তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে সে একদিকে যেমন গুনাহগার হবে অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হল, তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা। দুষ্টমি করে ও খেলাচ্ছলেও তালাক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমানে অনেকে খেলাচ্ছলে স্ত্রীকে তালাক বলে বসে। এসম্পর্কে একটি মাসআলা প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন : আমি আমার স্ত্রীকে দুষ্টমি করে বললাম আমি আগামী ২-৩ বছর পর আবার বিয়ে করব তখন সে বলে ঠিক আছে এখনই কর আমাকে ও ভাল ছেলে বিয়ে করবে তখন আমি বললাম তাহলে তুমি কি চলে যাবে? আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে যাও, তুমি তালাক। এখন আমার কী করনীয় এবং কয় তালাক পতিত হয়েছে অনুগ্রহ করে জানাবেন।
উত্তর : কারো গলায় ছুড়ি চালিয়ে দেয়া কোন দুষ্টমি করার বস্তু নয়। তেমনি তালাকও দুষ্টমি করার বস্তু নয়। দুষ্টমি করার আরো অনেক কিছু আছে। এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে দুষ্টমি করা বোকামী আর আহমকী ছাড়া কিছু নয়। তালাক এমন বিষয় যা ইচ্ছেকৃত দিলেও হয়, অনিচ্ছায় দিলেও হয়। দুষ্টমি করে দিলেও হয় রেগে দিলেও হয়। যেমন কাউকে ইচ্ছেকৃত খুন করলেও খুন হয়, অনিচ্ছায় খুন করলেও খুন হয়। দুষ্টমি করে খুন করলেও খুন হয় আবার রেগে খুন করলেও খুন হয়। তালাক এমনি ভয়াভহ শব্দ।
হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিয়ে এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪
যদি কথা তাই হয়, যা প্রশ্নে বর্ণিত। তাহলে উক্ত স্ত্রীর উপর এক তালাকে রেজয়ী পতিত হয়েছে। তালাক বলার পর থেকে নিয়ে তিন হায়েজ শেষ হবার আগেই যদি স্বামী-স্ত্রীর সাথে স্বামী স্ত্রীসূলভ আচরণ করে থাকে, বা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে মর্মে মুখে বলে তাহলেবিয়ে শুদ্ধ রয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তবে স্বামী পরবর্তীতে শুধু দুই তালাকের মালিক থাকবে। আর যদি তিন হায়েজ শেষ হবার আগ পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর সাথে স্বামী স্ত্রীসূলভ আচরণ না করে থাকে, বা মুখে ফিরিয়ে আসার কথা না জানায়, তাহলে তিন হায়েজ শেষ হবার পর তালাকটি বাইন তালাক পরিগণিত হয়ে যায়। এবার উক্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে হলে নতুন করে মোহর ধার্য করে পুনরায় দুইজন সাক্ষির উপস্থিতিতে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। এক্ষেত্রেও স্বামী দুই তালাকের মালিক থাকবে। তিন তালাকের নয়। সূত্র : আহলে হক মিডিয়া।