|| নাজমুল হুদা মজনু ||
আল্লাহ তায়ালার অনুগত বান্দারা যেকোনো নেক আমল করার পর চিন্তা করে যে, আমার আমল মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে কি না। তবে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করা আল্লাহ তায়ালারই নির্দেশ।
এ ব্যাপারে একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা পোষণ করে আমি তার সাথে সে ধরনের আচরণ করি।'
পূর্ণ এক মাস রোজা রেখে রোজাদারের স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার রোজা কবুল করেছেন কি না। এ সময় রোজা পালনকারী একটু মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে যে, রোজা পালনকালে আমার আচরণ কেমন ছিল। আমি রোজা রেখে রোজার হক আদায় করতে পেরেছি কি না? মিথ্যা বলা, গিবত করা, অশ্লীল কথা বলা, নগ্নতায় মগ্ন হওয়া থেকে বিরত রয়েছি কি না। নিম্নলিখিত হাদিসটির ওপর কতটুকু আমল করেছি একটু মিলিয়ে নেয়া যাক।
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত—
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দু'বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর
মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ। (বুখারি-১৮৯৪)
রমজানের রোজা শেষে ভুলত্রুটি শোধরানোর জন্য একটি বিশেষ অফার অর্থাৎ সুযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তা হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। সহি মুসলিমে এ ব্যাপারে একটি হাদিসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
আবু আইয়ুব রা: থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল তারপর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা পালন করল তার এই আমলটি সারা বছর রোজা রাখার সমান হবে।' কোনো বুদ্ধিমান মুমিন কি এ সুযোগ হাতছাড়া করতে পারে!
বারো মাস আরো কিছু রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইয়ামে বিজ নামে নাসায়ির এক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই তিনটি রোজা রাখলেও বছরব্যাপী রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া জিলহাজ মাসে আরাফার রোজা ও মহররম মাসে আশুরার রোজার বিশেষ ফজিলতের কথাও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা— আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে আরো বেশি নেক আমল যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দিন এবং কবুল ও মঞ্জুর করুন।
লেখক : আলোচক ও সাংবাদিক
এনএ/