।।মুফতি মারগুব ইরফান।।
আজ থেকে প্রায় চৌদ্দ শত বছর পূর্বে মানুষের মধ্যে একটা কু-প্রথা ছিল। তা হলো মূর্তি, পাথর, গাছ, সূর্য ইত্যাদির পূজা করা। মানুষের মাঝে অবান্তর চিন্তাধারা ছিল তখন। একেক মূর্তির কাছে নিজেদের প্রয়োজন তলব করতো তারা। মূর্তির নামে মানত, জবাই ও কসম করতো। সন্তান চাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তারা চাইতো মূর্তির কাছে।
দিন দিন মানুষ নতুন করে পৃথিবীতে থাকতে শুরু করেছে। নতুন করে বুঝতে শুরু করেছে। মানুষের চিন্তা চেতনায় নানা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির এ যুগে মানুষ আর এখন আগের মতো গাছ, সূর্য, পাথর পূজা করে না। পূজা প্রথা বলতে গেলে অনেকটাই এখন বিলুপ্তির পথে।
সেই কট্টর পুজারীরা এখন আর নেই। তবে আধুনিক পূজা শুরু হয়েছে। চলছে সরগরম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পূজা। এ কেমন যেন তখনকার মূর্তি পূজার মতোই। বরং তার চেয়েও আরো ভয়ংকর। মানুষ এগুলোর মধ্যে ডুবে গিয়ে আপন রবকে ভুলতে বসেছে।
জীবনোপকরণকে নিজেদের সাফল্যের চাবিকাঠি বানিয়ে নিয়েছে। কুরআন-হাদিসের কথাকে তারা অগ্রাহ্য করছে। পিছনে ছুড়ে মারছে। সঠিক কথাগুলো জেনেও না জানার ভান করে চলছে। এটাকেই নিজেদের চালাকি ও কুশলতা ভাবছে।
মানুষের এহেন পরিবর্তনের জন্য আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর বুকে মহামানব পাঠিয়েছেন। মানুষের চিন্তা চেতনা পরিশুদ্ধ করার জন্য নবীদের পাঠিয়ে সংশোধন করেছেন।
তাঁরা শিরকের অন্ধকার থেকে তাওহীদের আলোর দিকে মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। তারা কুফরীর বিষদাত ভেঙে দিয়েছেন। হেদায়েতের মশাল হাতে মানুষকে জান্নাতে পথে এগিয়ে দিয়েছেন।
এখনো মানুষ একটু হলেও চেনে তার রবকে। নতুন নতুন গবেষণায় মানুষ আপন রবের সন্ধান পাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই অবস্থায় এসেও দু'এক জায়গায় দেখা যায় তথাকথিত সেই শিরকের অন্ধকার। শোনা যাচ্ছে, নাটোরের একটি এলাকায় নারীরা বট গাছের নিচে আঁচল বিছিয়ে থাকে। তাদের ধারণা যখন বট গাছ থেকে একটি পাতা পড়বে তখন তারা সন্তান লাভ হবে। আহা কী এক জাহেলী চিন্তা! এই অদ্ভুত চিন্তার মানুষ এখনো দুনিয়ায় বেঁচে আছে। এটা এক ধরনের রবের সাথে শিরক।
আরব মুশরিকরা মূর্তির কাছে সন্তান চাইতো। তারাও কেমন যেন বটগাছের কাছে সন্তান চাচ্ছে। আল্লাহর সাথে শিরক করছে তারা। অথচ কুরআন কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে চান কন্যা দেন এবং যাকে চান পুত্র দেন অথবা পুত্র ও কন্যা উভয় মিলিয়ে দেন। আবার যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা শুরা: ৪৯-৫০)।
সন্তান দেওয়া বা না দেওয়া সব কিছু আল্লাহর হাতে। এটাই একজন ঈমানদারের পরিপূর্ণ বিশ্বাস। সুতরাং এর ব্যতিক্রম বিশ্বাস রাখলে সে কোনভাবেই ঈমানদার থাকতে পারে না। আর আল্লাহর সাথে শিরক করা তো মারাত্মক গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা বান্দার যাবতীয় সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ এ বিষয়কে ক্ষমা করেন না যে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করা হবে। এর চেয়ে নিচের যে-কোন বিষয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (সূরা নিসা -৪৮)।
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, শিরক এটা আল্লাহর কাছে খুব অপছন্দনীয় একটি কাজ। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন- তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ না ফেতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর হয়ে যায়। (সূরা বাকারাহ: ১৯৩)।
এ আয়াতে সকল মুফাসসিরগণ "ফেতনা" এর ব্যাখ্যা করছেন শিরক দ্বারা। অর্থাৎ এ যমীনে যতোদিন শিরক বিদ্যমান থাকবে, ততদিন তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও এটাই আল্লাহ তায়ালার বিধান।
অতএব, বুঝা গেল যে, আল্লাহর যমীনে শিরকী কর্মকাণ্ড চলা এটাও আল্লাহ পছন্দ করেন না। বান্দা আল্লাহর কাছে চাবে-এটাই আল্লাহ পছন্দ করেন। আল্লাহ-ই সবকিছু করার সক্ষমতা রাখেন। তাঁর হাতেই সব ক্ষমতা। কাজেই আমাদের মুসলমানদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক হওয়া। আল্লাহর সাথে শিরক করা থেকে বেঁচে থাকা, যারা শিরকী কাজ করে তাদের ব্যাপারেও সোচ্চার হওয়া এবং নিজের সাধ্য মতো প্রতিহত করাও প্রত্যেকের দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক: মুহাদ্দিস, আলোচক, গবেষক, ও খতিব।
এনএ/