বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ২২ মাঘ ১৪৩১ ।। ৬ শাবান ১৪৪৬


সিরিয়া নিয়ে নবীজীর যত ভাষ্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাদিসে নববি সা. ও ইসলামের ইতিহাসে শাম নিয়ে বেশ আলোচনা আছে। তবে সেই বিস্তর শামেই এখন এখন সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও পূর্ণ ফিলিস্তিনের অবস্থান। ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এ ভূমি। এই অঞ্চলকে বলা হয় নবী-রাসুলদের ভূখণ্ড। এ শাম নিয়ে রয়েছে আল্লাহর রাসুল সা.-এর কয়েকটি হাদিস।

নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

শাম দ্বিতীয় হিজরত ভূমি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, হিজরতের পর শিগগিরই আরেকটি হিজরত হবে। তখন ভূপৃষ্ঠের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হবে তারা, যারা ইবরাহিম আ.-এর হিজরতভূমি (শাম) দেশে অবস্থান করবে। আর পৃথিবীতে সর্বনিকৃষ্ট মানুষরাই বাকি থাকবে, যাদের আল্লাহ অপছন্দ করবেন। তাদের ভূমিগুলো তাদের ত্যাগ করবে আর তারা ফিতনার আগুনে পুড়বে। (আবু দাউদ ২৪৮২)

মুসলিম বাহিনীর অবস্থান

ইবনে হাওয়ালা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- মুসলিম বাহিনী শিগগিরই কয়েকটি দলে বিভক্ত হবে—একটি শামে, একটি ইয়েমেনে এবং অন্যটি ইরাকে। ইবনে হাওয়ালা রা. জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি সে যুগ পাই, কোন দলে যোগ দেব? রসুলুল্লাহ সা. বলেন, তুমি শামের বাহিনীতে যোগ দাও, কারণ এটি আল্লাহর পছন্দনীয় ভূমি। সেখানে তিনি তার সর্বোত্তম বান্দাদের একত্র করবেন। (আবু দাউদ ২৪৮৩)

আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল

শুরাইহ ইবনে উবাইদ রহ. বলেন, হজরত আলী রা. ইরাকে অবস্থানরত অবস্থায় তাকে শামবাসীদের ব্যাপারে বলা হলো, আপনি তাদের ওপর অভিশাপ করুন! তখন তিনি বলেন, না, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি- শাম ভূখণ্ডে আবদালরা (আল্লাহর ওলিদের বিশেষ দল) থাকেন, তারা ৪০ জন থাকেন, যখনই তাদের থেকে একজন মারা যান, আল্লাহ তার স্থানে অন্য একজনকে রাখেন, তাদের বরকতে বৃষ্টি হয় ও শত্রুর ওপর জয়লাভ হয়। ভবিষ্যতে তাদের ওসিলায় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ: ৮৯৬)

শামের কল্যাণেই উম্মতের কল্যাণ

মুয়াবিয়া ইবনে কুররা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের মাধ্যমে যখন শাম ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তখন তোমাদের মধ্যেও কোনো কল্যাণ থাকবে না। আর আমার উম্মতের একটি দল সবসময় সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, তাদের যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তারা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। (তিরমিজি: ২১৯২)

 

মহাযুদ্ধে শাম হবে মুসলিম বাহিনীর সেনাছাউনি

হজরত আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- মহাযুদ্ধের সময় মুসলিমদের ছাউনি হবে ‘গোত ‘ শহরে, যা দামেস্ক শহরের পাশে অবস্থিত। এটি শামের উৎকৃষ্ট শহরগুলোর একটি। (আবু দাউদ: ৪২৯৮)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- অচিরেই তোমরা শাম বিজয় করতে পারবে, যখন তোমাদের সেখানে বসবাসের এখতিয়ার দেওয়া হবে, তোমরা দামেস্ক নগরীকে বাসস্থান বানাবে, কেননা তা যুদ্ধবর্তীকালীন মুসলিমদের আশ্রয়স্থল হবে, আর তাদের ছাউনি হবে সে দেশের একটি ভূমি, যাকে ‘গোতা’ বলা হয়। (মুসনাদে আহমদ: ১৭৪৭০)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- খোরাসান ভূমি থেকে কালো পতাকাবাহী দল বের হবে, তাদের কোনো কিছুই রুখতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তা ‘ইলিয়া’ তথা জেরুজালেমে স্থাপন না করে। (তিরমিজি: ২২৬৯)

ইমাম মাহদির খেলাফত ভূমিধস

 উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, একজন খলিফার মৃত্যুর পর মতানৈক্য দেখা দেবে। তখন একজন (ইমাম মাহদি) মদিনা থেকে মক্কায় আসবেন আর মানুষের চাপের মুখে বায়াত গ্রহণ করবেন। তার বিরুদ্ধে শাম থেকে একটি দল পাঠানো হবে, কিন্তু তারা বাইদা এলাকায় ভূমিধসে পতিত হবে। (সহিহ মুসলিম: ২৮৮২)

ঈসা আ.-এর অবতরণ দাজ্জালের মৃত্যু

নাউওয়াস ইবনে সামআন রা. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, দাজ্জাল শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে বের হয়ে পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। তার অনিষ্ঠতার পর আল্লাহ ঈসা আ.-কে দামেস্কের পূর্ব দিকের শুভ্র মিনারে অবতরণ করাবেন। ঈসা আ. দাজ্জালকে হত্যা করবেন শামের বাবে লুদ এলাকায়। (সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)

রসুলুল্লাহ সা.-এর হাদিসে বর্ণিত এসব বার্তা মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ