পৃথিবীর বুকে একমাত্র চক্রান্তকারী জাতী হল ইয়াহুদী জাতি। তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত সবারই জানা।আল কুরআনুর কারীমে তাদের অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুদখোর ও ধনলিপ্সু জাতী হিসাবে তাদের একটি পরিচয় আছে। যুগ যুগ ধরে এ জাতি খোদাদ্রোহিতা ও কুফরি কর্মকাণ্ডের জন্য আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আসছে।
ইয়াহুদী জাতির পরিচয়
হজরত ইসহাক আ.-এর পুত্র হজরত ইয়াকুব আ.-এর বংশধররা বনি ইসরাইল নামে পরিচিত। বনি ইসরাইল হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ইব্রাহিম আ.-এর বংশধরদের একটি শাখা। এ শাখারই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। হজরত ইয়াকুব আ.-এর এক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামের অংশবিশেষ থেকে ইহুদি নামকরণ করা হয়েছে।
ইহুদিদের অপকর্ম ও আল্লাহর শাস্তি
তাদের নবী হযরত মূসা আ.-কে তারা সবচে বেশী কষ্ট দিয়েছে। হযরত মূসা আ.-কে যেসব কষ্ট দিয়েছে-
১. আল্লাহ তাদের মিসরের ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করার পর মুসা আ. তুর পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত আনার জন্য গেলে তারা গরুর বাছুরের পূজা আরম্ভ করে মূসা আ.-কে কষ্ট দেয়।
২. এর শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করার পর আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখার বায়না করে বসে। এ জন্য তাদের ওপর ফেরেশতার মাধ্যমে তুর পাহাড় উঠিয়ে শাস্তির ভয় দেখানো হয়।
৩. মুসা আ.-এর দোয়ায় তাদের জন্য কুদরতি খাবারের ব্যবস্থা করা হলে তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে তা খেতে অস্বীকার করে।
৪. কখনো তারা মুসা আ.-এর ওপর খারাপ অসুস্থতা ও ব্যভিচারের অপবাদ দেয়। এভাবে হজরত মুসা আ. আজীবন তাদের দ্বারা কষ্ট পেয়েছেন।
হজরত সুলাইমান আ.-এর ওফাতের পর তাদের কুকর্ম
হজরত সুলাইমান আ.-এর ওফাতের পর পারস্পরিক বিভক্তি এবং ধর্মদ্রোহিতা ও কুকর্মের পথ অবলম্বন করে। কোনো কোনো নবী এসে আল্লাহর নির্দেশে ইহুদিদের এ ধরনের কার্যকলাপের শোচনীয় পরিণাম সম্পর্কে সতর্কবাণী শোনালেও তারা তাঁর কথা না মেনে উল্টো নবীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে। তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়।
হজরত ইলিয়াস আ.-কে প্রতি ঔদ্যত্ব
এরপর কিছুদিন তারা মোটামুটি ভালোভাবে চলে, কিন্তু তাদের উপাদানগত কুপ্রবৃত্তি তাদের ভালো থাকতে দেয়নি। তারা খোদাদ্রোহিতার বশবর্তী হয়ে মূর্তিপূজা আরম্ভ করে। হজরত ইলিয়াস (আ.) ইহুদিদের পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ইহুদিদের বিরাগভাজন হয়ে নির্যাতনের শিকারই শুধু হননি, তারা তাঁকে হত্যার জন্যও উদ্ধত হয়। পরিণামে আবার তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়। তারপর অবস্থার যিকঞ্চিৎ উন্নতি হয়।
অতঃপর আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে তাদের ওপর বাবেল সম্রাট বুখতে নসর চড়াও হয়। সম্রাট বায়তুল মাকদিসে আক্রমণ চালিয়ে মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দেয়। হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে শহরটি উজাড় করে দেয়। এরপর ইহুদিরা বায়তুল মাকদিস থেকে নির্বাসিত হয়ে বাবেলে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে চরম লাঞ্ছনা ও দুর্গতির মধ্যে ৭০ বছর পার করে। অতঃপর জনৈক ইরান সম্রাট বাবেল দখল করে ইহুদিদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদের আবার সিরিয়ায় পৌঁছে দেয়। এ সময় তারা আবার মসজিদে আকসা নির্মাণ করে।
এভাবে বারবার ইহুদি রাজ্যের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছলেও এরা আল্লাহর নাফরমানি করতে থাকে। নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে।
হজরত ইয়াহইয়া আ. ইহুদিদের অশ্লীল কার্যকলাপের বিরোধিতা করলে তারা তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে কতল করে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে।
খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র
হজরত ঈসা আ. তাদের বিরাগভাজন হন, তাদের ক্রোধের আগুনে পড়ে মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু আল্লাহ নিজ মহিমায় হজরত ঈসা আ.-কে তাদের হাত থেকে রক্ষা করে আসমানে উঠিয়ে নেন।
হজরত ঈসা আ.-কে আসমানে ওঠানোর পর ঈসা আ.-এর ধর্মের পতন হয়। এরপর ঈসা আ.-এর সঙ্গীদের ফাঁদে ফেলে খ্রিস্টধর্মের নামে নতুন ধর্ম প্রণয়ন করে এক কট্টরপন্থী ইহুদি। তার নাম ছিল ‘শাওল। পরে সে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘পৌল। ‘পৌল নামের এই ইহুদি ঈসা আ.- এর চরম দুশমন ছিল। এর জের ধরেই সে ছদ্মবেশে খ্রিস্টানদের ভেতর ঢুকে খ্রিস্টধর্মকে বিকৃত করে ফেলে। খ্রিস্টানরা তার ফাঁদে পা দেয় এবং সে এ কাজে শতভাগ সফল হয়। বলা যায়, বর্তমান খ্রিস্টধর্ম ঈসা (আ.)-এর রেখে যাওয়া খ্রিস্ট ধর্ম নয়, বরং এটা হলো পৌল ধর্ম। (সূত্র : ঈসাইয়্যাত)