পৃথিবীতে বাবা-মা’র চেয়ে আপন কেউ নেই। নিজে ভালোমতো না খেয়ে, ভালো পোশাক পরিধান না করে সন্তানের কল্যাণে ছায়ার মতো লেগে থাকেন মা-বাবা। এমন দরদিরা যখন চিরদিনের জন্য বিদায় নেন, তাদের জন্য অনেক কিছুই করার থাকে সন্তানের। বিশেষ করে তাদের জন্য দোয়া করা সন্তানের কর্তব্য। কেননা সন্তানের দোয়ার কারণে মা-বাবার অনেক উপকার হয়।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যু বরণ করলে— তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। ১. সাদকায়ে জারিয়া (এমন দান-অনুদান; যার সওয়াব চলমান থাকে) ২. এমন জ্ঞান— যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ৩. নেক সন্তান— যে তার মৃত বাবা মায়ের জন্য সবসময় দোয়া এবং আমল করে।’ (মুসলিম: ৪৩১০)
হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, কোনো সন্তান মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তাদের নেয়ামত ও সুখ-শান্তি আরও বাড়িয়ে দেন। আরেক হাদিসে এসেছে, সন্তানের দোয়ার কারণে মৃত মা-বাবার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্রভু! এটা কী জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৩৬)
কবরে মা-বাবার প্রশান্তির জন্য, মাগফেরাতের জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। এখানে মৃত মা-বাবার জন্য কোরআনে বর্ণিত তিনটি দোয়া তুলে ধরা হলো।
এক. প্রশান্তির দোয়া
رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا
উচ্চারণ: ‘রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)
দুই. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া
رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)
তিন. মা-বাবাসহ সব মুমিনের জন্য দোয়া
رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا
উচ্চারণ: ‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনাও ওয়ালিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত। ওয়ালা তাজিদিজ জা-লিমিনা ইল্লা তাবারা।’
অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ক্ষমা করুন এবং আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ: ২৮)
যাদের মা-বাবা অনন্ত জীবনে পাড়ি দিয়েছেন, সুসন্তান হিসেবে তাদের উচিত মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে মা-বাবার জন্য কোরআনে বর্ণিত দোয়াগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এনএ/