সম্পদশালী বান্দার অন্যতম আর্থিক ফরজ ইবাদত হলো জাকাত আদায় করা। জাকাত নিজের খেয়াল-খুশি মতো পরিমাণ ও স্থানে দেয়া যাবে না। এর জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ এবং সুনির্ধারিত খাত।
যে ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকবে, তাকে সে সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত আদায় করতে হবে। জাকাতের নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কিংবা এর সমপরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া।
এটি মহান আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান মোতাবেক জাকাত আদায়কারীর জন্য রয়েছে অনেক উপকারিতা। জাকাতের খাত বর্ণনা করে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
'জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন (নতুন মুসলিম) তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্যে, ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৬০)
এ আয়াতে জাকাতের আটটি খাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে এ খাতগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো :
নিঃস্ব ফকির-
ফকির বলা হয় যার কোনো সম্পদ নেই, নেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন, যা দ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। আবার কেউ বলেছেন, ফকির সে যার সামান্য সম্পদ আছে। তবে জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করে।
আল্লামা তাবারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফকিরের সংজ্ঞায় বলেন, ওই অভাবগ্রস্ত যে নিজেকে সর্বপ্রকার লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা করে চলেছে, কারোর কাছেই কিছুর প্রার্থনা করে না।
অভাবগ্রস্ত মিসকিন-
মিসকিন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যা দ্বারা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। আল-ফাতওয়া আল-হিন্দিয়ায় এসেছে, মিসকিন এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কিছুই নেই, যে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায় এবং খাদ্য-বস্ত্রের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়।
জাকাত উঠানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি-
যারা জাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং তার বণ্টনকারী এদের সবাইকে জাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে-
> তাকে মুসলিম হতে হবে,
> পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে,
> জাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে,
> আমানতদারি ও কাজের যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে,
> স্বাধীন মুসলিম নিয়োগ করতে হবে, ক্রীতদাস নয়।
যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন-
ইসলামের প্রতি যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য লোকদের জাকাতের খাত থেকে প্রদান করা। ইমাম যুহরির মতে, যে ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করবে, সে-ই এর মধ্যে গণ্য, সে যদি ধনী হয় তবুও।
দাসমুক্তির জন্য-
মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে যে ক্রীতদাস তার মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবন্ধ হয়েছে। কিংবা কোনো মুসলিম যুদ্ধবন্দিও এ খাতের আওতায় পড়বে। ইবনুল আরাবির মতে, মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দিকে কাফিরদের দাসত্ব শৃঙ্খলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজেও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি-
এমন ঋণের ভারে জর্জরিত, যার ঋণ পরিশোধের কোনো অবস্থান নেই। এমন ব্যক্তিকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা।
আল্লাহর পথে-
আল্লাহর পথ বলতে আকিদা, বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছে দেয় যে পথ, ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ এমন কার্যক্রমকে বোঝায় যা খালিস নিয়তে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তা ফরজ, নফল ও বিভিন্ন ধরনের ইবাদত-বন্দেগিকে বোঝায়।
জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহ. বলেন, ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ যারা জিহাদের ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজে নিয়োজিত আছেন।
মুসাফিরদের জন্য-
নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তি যদি সফরে গিয়ে বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব হয়, তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা।
সম্পদশালী ব্যক্তির উচিত, গরিব অসহায়দের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত জাকাত আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
এনএ/