অলসতা একটি ঘৃণিত ও নিন্দনীয় স্বভাব, যা ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের উন্নতির পথে বাধা। কর্মহীন বা অলস ব্যক্তি নিজের জন্য যেমন কিছু করতে পারে না; তেমনি অন্যদেরও কিছু দিতে পারে না। উপরন্তু আলস্যের খারাপ প্রভাব পড়ে সমাজে। ইসলাম অলসতার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্মঠ হওয়ার উৎসাহ দিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে অলসতা না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর নামাজ আদায় সম্পন্ন হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা: ১০)
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অলসতা দূর করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া :
ফজরের নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়া
মুমিনের দিন শুরু হয় ফজরের নামাজের মাধ্যমে। আর ফজরের নামাজ পড়তে না পারলে এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা ও অলসতার সূচনা। তাই অলসতা থেকে বাঁচতে দিন শুরু করুন ফজর নামাজের মাধ্যমে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন—
‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে- তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আরেকটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।’ (বুখারি: ১১৪২)
নেক আমলে মনোযোগ বৃদ্ধি
নেক আমলে মনোযোগ দেওয়ার সময় এখনই। আরও বয়স হলে আমল করব— এমন চিন্তা বাদ দিন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)
প্রিয়নবী সা. ইরশাদ করেছেন, সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? নাকি ওই ঐশ্বর্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের জন্য অপেক্ষা করছ, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? নাকি সেই বার্ধক্যের অপেক্ষায় আছ, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। নাকি কেয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কেয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও তিক্ত হবে? (তিরমিজি: ২৩০৬)
অলসতা দূর করতে দোয়া পড়ুন
বিভিন্ন হাদিসে অলসতা থেকে মুক্ত থাকার দোয়ার উল্লেখ রয়েছে। তাই হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোর ওপর আমল করুন। যেমন নিচের দোয়াটি পড়তে পারেন। দোয়াটি প্রিয়নবী সা. চিন্তা ও পেরেশানির সময় পড়তেন। দোয়াটি হলো—
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি: ২৮৯৩)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।