সড়ক-মহাসড়কসহ সফরে যানবাহনে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অনেক মানুষ। সফরের সময়ে হাদিসের এমন কিছু আমল রয়েছে যেগুলো পালনে চলাচলের সময় যানবাহনের দুর্ঘটনা থেকে হেফাজত থাকতে পারে মানুষ।
বর্তমান সময়ে চলাচলের ক্ষেত্রে অবস্থা এমন যে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর সুস্থভাবে বাড়িতে ফিরে আসাই এখন যেন অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সফরের সময়ের করণীয় সম্পর্কে একাধিক হাদিস রয়েছে। যেসব করণীয়গুলো মেনে চলাফেরা করলে দুর্ঘটনা থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা যাবে। হাদিসে এসেছে-
>> ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হবে। এ নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করবে।’
>> বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এ দোয়া পড়া
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهْ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’ পড়া। (আবু দাউদ)
>> যানবাহনে ওঠার সময় بِسْمِ الله (বিসমিল্লাহ) বলে পা রাখা।’ (আবু দাউদ)
>> যানবাহনে উঠে বসার পর ৩ বার (আল্লাহু আকবার) বলে এ দোয়া পড়তে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে-
اَلْحَمْدُ لِلّهِ سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
উচ্চারণ : ‘আলহামদুল্লিাহি সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিনা ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবুন।’
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنْ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ
‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফারিনা হাজালবির্রা ওয়াত তাক্বওয়া ওয়া মিনাল আমালি মা তারদা আল্লাহুম্মা হাওয়্যেন আলাইনা সাফারিনা হাজা ওয়াত্বয়ি আন্না বুদাহু।’
– اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمُنْقَلَبِ وَسُوْءِ الْمَنْظَرِ فِيْ وَ الْمَالِ الْأَهْلِ.
‘আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়াছায়িস সাফারি ওয়া কাআবাতিল মুনক্বালাবি ওয়া সুয়িল মানজারি ফি ওয়াল মালিল আহলি।’
>> সফরের কোথাও অবস্থান বা বিশ্রামের প্রয়োজন হলে এমনভাবে অবস্থান করা, যাতে পথচারী বা স্থানীয়দের চলাফেরায় ব্যাঘাত না ঘটে।’ (বুখারি)
>> দূর থেকে গন্তব্যস্থান দেখতে পেলে ৩ বার এ দোয়া পড়া-
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهَا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফিহা।’ (তাবারানি)
>> সফর শেষে গন্তব্যস্থানে প্রবেশের সময় এ দোয়া পড়া-
اَللّهُمَّ ارْزُقْنَا جَنَاهَا وَحَبِّبْنَا إلَى اَهْلِهَا وَحَبِّبْ صَالِحِىْ اَهْلِهَا إلَيْنَا.
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মারযুক্বনা ঝানাহা ওয়া হাব্বিবনা ইলা আহলিহা ওয়া হাব্বিব সালিহি আহলিহা ইলাইনা।’ (তাবরানি)
>> সফরের কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসা। অযথা সফরকে দীর্ঘ করা ভাল নয়।’ (বুখারি)
>> দীর্ঘ দিনের সফর শেষে বাড়ি ফিরে এসেই সরাসরি ঘরে না যাওয়া। বরং প্রথমে নিজ গ্রাম বা মহল্লার মসজিদে এসে দুই রাকাআত নামাজ পড়া। তারপর বাড়িতে আসার সংবাদ দিয়ে কিছুক্ষণ পর লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করা। আবার দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে গভীর রাতে বাড়িতে প্রবেশ না করা।’ (মুসলিম, বুখারি)
উল্লেখ্য যে, সফর থেকে বাড়ি আসার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে সাজানো উচিত। তবে বাড়ির লোক যদি সফর থেকে ফিরে আসার সংবাদ জানা থাকে বা বাড়ির লোক অপেক্ষায় থাকে তবে রাতে বাড়ি ফিরতে অসুবিধা নেই বলেও বুখারির এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে।
>> সফর থেকে ফিরে এসে এ দোয়া পড়া-
آيِبُوْنَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
উচ্চারণ : ‘আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা লিরাব্বিনা হামিদুনা।’ (তিরমিজি)
সফরে যানবাহনে চলাচলে যাবতীয় দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত থাকতে যেমন সফরকারীকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা উচিত, আবার হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সফরের সুন্নাত ও হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করাও জরুরি।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষের সফরকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করুন। আমিন।
কেএল/