জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন। জুমার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এদিনের নামে কুরআনে সূরা জুমা একটি সূরা নাজিল করা হয়েছে। এ দিনের অনেক ফজীলত বর্ণীত হয়েছে হাদীসে।
জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য
হযরত আওস ইবনে আওস রা.থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন- দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোৎকৃষ্ট। এই দিনই আদম (আলাইহিস সালাম)–কে সৃষ্টি করা হয় এবং এই দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। ঐ দিনে শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। ঐ দিন সমস্ত সৃষ্টিকুল বেহুশ হবে। অতএব তোমরা ঐ দিন আমার উপর অধিক দরূদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দরূদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দেহ তো গলে যাবে। এমতাবস্থায় আমাদের দুরূদ কিরূপে আপনার সম্মুখে পেশ করা হবে? তিনি বলেন- আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আম্বিয়ায় কিরামের দেহসমূহ মাটির জন্য (বিনষ্ট করা হতে) হারাম করে দিয়েছেন।
উত্তমরূপে গোসল করা
১. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। জুমার দিন উমর ইবনে খাত্তাব রা. খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। উমর রা. তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, নামাযে সময়মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্থ হও? তিনি বললেন, আযান শোনার সাথে সাথেই তো আমি উযু করেছি। তখন উমর রা. বললেন, তোমরা কি নবী সা.- কে একথা বলতে শোননি যে, 'যখন তোমাদের কেউ জুমার নামাযে রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়' ? বুখারী শরীফ-৮৩৮
২.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- তোমাদের মধ্যে কেউ জুমার নামাযে আসলে (তার আগে) সে যেন গোসল করে। বুখারী শরীফ ৮৩৩
মসজিদে প্রথমে প্রবেশের সওয়াব
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত–এর গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং নামাযের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন তখন ফিরিশতাগণ যিক্র (খুতবা) শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। বুখারী শরীফ-৮৩৭
গোনাহ মাফ হয়
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মসজিদে) যায়, আর দুজনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামায আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমাএবং পরবর্তী জুমামধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। বুখারী শরীফ-৮৬৪
দোয়া কবুল হয়
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- জুমুআর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোন মুসলিম আল্লাহর নিকট যে দোয়া করে আল্লাহ তাই কবুল করেন নেন। তোমরা এই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর। আবূ দাঊদ - ১০৪৮
রাসূলের শানে দরূদ পড়া
জুমার দিন নবীজি সা. -এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। হযরত আউস বিন আবি আউস রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেছেন-তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন। আবু দাউদ- ১০৪৭
প্রতি কদমে এক বছরের নেকি লাভ
নবীজী সা: ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে উত্তমরূপে গোসল করে আগে আগে মসজিদে যায় এবং বাহনে না চড়ে হেঁটে যায়। ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ দিয়ে ইমামের আলোচনা শোনে, অনর্থক কাজ না করে, তবে তার প্রতি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা এক বছর সিয়াম ও কিয়ামের সাওয়াব দান করেন। তিরমিজি- ৪৫৬
শুক্রবার মুসলমানদের ঈদের দিন
রাসূলুল্লাহ সা.ইরশাদ করেন, এই দিন অর্থাৎ জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন বানিয়েছেন । ইবনে মাজাহ-৯০৮
সুরা কাহাফ পাঠ
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)