মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ ।। ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১৫ জিলকদ ১৪৪৬


লিবিয়ায় মিলিশিয়া প্রধান হত্যার পর ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে এক প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতার হত্যাকাণ্ডের পর শহরের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা জারি করেছে এবং জাতিসংঘ দ্রুত উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।

সোমবার (১৩ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

সোমবার রাত প্রায় নয়টার পর থেকে ত্রিপলির একাধিক এলাকায় ভারী গোলাগুলির শব্দ ও বিস্ফোরণ শোনা গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

আল জাজিরার মিসরাতা প্রতিনিধি মালিক ত্রাইনা জানান, নিরাপত্তা সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ‘ঘেনিওয়া’ নামে পরিচিত শক্তিশালী ‘স্ট্যাবিলিটি সাপোর্ট অথরিটি’ (এসএসএ) মিলিশিয়ার প্রধান আবদেল ঘানি আল-কিকলি নিহত হয়েছেন।  


তিনি ত্রিপলির অন্যতম প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতা ছিলেন এবং সম্প্রতি মিসরাতা-ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সংগঠন এসএসএ ২০২১ সালে গঠিত ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি’ (জিএনইউ)-র অধীন প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের আওতাভুক্ত।

আল-কিকলির মৃত্যুর পর ত্রিপলির বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কমপক্ষে ছয়জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও তারা সাধারণ মানুষ না নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সংঘর্ষ শুরুর পরপরই জাতিসংঘের লিবিয়া মিশন (ইউএনএসএমআইএল) জানায়, ত্রিপলিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভারী অস্ত্রসহ তীব্র লড়াইয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। 

বিবৃতিতে বলা হয়, সমস্ত পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি, বেসামরিক মানুষের সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সংস্থাটি স্থানীয় প্রবীণ ও সম্প্রদায় নেতাদের নেতৃত্বে চলমান মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, নাগরিকদের সুরক্ষায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সরকারি ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি’-র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং চলাফেরায় সতর্কতা জারি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিরাপত্তাজনিত কারণে মঙ্গলবার ত্রিপলির সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে।

সরকারের গণমাধ্যম বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ত্রিপলির আবু সালিম এলাকা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমি ভারী গুলির শব্দ শুনেছি, আর আকাশে লাল আলো দেখতে পেয়েছি।

আরও দুইজন বাসিন্দা জানান, তাদের আবু সালিম ও সালাহউদ্দিন এলাকাজুড়ে গুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি থেকে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন অংশে কালো ধোঁয়া, সশস্ত্র লোকজন ও বহর প্রবেশ করছে।

আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ নিশ্চিত করেছে, এসএসএ নিয়ন্ত্রিত এলাকাসহ একাধিক অঞ্চলে মাঝারি ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির শব্দ রেকর্ড হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আজ-জাওয়িয়া, জিনতান ও মিসরাতা থেকে সামরিক বহর ত্রিপলিতে প্রবেশ করছে—যা অনেকের কাছে সম্ভাব্য মুখোমুখি সংঘর্ষের ইঙ্গিত।

ত্রাইনা বলেন, মানুষ ক্ষুব্ধ যে প্রতিবার এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে সাধারণ নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হন। কেউ দায়িত্ব নেয় না। স্থানীয়রা বিচার চায় এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে চায়।

২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত অভ্যুত্থানে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উৎখাত ও হত্যা করার পর থেকে দেশটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। এরপর থেকে তেলসমৃদ্ধ এই দেশটি পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে, যাদের প্রত্যেকের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠী ও বৈদেশিক মদদ।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ