জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। এ সংক্রান্ত অনেক হাদিস রয়েছে। হজরত সালমান রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -আবু দাউদ: ৪৭৯
জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়াও ফজিলতের কাজ। এ সম্পর্কেও হাদিসে পৃথক বর্ণনা রয়েছে। জুমার দিনের ফজিলতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। -সহিহ মুসলিম: ৮৫২
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে প্রায় ৪৫টি মত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো- আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। -সুনানে তিরমিজি: ৪৮৯
জুমার দিনের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ আমল হলো- সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। কোরআনে কারিমের ১৮ নম্বর সূরা ‘আল কাহাফ।’ এর রূকু সংখ্যা ১১ এবং আয়াত ১১০টি। এই সূরা মক্কায় অবর্তীর্ন হয়েছে। সূরায় কোরাইশদের তিনটি প্রশ্নোত্তরসহ হজরত মূসা আ. ও হজরত খিজির আ.-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরাটির অনেক ফজিলতপূর্ণ। ইমাম মুসলিম রা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’
এই সূরা তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে- সূরা কাহাফের তেলাওয়াতে দুই জুমার মাঝের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। হজরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে তার পায়ের নীচে থেকে আসমান পর্যন্ত নূর বুলন্দ হবে এবং কিয়ামত দিবসে তার জন্য উজ্জ্বল হবে আর দুই জুমার মাঝের তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -তাফসিরে ইবনে কাছির: ৬/৩৯৮
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন এ সূরা তেলাওয়াতকারীর জন্য নূর হবে। অনেক বুজুর্গ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবেও তার বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।
যারা কোরআনের হাফেজ আমলটি তাদের জন্য খুব সহজ। জুমার দিন যখন ইচ্ছা তখন তেলাওয়াত করতে পারেন, আর যারা কোরআনের হাফেজ নন, তাদের জন্য প্রথমে একজন আলেম ঠিক করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য অন্ততপক্ষে পাঁচটি সূরা সহিহশুদ্ধ করে নেওয়া। এটা একজন মুসলমানের জন্য ফরজ। সেই সঙ্গে দৈনন্দিনের আমলের বড়-ছোট সূরাসমূহ শুদ্ধ করে নেওয়া জরুরি।
এনএ/