উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টনে সবচে অবহেলা করা হয় সমাজে। বিশেষকরে পিতার মৃত্যুর পর বোনদের কোনো অংশ না দেওয়া। সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিজেরা ভোগ করা। বোনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলে বরং তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া বা তাদের এমন কথা শুনিয়ে দেওয়া যে, পিতার অংশ নিয়ে কি চিরতরে সম্পর্ক শেষ করে দিতে চাচ্ছ? আর কি কখনো বেড়াতে আসবে না? অর্থাৎপিতার অনুপস্থিতিতে ভাইদের বাড়িতে বেড়ানোর অযুহাত দিয়ে তাদের পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা।
অথচ এ বিষয়ে কুরআন সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, ‘মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং মাতা-পিতা ও নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, কম হোক বা বেশি হোক। এ অংশ সুনির্ধারিত।সুরা নিসা, আয়াত -৭।
মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের সঙ্গে চারটি হক জড়িত- ১. তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। ২. তার ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা। ৩. অসিয়ত থাকলে তা পূরণ করা। ৪.উত্তরাধিকারদের মধ্যে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় অবশিষ্ট সম্পদ বণ্টন করে দেওয়া।
এগুলো লঙ্ঘন করা কোরআনি বিধান লঙ্ঘন করার শামিল। যার পরিণতি অত্যন্ত ভায়াবহ। আল্লাহ বলেন, ‘এগুলো হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
আল্লাহ রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক বাণী শুনিয়েছেন- হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশীদার হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন। -ইবনে মাজাহ -২৭০৩
তাছাড়া উত্তরাধিকার সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন না করে আত্মসাৎকরা হলে এতে ‘হাক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার হক নষ্ট করা হয়। যা কখনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। দুনিয়াতে এর কোনো বিহিত না করলে আখিরাতে নেকি দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ কোরো না এবং অন্যের সম্পদ গর্হিত পন্থায় গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তোমরা জেনেশুনে তা বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না।-সুরা বাকারা, আয়াত -১৮৮।
আবু হুরায়রা রা.বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব কে? সবাই বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি যার কোনো টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে সালাত-সিয়াম-জাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সঙ্গে ওই সব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারো ওপর অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ওই সব পাওনাদারকে ওই ব্যক্তির নেকি থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তখন ওই সব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির ওপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ মুসলিম, হাদিস : ৫৮১
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরাধিকার সম্পদের নীতিমালা শিখতে আবশ্যক বলেছেন-
হযরত ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা উত্তরাধিকার আইন শিক্ষা করো এবং মানুষদেরকে তা শিক্ষা দাও; কারণ আমি একজন মরণশীল মানুষ। ফিকহুস সুনান -২৫২৭
হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা উত্তরাধিকার আইন শিক্ষা করো এবং তা শিক্ষা দাও; কারণ তা হল ইলমের অর্ধেক। ফিকহুস সুনান – ২৫২৮
বিচারের কাঠগড়ায় ন্যায়বান ব্যক্তি হয়ে দাড়াতে মুসলিম ফারায়েজ শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।