তানবিরুল হক আবিদ
বিড়াল একটি গৃহপালিত প্রাণী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরেও ছিল বিড়াল। সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আব্দুর রহমান ইবনে সখরের নাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা (বিড়ালের পিতা) রেখেছিলেন শুধুমাত্র বিড়াল প্রতিপালনের কারণেই।
সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে বিড়াল পোষার প্রবণতা। পশু প্রেমীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান কার্ল, আমেরিকান ববটেইল, যুক্তরাজ্যের বরমিল্লা, জাপানের জাপানিজ ববটেইল সহ নানা জাতের বেড়াল। বিড়ালপ্রেমীরা অনেক সময় পোষা বিড়ালের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করার প্রয়োজন অনুভব করেন। বিড়ালের আক্রমণাত্মক আচরণ কমিয়ে বিড়ালকে শান্ত করা, ঘরের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমানো, অন্যান্য বিড়ালের সাথে ঝগড়া, মারামারি থেকে রক্ষা করা এবং বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করা, দীর্ঘায়ু ও সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে সাধারণত পোষা বিড়ালের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করা হয়।
মুলত, স্পে ও নিউটার ছোট এক ধরনের অস্ত্রোপচার যার মাধ্যমে পশুচিকিৎসক বিড়ালের প্রজননতন্ত্র ফেলে দেন। ফলে তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। (মেয়ে বিড়ালের অস্ত্রোপচারকে বলে স্পে আর ছেলে বিড়ালের অস্ত্রোপচারকে বলে নিউটার)।
ইসলামে বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে বা কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে পোষা প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করা জায়েজ। তবে বিনা প্রয়োজনে আল্লাহর কোনো সৃষ্টিজীবের জন্ম বিস্তার রোধ করা এবং তাকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়।
হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানিরর ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের (যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের) পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনান ইবনে মাজাহ ৩১২২.আহমাদ ২৫৩১৫, ২৫৩৫৮, ইরওয়া ১১৩৮)।
কাজেই প্রয়োজনের স্বার্থে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা ইত্যাদি নর-প্রাণী নিউটার করায় কোন দোষ নেই। কেননা, এতে প্রাণী মোটাতাজা করা সহজ হয় এবং সেগুলোর মাংস সুস্বাদু হয়।
কিন্তু বিড়ালের মধ্যে যেহেতু এগুলো পাওয়া যায় না।তাই বিড়াল নিউটার বা স্পে করা বাহ্যিক দৃষ্টিতে জায়েজ হবে না।
মুসনাদে আহমদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করার নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে-
রাসূলুল্লাহ সা. ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে ছিন্নমষ্ক করতে নিষেধ করেছেন।
ফতওয়ায়ে হিন্দিয়ায় এসেছে, মানুষ ও ঘোড়া ছাড়া অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে বন্ধ্যাকরণে যদি উপকার হয় তাতে দোষের কিছু নেই। যদি তাতে কোনো উপকার না হয় বা ক্ষতি প্রতিহত না করা হয় তাহলে তা হারাম। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৭)
পোষা বিড়ালকেও যদি বিশেষ প্রয়োজনে বা ক্ষতি রক্ষার উদ্দেশ্যে স্পে বা নিউটার করা হয়, তাহলে এটা জায়েজ।
শুধু সখের বশবর্তী হয়ে বিড়াল পালন করে সেগুলোকে স্পে বা নিউটার করা বৈধ হবে না।
এনএ/