাদের জন্য সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তার ভয়ে ভীত।’ সুরা আম্বিয়া : ২৬-২৮
ফেরেশতারা যেহেতু মানুষের কাজকর্ম রেকর্ড করেন, মানুষের বিষয়ে আল্লাহর কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেন, শাস্তি দেওয়ার বা পুরস্কার প্রদানের সুপারিশ করেন, তাই তারা কাদের বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকেন আর কাদের শাস্তির কামনা করেন তা আমাদের জন্য জানা জরুরি।
মুমিন বান্দাদের জন্য ফেরেশতাদের দোয়া করার বিষয়টি নিশ্চিত করে আল্লাহপাক বলেন, ‘যারা আরশ বহনে রত এবং যারা তার চারপাশ ঘিরে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সঙ্গে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব যারা তওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব! আপনি তাদের স্থায়ী জান্নাতে দাখিল করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদের দিয়েছেন এবং তাদের বাবা-মা, পতি-পত্নী ও সন্তানসন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদের। আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় এবং আপনি তাদের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। সেদিন আপনি যাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন, তাকে তো অনুগ্রহই করবেন এটাই তো মহাসাফল্য।’ সুরা মুমিন : ৭-৯
প্রশ্ন হলো, কারা সেই সৌভাগ্যবান বান্দা, যাদের জন্য ফেরেশতারা নিরন্তর দোয়া করে যান। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বর্ণনায় দেখা গেছে নিম্নের লোকদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। তারা হলেন
অজু থাকা অবস্থায় ঘুমানো ব্যক্তি, হজরত রাসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ পাঠকারী, রোগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তি, মুসলিম ভাইবোনদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনাকারী, উত্তম ও কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষাদানকারী, রোজার নিয়তে সাহরি যে খায়, প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারী, নামাজের জন্য মসজিদে অপেক্ষারত ব্যক্তি, নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে থাকা ব্যক্তি, কাতারের ডান দিকে নামাজ আদায়কারী, কাতারের মাঝখানে খালি জায়গা পূরণকারী, ফজর ও আসরের নামাজ জামাতে আদায়কারী, জিকিরকারী, কল্যাণের পথে দানকারী এবং প্রতিদিন দানকারী ব্যক্তি।
এ ছাড়া হাদিসে এমন কিছু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যাতে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়ার সৌভাগ্য নিশ্চিত হয়। এমন একটি আমল হচ্ছে সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করা।
হজরত মাকাল বিন ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলা তিনবার পড়বে “আউজুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি মিনাশ শাইতানির রাজিম”। তারপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে, তাহলে আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা ওই ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এ সময়ের মধ্যে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে। অর্থাৎ মাগরিব থেকে সকাল পর্যন্ত সময়ের জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করে, আর সে সময় মারা গেলে শহীদের সওয়াব পাবে। জামে তিরমিজি : ৩০৯০
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এনএ/